ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তৎপর নব্য জেএমবি

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ২২ আগস্ট ২০১৭

তৎপর নব্য জেএমবি

পুলিশ র‌্যাব কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সোয়াটসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিয়মিত নজরদারির পরও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে, জঙ্গী তৎপরতা কমছে না দেশে। বরং জঙ্গীরা গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে রাজধানীসহ সারাদেশে তাদের সন্ত্রাসী তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। এতে সর্বশেষ সংযোজন জাতীয় শোক দিবসকে সামনে রেখে পান্থপথের একটি আবাসিক হোটেলে আত্মঘাতী জঙ্গীর বোমা বিস্ফোরণ এবং নোয়াখালীতে ছোট একটি মাজারের খাদেমকে জবাই করে হত্যা। পুলিশী ভাষ্যমতে, জঙ্গীরা অসংগঠিত ও দুর্বল হয়ে এলেও নব্য জেএমবি নামে ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে হামলা ও নাশকতার পাঁয়তারা করছে। উল্লেখ্য, নব্য জেএমবি নামকরণ হয়েছে পুলিশ কর্তৃক। এখন তারা আত্মঘাতী তথা ফিদায়ী স্কোয়াডের সদস্যভুক্ত হয়ে অপেক্ষাকৃত জনবহুল স্থানে স্থানীয়ভাবে ধ্বংসাত্মক তৎপরতা চালানোর অপপ্রয়াস পাচ্ছে। পান্থপথের ঘটনাটি এরই একটি সুস্পষ্ট উদাহরণ। দেশে জঙ্গী সন্ত্রাসী কার্যক্রমের দুর্ধর্ষ নেতা জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা মুফতি হান্নানের ফাঁসির পর সঙ্গত কারণেই আশা করা গিয়েছিল যে, জঙ্গী হামলা ও সন্ত্রাসী তৎপরতা একেবারে নির্মূল না হোক, অন্তত কমে আসবে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলা, সিলেটে আতিয়া মহল, হবিগঞ্জ ও কুমিল্লায় পুলিশী তৎপরতায় আত্মঘাতী জঙ্গীসহ সর্বশেষ ঘটনায় সেই আশঙ্কা আবারও ঘনীভূত হচ্ছে বলেই প্রতীয়মান হয়। র‌্যাব-পুলিশ-গোয়েন্দাবাহিনীসহ কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের নিয়মিত নজরদারির পরও দেখা যাচ্ছে যে, দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গীরা আবারও তৎপর হয়ে উঠেছে। তার মানে দেশ থেকে জঙ্গীবাদ ও তৎপরতা একেবারে নির্মূল হয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেও তা স্বীকার করেছেন। সরকার ইতোমধ্যে আনসার আল ইসলামসহ কয়েকটি জঙ্গী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জঙ্গীদের হাতবোমা, অস্ত্রশস্ত্র, জিহাদী বইসহ ধরাও হচ্ছে। গোলাগুলিতে নিহত ও আহত হওয়ার খবরও আছে। এত কিছুর পরও তাদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে, যা রীতিমতো উদ্বেগজনক। বর্তমান সরকার ধর্মীয় উগ্রপন্থাসহ সব রকম জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্র মতবাদের কোন স্থান নেই। প্রকৃতপক্ষে জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের হাত ধরে দেশে ধর্মীয় রাজনীতি ও জঙ্গীবাদের উদ্ভব ঘটে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে কুখ্যাত জামায়াত-শিবির হানাদার পাকিস্তান সেনাবহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মাধ্যমে প্রসার ঘটায় সন্ত্রাসী কার্যক্রমের। একাত্তরে পরাজিত হলেও পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক শাসনপুষ্ট সরকারগুলোর সহায়তায় দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী কার্যক্রমের বিকাশ ঘটতে থাকে। তবে আশার কথা এই যে, এ দেশের মাটিতে তা কখনই শিকড় গেঁড়ে বসতে পারেনি এবং জনসমর্থন পায়নি। ফলে দেশী-বিদেশী গডফাদারসহ আন্তর্জাতিক সহায়তায় সময়ে সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালিত হলেও ব্যর্থ হয়েছে চূড়ান্তভাবে। গুলশান, শোলাকিয়া ও অন্যান্য স্থানে ছোট-বড় কয়েকটি হামলার পর এদেশীয় জঙ্গীদের সঙ্গে কুখ্যাত আইএস, আল কায়েদা, আল শামস, জইশ-ই-মোহাম্মদ, তালেবান ইত্যাদির সঙ্গে যোগাযোগ ও মদদের কথা দেশে-বিদেশে উচ্চারিত হলেও সেসব কখনই প্রমাণিত হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে। তবু এতে আত্মপ্রসাদের কিছু নেই। দেশীয় জঙ্গীদের অস্ত্র ও অর্থের উৎসসহ উৎসাহদাতা, মদদদাতাসহ আন্তর্জাতিক যোগাযোগের বিষয়টি সর্বদাই নজরদারির দাবি রাখে। অর্থাৎ এটি একটি নিরন্তর ও অব্যাহত প্রক্রিয়া। জঙ্গী সন্ত্রাসীরা শুধু অস্ত্র ও বোমাই নয়, বরং প্রযুক্তি ব্যবহারেও অত্যন্ত দক্ষ। সে ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে টেক্কা দিতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও সর্বদাই সতর্ক ও তৎপর হতে হবে। সর্বোপরি সর্বস্তরে সর্বপর্যায়ে তৈরি করতে হবে জনসচেতনতা। টঙ্গী ও কুমিল্লায় জনপ্রতিরোধের বিষয়টি লক্ষণীয়। দেশ যদি আধুনিক শিক্ষা-সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনের পথে অগ্রসর হতে পারে, তাহলে এমনিতেই জঙ্গীবাদ নির্মূল হতে বাধ্য। সর্বোপরি নব্য জেএমবিসহ নামে-বেনামে সংগঠিত যে কোন জঙ্গী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে হবে অবিলম্বে।
×