ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ত্রাণ ও পুনর্বাসন

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ২২ আগস্ট ২০১৭

ত্রাণ ও পুনর্বাসন

স্বস্তির কথা এই যে, সারাদেশে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ী ঢলের সম্ভাবনা বন্ধ থাকলে এখন থেকে সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হবে দিন দিন। তবে বন্যার চেয়েও বেশি ধকল যায় বন্যাপরবর্তী দুর্যোগ সামলাতে, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে। বন্যায় এ পর্যন্ত যে বিপুলসংখ্যক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের অনেকেরই ঘরবাড়ি, সহায়-সম্বল বলতে কিছু নেই। আবার সর্বত্র যে সরকারী-বেসরকারী ত্রাণসামগ্রী পৌঁছেছে, এমন বলা যাবে না। বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব প্রকট। রান্নার কোন ব্যবস্থা নেই। শুকনো খাবারই একমাত্র সম্বল। তদুপরি পেটের পীড়া, কলেরা, টাইফয়েড, নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি-জ্বর ইত্যাদি পানিবাহিত রোগব্যাধির উৎপাত। ব্যাপক ফসলহানির খবরও আছে। এসবের মোকাবেলায় চাই পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী ও ওষুধপত্র। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পানি হ্রাস পাবে। অন্যদিকে নেমে যাচ্ছে পদ্মার পানি। পাহাড়ী ঢলের গর্জনও কমে আসছে। তবে কয়েকটি নদ-নদীর পানি এখনও বিপদসীমার ওপরে প্রবহমান। এটুকুু স্বস্তির খবর হলেও পানিবন্দী মানুষ আছেন চরম বিপাকে। বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সঙ্কটে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছেন তারা। প্রশাসনের আন্তরিকতা সত্ত্বেও সর্বত্র ত্রাণসামগ্রী পৌঁছেনি। চাহিদা মোতাবেক ত্রাণও পর্যাপ্ত নয়। ফলে বানভাসি মানুষ সাহায্যের আশায় ছুটতে বাধ্য হচ্ছেন বিভিন্ন স্থানে। পেটের পীড়া, সর্দি-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার খবরও আছে। বিভিন্ন স্থানে সাপের উপদ্রব বেড়েছে। আছে শতাধিক মৃত্যুর খবরও। সরকারী হিসেবে বন্যাকবলিত ৩০ জেলার প্রায় এক কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেসরকারী হিসেবে আরও বেশি, আগামীতে যা আরও বাড়তে পারে। দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ আছে বলে জানানো হয়েছে। আমদানি বেড়ে যাওয়ায় চালের দামও কমতির দিকে। অনেক জায়গায় কিছু মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে খোলা আকাশের নিচে দিনাতিপাত করতে বাধ্য হচ্ছেন। বীজতলাসহ ফসলহানির খবরও আছে। সঙ্কট রয়েছে আমন বীজের। অতঃপর প্রশাসনের জরুরী কর্তব্য হবে সব রকম সাহায্য-সহায়তা নিয়ে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানো। এনজিওগুলোও এক্ষেত্রে জরুরী ত্রাণ ও চিকিৎসা সেবার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নতুন ফসল না ওঠা পর্যন্ত আশ্রয়ের ব্যবস্থাসহ ত্রাণ দেয়া হবে ক্ষতিগ্রস্তদের। বাংলাদেশের যেসব অংশে বর্তমানে বন্যা দেখা দিয়েছে, সে সবই মূলত সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পানির ঢল ও অতিবৃষ্টি, যা অনেক সময় বাঁধ উপচে পড়ার কারণে ছেড়ে দেয়া হয়। একদিকে তিস্তা-ধরলা-তোরসা, অন্যদিকে অসমের ব্রহ্মপুত্রের বন্যার অনিবার্য প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে। প্রতিবেশী দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত অভিন্ন নদ-নদীগুলোর বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিত বাঁধ ও ব্যারাজ নির্মাণের কারণেই প্রতিবছর এমন ঘটনা ঘটে থাকে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। আর এর অনিবার্য অসহায় শিকার হচ্ছে দু’দেশের সীমান্তবর্তী লাখ লাখ গরিব মানুষ। প্রধানত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আপত্তির কারণে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘদিন থেকে বিরাজমান অভিন্ন নদ-নদীর পানি সমস্যার নিরসনসহ তিস্তা-ফেনীর পানি সমস্যাটিও ঝুলে আছে। অথচ বন্যাদুর্গত ও নদীভাঙন কবলিত অসহায় মানুষের সাংবাৎসরিক দুর্দশা লাঘবে দু’দেশের মধ্যে পানি সমস্যার মীমাংসা ছাড়া গত্যন্তর নেই। আমরা যথাসম্ভব দ্রুত এ বিষয়ে ভারত সরকারের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করি। পাশাপাশি নেপাল, সিকিম, ভুটান ও চীনকেও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। বন্যা-ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ প্রশাসনের ব্যবস্থাপনা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের খরা মৌসুমে মঙ্গাপরিস্থিতি অনেকটাই সামাল দেয়া হয়েছে দরিদ্র ও বিধবা ভাতা, কাবিখা-টাবিখা ইত্যাদি প্রকল্পের মাধ্যমে। এবার হঠাৎ করে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় হয়ত প্রশাসনের প্রস্তুতি ছিল না তেমন। যা হোক, এখন ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের উচিত সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া।
×