ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভুটানে রফতানির উদ্যোগ চূড়ান্ত পর্যায়ে

মিয়ানমার ভিয়েতনাম কম্বোডিয়াও ব্যান্ডউইথ নিতে চায়

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ২২ আগস্ট ২০১৭

মিয়ানমার ভিয়েতনাম কম্বোডিয়াও ব্যান্ডউইথ নিতে চায়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০০ জিবিপিএস (গিগাবাইট পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথ নিতে চায় মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া। এজন্য একটি লিংক তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। ওই তিনটি দেশ সি-মি-উই-ফোর সাবমেরিন কেবল থেকে সরাসরি ব্যান্ডউইথ নিতে আগ্রহী বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রে প্রধান লিংক গ্রহণকারী দেশ হতে চায় মিয়ানমার। জানতে চাইলে বাংলদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মিয়ানমার আমাদের কাছ থেকে ১০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ নিতে চায়। ওই পরিমাণ ব্যান্ডউইথ মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া মিলে ব্যবহার করবে।’ তিনি জানান, সি-মি-উই-ফোর সাবমেরিন কেবল থেকে লিংক তৈরির কাজ চলছে। সাবমেরিন কেবল থেকে মিয়ানমার কাছে হওয়ায় লিংক তৈরির কাজ সহজ হবে। এই লিংক সরাসরি মিয়ানমারকে যুক্ত করবে। মিয়ানমার থেকে ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া ব্যান্ডউইথ নেবে। তিনি মনে করেন, এই লিংক তৈরি করে ব্যান্ডউইথ দেয়া হলে মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া হবে বাংলাদেশের ব্যান্ডউইথের সবচেয়ে বড় বাজার। প্রসঙ্গত, সি-মি-উই-ফোর সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে এখন বাংলাদেশ পাচ্ছে ৩০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ। এর মধ্যে ব্যবহার হচ্ছে ২২০ জিবিপিএস, যা সরবরাহ করছে বিএসসিসিএল। তবে দেশে মোট ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের পরিমাণ ৪৪০ জিবিপিএস। বাকি ২২০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করছে দেশের ৬টি আইটিসি (ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল ক্যাবল) প্রতিষ্ঠান যার পুরোটাই আমদানি নির্ভর। এই পরিমাণ ব্যান্ডউইথ ৬টি আইটিসি ভারত থেকে আমদানি করে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরায় ১০ জিবিপিএস ব্যান্ডইউথ রফতানি করছে। এদিকে দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল তথা সি-মি-উই-ফাইভের সঙ্গে যুক্ত হলে শীঘ্রই ১ হাজার ৩০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ পাবে। ব্যাকলিংক তৈরির কাজ শেষ না হওয়ায় সি-মি-উই-ফাইভের ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করতে পারছে না বাংলাদেশ। ভুটানের প্রস্তাবিত ২.৫ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ রফতানির উদ্যোগও এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এজন্য আগামী ২০ আগস্ট ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম ভারতের কলকাতা যাচ্ছেন। তিনি সেখানে পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড (পিজিসিআইএল) কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে বিএসসিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘পিজিসিআইএল-এর ভুটান পর্যন্ত ফাইবার অপটিক ক্যাবলের সংযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ চাইবে ওই ক্যাবল ব্যবহার করে ভুটানে ব্যান্ডউইথ পৌঁছতে। এখন দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।’ তিনি আরও জানান, প্রাথমিকভাবে ভুটান ২.৫ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ নিয়ে আমদানি শুরু করতে চায়। পরে প্রয়োজন অনুযায়ী তা বাড়তেও পারে। জানা গেছে, ভুটানে ব্যান্ডউইথ রফতানির জন্য দুটি পথ (ব্যান্ডউইথ পরিবহনের জন্য) প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়েছে। একটি পথ হলো পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা হয়ে, অন্যটি রংপুর হয়ে। পিজিসিআইএল-এর সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্ত হলে পথ নির্বাচনও চূড়ান্ত হবে। বিএসসিসিএল সূত্রে জানা গেছে, ভারত বাংলাদেশকে ব্যান্ডউইথের দাম কমাতে বলেছে। বাংলাদেশ ভারতে ১০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ রফতানি করে জিবিপিএস প্রতি আয় করে ১০ হাজার ডলার। ভারত এই দাম ৯ হাজার ডলারের নিচে করার প্রস্তাব দিয়েছে। ভারতের রাষ্ট্রীয় টেলিযোগাযোগ কোম্পানি বিএসএনএল (ভারতীয় সঞ্চার নিগম লিমিটেড) বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যান্ডউইথ রফতানি চুক্তির বিষয়টি রিভিউ করতে বলেছে বলে জানিয়েছেন মনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে এই চুক্তি হয়েছিল ৩ বছরের জন্য। এরই মধ্যে প্রায় দেড় বছর পার হয়ে গেছে। চুক্তিতে ছিল প্রতি বছর ব্যান্ডউইথের দাম রিভিউ করা হবে। যেহেতু দেড় বছরের মতো সময় পার হয়েছে ফলে এই প্রসঙ্গটি উঠে এসেছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা মূল্য না কমিয়ে ব্যান্ডউইথের সরবরাহ বাড়িয়ে বর্তমান আয়ের পরিমাণ ধরে রাখতে চাই। এই প্রস্তাব আমরা বিএসএনএল-কে দেব। তারা রাজি হলে পরবর্তী ধাপে অগ্রসর হওয়া যাবে।’ তবে কী পরিমাণ ব্যান্ডউইথ বাড়ানো হবে সে বিষয়ে তিনি এখনই কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রীর ভারত সফরে এ বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হতে পারে বলে মনোয়ার হোসেন ইঙ্গিত দেন।
×