ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চলে গেলেন নায়করাজ রাজ্জাক

প্রকাশিত: ০১:৩৩, ২১ আগস্ট ২০১৭

চলে গেলেন নায়করাজ রাজ্জাক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের কিংবদন্তি অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাক আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ সোমবার (২১ আগস্ট) ৭৫ বছর বয়সে রাজধানীর বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে সন্ধ্যার দিকে মারা যান তিনি। বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতাল সূত্র জানায়, সোমবার বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে হার্ট অ্যাটাক হওয়া অবস্থায় নায়ক রাজ্জাককে হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সব ধরনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ৬টা ১৩ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এ অভিনেতার মৃত্যুসংবাদ শুনে তাঁকে শেষবারের মতো দেখতে হাসপাতালে ছুটে গেছেন দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা। মৃত্যুকালে নায়করাজ রাজ্জাক স্ত্রী লক্ষ্মী (খায়রুন নেসা), তিন ছেলে বাপ্পারাজ, বাপ্পি ও সম্রাট এবং দুই মেয়ে শম্পা ও ময়নাকে রেখে গেছেন। তার ছেলেরাও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। অভিনেতা রাজ্জাকের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি এক শোকবার্তায় বলেন, ‘বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকপ্রিয়তা অর্জনে নায়করাজ রাজ্জাকের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’ রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, বাঙালি সংস্কৃতি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম স্মরণ করবে। রাষ্ট্রপতি রাজ্জাকের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক শোকবার্তায় বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে রাজ্জাকের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘তাঁর মৃত্যুতে দেশের চলচ্চিত্রশিল্পের জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। তিনি ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল নক্ষত্র।’শেখ হাসিনা নায়করাজের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন। নায়ক আব্দুর রাজ্জাক ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি ভারতের কলকাতার টালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। ওখানেই তার বেড়ে ওঠা। কয়েক দশকের অভিনয় জীবনে তিনি প্রায় ৩০০টি বাংলা ও উর্দু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এছাড়াও পরিচালনা করেছেন প্রায় ১৬টি চলচ্চিত্র। তার প্রযোজনা সংস্থা রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশন থেকে তিনি উল্লেখযোগ্য কিছু ছবি নির্মাণ করেছিলেন। উল্লেখযোগ্য হলো- আকাঙ্ক্ষা, অনন্ত প্রেম, পাগলা রাজা, বেঈমান, আপনজন, মৌচোর, বদনাম, সত্ ভাই, চাঁপা ডাঙ্গার বৌ, জীনের বাদশা, ঢাকা-৮৬, বাবা কেন চাকর, মরণ নিয়ে খেলা, সন্তান যখন শত্রু, আমি বাঁচতে চাই, কোটি টাকার ফকির প্রভৃতি। ১৯৭২ থেকে ’৮৯ সাল পর্যন্ত রাজ্জাক অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে—স্লোগান, আমার জন্মভূমি, অতিথি, কে তুমি, স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা, প্রিয়তমা, পলাতক, ঝড়ের পাখি, খেলাঘর, চোখের জলে, আলোর মিছিল, অবাক পৃথিবী, ভাইবোন, বাঁদী থেকে বেগম, সাধু শয়তান, অনেক প্রেম অনেক জ্বালা, মায়ার বাঁধন, গুণ্ডা, আগুন, মতিমহল, অমর প্রেম, যাদুর বাঁশী, অগ্নিশিখা, বন্ধু, কাপুরুষ, অশিক্ষিত, সখি তুমি কার, নাগিন, আনারকলি, লাইলী মজনু, লালু ভুলু, স্বাক্ষর, দেবর ভাবী, রাম রহিম জন, আদরের বোন, দরবার, সতীনের সংসার প্রভৃতি। অন্ধ বিশ্বাস, সতীনের সংসার, জজসাহেব, বাবা কেন চাকর, পৃথিবী তোমার আমার, বাবা কেন আসামী, মরণ নিয়ে খেলা, কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি, বাপ বেটার লড়াই, পিতার আসন, পিতামাতার, আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা, ভালোবাসার শেষ নেই, ও হৃদয় ভাঙ্গা ঢেউ। অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কারসহ অনেক সম্মাননা। ২০১৩ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আসরে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয় তাকে।
×