ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

২১শে আগস্ট গ্রেনেট হামলা

শরীরে এখনো গ্রেনেটের অসংখ্য স্প্রিন্টার বয়ে বেড়াচ্ছেন রাসেল

প্রকাশিত: ২১:১৫, ২১ আগস্ট ২০১৭

শরীরে এখনো গ্রেনেটের অসংখ্য স্প্রিন্টার বয়ে বেড়াচ্ছেন রাসেল

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল ॥ জোবায়দুল হক রাসেলের শরীরে এখনো তাজা গ্রেনেটের অসংখ্য স্প্রিন্টার। চিকিৎসকরা যা সম্পূর্ণ বেড় করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সেই স্প্রিন্টারের ক্ষত তাঁকে যতনা কষ্ট দিচ্ছে তার চেয়ে বেশি ক্ষোভের আগুনে পুড়ছেন তিনি। ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার বিচার ও জড়িত শাস্তি না হওয়ায় সেই ক্ষোভের আগুনের পুড়ছেন তিনি। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট প্রাণের টানে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগ দেন তিনি। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ২৬ বছর। ওই সময় জামায়াত-বিএনপির মদদে জনসভায় নিক্ষিপ্ত গ্রেনেড হামলায় অন্যান্যদের সাথে তিনিও আহত হন। রাসেল জানান, হামলার সময় আমি ছিলাম সমাবেশের মূল মঞ্চ হিসেবে প্রস্তুতকৃত ট্রাকে উঠার সিঁড়ি ডানপাশে। আমি তখন মতিঝিল থানা ছাত্রলীগ এর সাংগঠনিক সম্পাদক। ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার শিকার হয়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। এর কিছুক্ষন পর চোখ মেলে তাকাতেই দেখি আমার পাঁচ-ছয় গজ দূরে আইভি আপা নিথর দেহে। নির্বাক তাকিয়ে আছেন তিনি , গ্রেনেডে উড়ে গেছে তাঁর দুটি পা। আইভি আপার পাশে আহতাবস্থায় কাৎরাচ্ছিল মহিলা আওয়ামীলীগ এর বেশ কিছু নেতৃবৃন্দ। আমার সামনেই রাস্তায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন আমাদের প্রিয় মোস্তাক আহম্মেদ সেন্টু ভাই। তখন হুড়োহুড়ি ছোটাছুটির ভিড়ে আমি উঠে ছুটতে চেষ্টা করি। পা দুটি কিছুতেই শরীরের ডাকে সাড়া দিচ্ছিলো না। গ্রেনেডের ছোটছোট স্প্রিন্টারের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয় দুই পায়ের গোড়ালি থেকে উরু পর্যন্ত । ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরছে। আমি অসহায়ের মত চিৎকার করতে থাকি, "আমাকে বাঁচান, আমাকে ওঠান, আমি উঠতে পারছি না। এভাবে কতক্ষণ পরে ছিলাম মনে নেই। প্রচন্ড ব্যাথার যন্ত্রনায় সমস্ত শরীর যেন অবশ হয়ে যাচ্ছে। অবশেষে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এর ফুটপাতে কাজ করা এক মুচি সাহায্যে এগিয়ে এলো। মরা লাশের মত টেনে হিঁচড়ে আমাকে ৫০ গজ দূরে রাস্তার একপাশে এনে রাখলো। আমি দখলাম আপাকে বহনকারী গাড়ীটি আপাকে নিয়ে দ্রুত বেড়িয়ে যাচ্ছে। বুঝলাম আপা (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) তাহলে বেঁচে আছে। তখনকার সে অনুভূতি বলে বুঝানো যাবে না, বুকের উপর থেকে যেন বড্ড ভারী একটা পাথর নেমে গেলো। এর পর আহত অন্যান্যদের সাথে একটি ভ্যানে উঠিয়ে নিয়ে আসলো ঢাকা মেডিকেল এর জরুরী বিভাগে। করিডোরে বসেই উপলব্ধি করলাম গ্রেনেড হামলার বিভীষিকাময়তা। যেন হাত-পা বিহীন, ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত শরীরের মিছিল আসছে ঢাকা মেডিকেলে। অপ্রতুল ডাক্তার- নার্স ওয়ার্ডবয়রা আমার অপেক্ষাকৃত মুমূর্ষু ভাই-বোনদের নিয়ে ব্যস্ত। সেখানে চিকিৎসা না পেয়ে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় ধানমন্ডী সেন্ট্রাল হাসপাতালে, সেখানেও একই পরিস্থিতি। হতাহত আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীদের আহাজারি আর্তচিৎকার। প্রায় দুই ঘন্টা অপেক্ষা করেও নূন্যতম প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যতিরেকেই ফিরে আসতে হয়। এরপর আমার স্থান হয় ফার্মগেট এর আল-রাজী হাসপাতালে, সেখানে অপারেশন করে দুই পা থেকে বের করা হয় শতাধিক স্প্রিন্টারের টুকরা। ডাক্তারের ভাষ্যমতে দুই পা থেকে বেড় করা হয় প্রায় শ'দুয়েক ছোটছোট স্প্রিন্টার। মাংসের গভীরে ঢুকে যাওয়ায় সবগুলো বের করা সম্ভব হয়নি। সেই হামলার পর ১৩ বছর অতিবাহিত হলেও অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি হয়নি এখনো। দ্রুত এ হামলার বিচার হলে আমার মনের মধ্যে ক্ষোভের আগুন নিভে যেত।
×