ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কাদের প্রধান বিচারপতিকে বাসায় গিয়ে ধমক দিয়েছেন ॥ মোশাররফ

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২১ আগস্ট ২০১৭

কাদের প্রধান বিচারপতিকে বাসায় গিয়ে ধমক দিয়েছেন ॥ মোশাররফ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বাসায় গিয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে ধমক দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। রবিবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের ত্রাণ কার্যক্রম উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন। ড. মোশাররফ বলেন, সরকার সুপ্রীমকোর্টের রায় বাতিলের বিষয় নিয়ে মেতে আছে। অথচ ষোড়শ সংশোধনীর প্রতিটি পর্যবেক্ষণে এদেশের মানুষের মনের কথা উঠে এসেছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রধান বিচারপতির কাছে গিয়ে ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে চাপ দিচ্ছেন, এটি অনৈতিক কাজ। সংবিধানের ব্যাখ্যা দেয়ার দায়িত্ব সুপ্রীমকোর্টের। সরকার ইচ্ছা করলে রিভিউ করতে পারেন। কিন্তু বিরূপ মন্তব্য করতে পারে না। এটি আদালত অবমাননা। যদি উচ্চ আদালত স্বাধীন হয় তাহলে যারা বিরূপ মন্তব্য করে তাদের আদালতের সামনে দাঁড় করানো হোক। তিনি বলেন, নিম্ন আদালত সরকার দখলে নিয়ে উচ্চ আদালতকে করায়ত্ত করতে চাচ্ছে। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, যদি গণতন্ত্র, সংবিধান ও সুপ্রীমকোর্টের প্রতি বিশ্বাস করেন তাহলে অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক আদালত অবমাননা করছেন দাবি করে ড. মোশাররফ বলেন, তিনি এটি করতে পারেন না। বিচারপতি খায়রুল হককে উদ্দেশ করে ড. মোশাররফ বলেন, মুন সিনেমা হলের মামলা নিয়ে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করেছিলেন। এর মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচনকে নষ্ট করে দিয়েছেন। এখন আপনি সুপ্রীমকোর্টের রায়ের বিষোদগার করছেন। সুপ্রীমকোর্ট যদি চাপে না পড়ে তাহলে বিচারপতি খায়রুল হককে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দাবি করে ড. মোশাররফ বলেন, যদি তা না করা হয় তাহলে সময়-সুযোগ পেলে আমরা করব। ড. মোশাররফ বলেন, এখন সরকারের দরকার হলো বন্যার্তদের সহযোগিতা করা। অথচ তারা তা না করে খালেদা জিয়াকে নির্মূল করতে চায়। আমরা বলতে চাই আওয়ামী লীগ দেশে রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি করায় তা পূরণের জন্য জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বিএনপি বানে ভেসে আসেনি। বিএনপিকে নির্মূল করার জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। তাই যত চেষ্টাই করা হোক খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে নির্মূল করা যাবে না। যারা জনবিরোধী তারাই একদিন নির্মূল হয়ে যাবে। ড. মোশাররফ বলেন, বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ দেয়ার নামে সরকার ও আওয়ামী মিডিয়া কভারেজ এবং ফটোসেশন করছে। যেভাবে ত্রাণ নিয়ে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজন সেভাবে দাঁড়াচ্ছে না। প্রয়োজনের তুলনায় অল্প ত্রাণসামগ্রী দেয়া হচ্ছে। অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, সরকারের পরিপূর্ণ সহায়তা ছাড়া বিরোধী দলের পক্ষে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম সম্ভব নয়। ত্রাণ বিতরণে আমরা বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। এর পরও আমরা জনগণের মাঝে যাচ্ছি। জনগণের শক্তি নিয়ে আমরা আবারও যাব। তিনি বলেন, এ ধরনের বন্যা আর হয়নি দেশে। তিনি বলেন, সরকার শুধু খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক শরাফত আলী সফু ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভুইয়া জুয়েল। বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদগার করাই যেন আওয়ামী লীগের প্রধান কাজ-রিজভী বন্যাকবলিত এলাকায় গিয়ে দুর্গতদের সাহায্যের চেয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদগার করাই যেন আওয়ামী লীগের প্রধান কাজ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রবিবার বিকেলে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। রিজভী বলেন, দেশের প্রকৃত বানভাসিরা ত্রাণ পাচ্ছে না। অথচ আওয়ামী লীগ নেতাদের ত্রাণ কার্যক্রম দেখলে মনে হয় যেন বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণের কোন অভাব নেই। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পদত্যাগ নয়, দেশের মানুষ এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ চায়। রিজভী বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পরে আওয়ামী লীগ শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তাই তারা বিচার বিভাগকে চাপে রাখতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে। বেসামাল হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধান বিচারপতির বাসায় গিয়ে পদত্যাগ করতে বলেছেন কিনা, এ নিয়ে চারদিকে মানুষের মধ্যে গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক সরাফত আলী সফু প্রমুখ।
×