ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বানভাসি কোন মানুষ গৃহহীন থাকবে না

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২১ আগস্ট ২০১৭

বানভাসি কোন মানুষ  গৃহহীন থাকবে না

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বন্যায় যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা মেরামত করে দেয়া হবে। নতুন ফসল ঘরে না ওঠা পর্যন্ত বন্যার্তদের সহায়তা দেয়া হবে। ‘বানভাসি একটা মানুষও ঘরহারা থাকবে না। বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে বন্যার্তদের পুনর্বাসন করা হবে। তাদের ঘরবাড়ি তৈরি করে দেয়া হবে। বন্যায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আমরা সবসময় তাদের পাশে আছি।’ রবিবার সকালে দিনাজপুর জিলা স্কুল মাঠে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে সকাল ১০টায় দিনাজপুর গোর-এ শহীদ ময়দানে হেলিকপ্টারে করে তিনি অবতরণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে বন্যা, দুর্যোগ থাকবে। সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করেই আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না এবং না খেয়ে মারা যাবে না। সবাইকে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হবে। আমরা সেই ব্যবস্থা নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, উত্তরবঙ্গে হাহাকার ছিল, মঙ্গা লেগেই থাকত। আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর উত্তরবঙ্গের মঙ্গা দূর করে। উত্তরবঙ্গে যেন মঙ্গা না থাকে আমরা তার ব্যবস্থা করি। ২০০১ সালে বিএনপি জোট সরকার ক্ষমতায় আসলে উত্তরবঙ্গে আবারও মঙ্গা দেখা দেয়। ২০০৮ সালে নির্বাচনের পর ক্ষমতায় এসে আবার আমরাই সেই মঙ্গা দূর করি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশ থেকে খাদ্য কেনা শুরু করেছি। দেশে পর্যপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে। আপনারা চিন্তা করবেন না। আওয়ামী লীগ, বিজিবি, সেনাবাহিনী, পুলিশবাহিনী সবাই ত্রাণ বিতরণ করছে। জাতির পিতা এ দেশ স্বাধীন করে দিয়েছেন, আমরাও গৃহহারা মানুষের ঘর-বাড়ি করে দিচ্ছি। এ সময় তিনি আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে বলেন, আমি বাবা, মা, ভাই-বোন সব হারিয়েছি। আমার আর হারাবার কিছু নেই। আমার বাবা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। আমি দেশের মানুষের জন্য আমার জীবন উৎসর্গ করেছি। প্রয়োজনে আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমিও জীবন দেব। এনজিওগুলোর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা যারা লোন দিয়েছেন, তারা সাপ্তাহিক কিস্তি তোলার জন্য বন্যার্ত মানুষদের জুলুম করবেন না। এটা এনজিওদের প্রতি আমার নির্দেশ থাকবে। ৫০ লাখ পরিবারকে চাল দিচ্ছি। আপনারা যাতে ১০ টাকা কেজি চাল খেতে পারেন তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের ২১ জেলায় আকস্মিক বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের দুর্ভোগ কষ্ট লাঘবে আমরা ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেছি। বন্যাদুর্গত এলাকায় গৃহহারা মানুষকে গৃহ নির্মাণ করে দেয়া হবে। সে জন্য টিন দেয়া হবে। যে এলাকায় খাস জমি নেই সেখানে সরকার জমি কিনে গৃহ নির্মাণ করবে। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মেরামত ও নির্মাণে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যেন কোন ধরনের সমস্যা না হয় সে জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা-ঘাট, পুল-কালভাট নির্মাণে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যে সকল শিক্ষার্থীর বই-খাতা বন্যার পানিতে নষ্ট হয়েছে তা সরবরাহের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কৃষি ক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হওয়ায় মানুষ যেন কোনভাবেই অভুক্ত না থাকে সে জন্য বিদেশ থেকে খাদ্যশস্য আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বন্যা পরবর্তী কৃষি পুনর্বাসনের জন্য সব ধরনের সহায়তা দেয়া হবে। বীজ, কীটনাশক, সারসহ অন্যান্য উপকরণ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে। ১ কোটি দরিদ্র মানুষকে ১০ টাকা কেজিতে চাল দেয়া হবে। সরকার ৩ মাস পর্যন্ত বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে থেকে সার্বিক সহযোগিতা করবে। পরে প্রধানমন্ত্রী দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ফরক্কাবাদ ইউনিয়নের তেঘরা হাই স্কুল প্রাঙ্গণে বন্যাদুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। দুটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ১০ হাজার বন্যাদুর্গত মানুষকে ত্রাণ দেয়া হয়। ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের হুইপ স্থানীয় এমপি ইকবালুর রহিম ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, পানি সম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ম-লীর সদস্য সতীশ চন্দ্র রায়, প্রেসিডিয়াম সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, মনোরঞ্জনশীল গোপাল এমপি, শিবলি সাদিক এমপি, দিনাজপুর জিলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল ইমাম চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম ও পুলিশ সুপার মোঃ হামিদুল আলম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিনাজপুরে আগমন উপলক্ষে বিভিন্ন উপজেলা থেকে হাজার হাজার দলীয় নেতাকর্মী জিলা স্কুল ও তেঘরা হাই স্কুলের আশপাশে সমবেত হন।
×