ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নাটোরের ভেসে গেছে ১২ কোটি টাকার মাছ

প্রকাশিত: ০১:৪২, ২০ আগস্ট ২০১৭

নাটোরের ভেসে গেছে ১২ কোটি টাকার মাছ

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর ॥ গত কয়েকদিনের ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে নাটোরের সিংড়া, নলডাঙ্গা ও গুরুদাসপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গত ৫দিনে বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ার পাশাপাশি ফসল তলিয়ে গেছে। তিনটি উপজেলার বেশ কিছু জায়গায় রাস্তার উপর দিয়ে বয়ে চলেছে পানির তীব্র স্রোতে। লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। সিংড়ায় আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ৮১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে নতুন নতুন জায়গা প্লাবিত হচ্ছে। নলডাঙ্গা উপজেলার বাররনই নদীর পানি ও হালতি বিলের পানি প্রতিদিন রাতদিনে গড়ে দশমিক ৬-৭ সেন্টিমিটার হারে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিংড়া, গুরুদাসপুর এবং নলডাঙ্গায় গত ৫দিনে বন্যার পানিতে ভেসে গেছে আট শতাধিক পুকুরের মাছ। বন্যা পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার কারনে এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। ইতোমধ্যেই বন্যা কবলিত এলাকায় স্থানীয় সংসদ সদস্য জুনাইদ আহমেদ পলক, জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুনসহ জেলা, উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরী করা হচ্ছে। বন্যার্ত মানুষের জন্য ত্রাণ বিতরণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বন্যায় যে কোন ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, সিংড়ায় আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ৮১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। সিংড়া পৌর শহরসহ ৬টি ইউনিয়নের ৫০ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলার প্রায় ৬০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। বিভিন্ন স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় বন্যা কবলিত মানুষদের আশ্রয় নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য সিংড়া দমদমা সরকারি গার্লস, পাঙ্গাশিয়া, কতুয়াবাড়ী, নিংগইন ও জোড়মল্লিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বিলচলন ও মহেশচন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং শোলাকুড়া আলিম মাদ্রাসায় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ফসল ডুবে যাওয়াসহ অনেক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় মৎস্য বিভাগ। তবে পুকুরের মাছ রক্ষায় শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মৎসচাষীরা। এবারের বন্যায় যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তাতে সরকার সহযোগীতা না করলে কৃষকদের ঘুরে দাড়ানো মুশকিল হবে বলে জানান তারা। নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বারনই নদীর পানি ও হালতি বিলের বন্যার পানি আরোও অবনতি হয়েছে। রোববার ৭ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলে ২২টি বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। হালতি বিলে তলিয়ে গেছে ৭০০ হেক্টর আমন ধান ভেসে গেছে ৬০টি পুকুরের মাছ আরোও কয়েক শতাধিক পুকুরের বাঁধ ঝুকির মধ্যে রয়েছে। বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকার কয়েক শতাধিক পরিবার রোববার বাড়িঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় গবাদি পশু গরু ছাগল নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। নলডাঙ্গা উপজেলায় এখন পর্যন্ত দুটি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। এছাড়া গুরুদাসপুর উপজেলার বিল হরিবাড়ী, সাবগাড়ী, যোগীন্দ্র নগর, চর বিলসাসহ বেশ কিছু এলাকার প্লাবিত হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় দুই শতাধিক মানুষ পানি বন্দী রয়েছে ও ঘরবাড়ীতে পানি ঢুকে গেছে। গুরুদাসপুর উপজেলায় এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত প্রায় ৫০হেক্টর জমির আমন ধান তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে ১০-১২টি পুকুরের মাছ। জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, জেলা মোট ২২হাজার পুকুর রয়েছে। এরমধ্যে সিংড়া উপজেলায় ৬হাজার পুকুরের মধ্যে এখন পর্যন্ত বন্যার পানিতে ৭শতাধিক পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এই উপজেলায় এখন পর্যন্ত ক্ষতির পরিমান নির্ধারণ করা হয়েছে ১১কোটি ২৮লাখ টাকা। এছাড়া নলডাঙ্গা উপজেলায় বারনই নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে ৬০টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এই উপজেলায় ক্ষতি পরিমান নির্ধারণ করা হয়েছে ৭লাখ ২০ হাজার এবং গুরুদাসপুরে বণ্যার পানিতে ভেসে গেছে ৪১টি পুকুরের মাছ। ক্ষতি পরিমান ধরা হয়েছে সাড়ে ৬লাখ টাকা। নাটোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ মাছ চাষীদের তালিকা করে অব্যাহত রেখেছি। বন্যার পানি বৃদ্ধির কারণে প্রতিদিনই ভেসে যাচ্ছে নতুন নতুন পুকুরের মাছ। এতে চাষীরা লাখ লাখ টাকার ক্ষতি শিকার হচ্ছে। মাছ চাষীদের তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরনের পর যদি কোন অনুদান পাওয়া যায়, সেগুলো ক্ষতিগ্রস্থ মাছচাষীদের মাঝে বিতরণ করা হবে। নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুধাংশু কুমার জানান, বারনই নদীর পানি ১৩.৩৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিংড়ায় আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ৮১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। নদীগুলোর বিভিন্ন পয়েন্টে বেশ কয়েকটি বাধ ঝুকিপূর্ণ রয়েছে। তবে সেগুলোকে রক্ষা করতে সার্বক্ষনিক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
×