ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইরাকে অস্থিরতার মধ্যেই বাড়ছে ফুটবলের জনপ্রিয়তা

প্রকাশিত: ১৮:০৪, ২০ আগস্ট ২০১৭

ইরাকে অস্থিরতার মধ্যেই বাড়ছে ফুটবলের জনপ্রিয়তা

অনলাইন ডেস্ক ॥ ইংলিশ ফুটবল ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ভক্তরা ছড়িয়ে আছেন বিশ্বজুড়ে। এমনকি যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইরাকেও রয়েছে ক্লাবটির সমর্থকেরা। বাগদাদে ম্যানইউ -এর অফিসিয়াল ফ্যান ক্লাবের সদস্যরা বলছেন, এক দশকের বেশি সময় ধরে দেশটির রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অস্থিরতা, সংঘাত আর অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকে এই ক্লাব কিছুটা মুক্তি দেয় তাদের। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জয়ের পর তাদের হোম গ্রাউন্ড যুক্তরাজ্যের ওল্ড ট্রাফোর্ড থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরেও শোনা যায় ভক্তদের উল্লাসধ্বনি। দূরত্ব এখানে কেবলই ভূখন্ডের, কিন্তু অনুভূতি একই। ইরাকের বাগদাদে ফুটবল ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ফ্যান ক্লাবের সমর্থকেরা দলের পতাকা উড়িয়ে, মুখে দলের প্রতীক এঁকে একই আবেগে দলের সাফল্যে উল্লাস করছেন। প্রতি সপ্তাহে স্থানীয় এক শপিং মলে ক্লাবের দুইশোর মতো সদস্য একত্রিত হন। যত কাজ থাকুক, সময় বের করে ঠিক এখানে হাজির হয়ে যান তারা। এদেরই একজন আলা সাদি বলছেন "খুব অল্প সময়ের জন্য হলেও, এটা ইরাকের সংঘাত, সহিংসতা থেকে পালিয়ে বাঁচার এক ধরণের চেষ্টা। এখানে যারা আসছেন, তাদের অনেকেই পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছেন।" "অল্প বয়সীরা নিজেদের মনোযোগ ফুটবলে কেন্দ্রীভূত করেন। আমাদের জন্য এটা কেবল ফুটবল খেলা দেখা নয়। আমরা এখানে একটু ভালো সময় কাটাই, আর নতুন নতুন বন্ধু খুঁজে পাই" বলছিলেন আলা সাদি। ২০১৪ সালে এই ফ্যান ক্লাবটি গঠিত হয়। এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ছয় হাজার মানুষ সদস্য হয়েছেন ক্লাবের। ইরাকের মতো রাজনৈতিকভাবে অস্থির একটি দেশে প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ একসঙ্গে দেখা বেশ কঠিন একটি কাজ। গত বছর কথিত ইসলামিক স্টেট ইরাকের রেয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের একটি ক্লাবে হামলা চালিয়েছিল। সেই হামলায় ১৪জন নিহত হয়েছিলেন এবং অন্তত ২২জন আহত হয়েছিলেন। ফলে এখানে যারা একত্রিত হন নিয়মিত, খেলা দেখার উচ্ছাস যেমন আছে, নিরাপত্তার ঝুকিও একটি বাস্তবতা তাদের জন্য। বলছিলেন আলী মারওয়া নামের আরেকজন সমর্থক। "আইএসের উপস্থিতির কারণে আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে অনেক ভাবতে হয়। প্রায়ই কতশত বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, বিশেষ করে বাগদাদে। সেকারণে এই জায়গাটির মত একটু নিরাপদ একটা জায়গাকে বেছে নিয়েছি আমরা। এখন এই জায়গাটি আমাদের জন্য একটু বিশ্রাম আর নিজেদের মত সময় কাটানোর একটা জায়গায় পরিণত হয়েছে" বলছিলেন আলী মারওয়া। ক্লাবের সদস্যদের বয়স আর পেশা ভিন্ন রকম। মাঝবয়সী ফুটবল ভক্ত যেমন আছেন, তেমনি সদ্য কৈশোরে পা দেয়া সদস্যও রয়েছে। সদস্যদের অনেকেই নিজেদের পরিবার এমনকি ছোট ছোট বাচ্চাদেরও নিয়ে আসেন খেলা দেখতে। তারা বলছেন, নানারকম হুমকি, বোমা হামলা আর জাতিগত সহিংসতার মধ্যেও, ইরাকিদের মধ্যে ফুটবলের জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে। "একজন সমর্থকের কত বয়স, তার ধর্ম কি, গায়ের রঙ কেমন বা সে কোন দেশের বা কোন শহরের মানুষ সেটা কোন ব্যপার নয়। আমরা এক পতাকার নিচে একত্রিত হই, আর সেটি ম্যান ইউ"। ক্লাবের ঘরটিতে বসার জন্য আরামদায়ক ব্যবস্থা রয়েছে। ঘরের বিভিন্ন দিকের দেয়ালে বেশ কটি টিভি স্ক্রিনে খেলা দেখার ব্যবস্থা। খাবার আর কোমল পানীয় পাওয়া যায়, সেই সাথে ওয়াইফাই এর ব্যবস্থা রয়েছে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পতাকা, জার্সি, স্টিকার, ব্যাজ কিংবা খেলোয়াড়দের পোষ্টার এমন নানা স্মারক বিক্রি করা হয় দুটি ভিন্ন কোনে। ফুটবলকে কেন্দ্র করে তাদের যেন এক নতুন আত্মীয়তা গড়ে উঠেছে। সূত্র: বিবিসি।
×