ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘এগুলো বিচারকের ভাষা হতে পারে না’

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ১৯ আগস্ট ২০১৭

‘এগুলো বিচারকের ভাষা হতে পারে না’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতির দেওয়া সংসদ, সংসদ সদস্য, গণতন্ত্রসহ বিভিন্ন মন্তব্য তুলে ধরে সাবেক প্রধান বিচারপতি আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হক বলেছেন, ‘এগুলো বিচারক ও সুপ্রীমকোর্টের ভাষা হতে পারে না।’ শনিবার দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘জাতীয় শোক দিবস, ষোড়শ সংশোধনী ও জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নে রাজনীতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। খায়রুল হক বলেন, ‘সংসদ ও সরকারের প্রতি বিরাগ থেকে যদি প্রধান বিচারপতি এই রায় দিয়ে থাকেন, তাহলে তিনি পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।’ প্রধান বিচারপতি সংসদকে অকার্যকর বলেছেন—উল্লেখ করে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, ‘এটি সবচেয়ে আপত্তিকর কথা।’ আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্যে বিচারপতি খায়রুল হক আইন কমিশনের কাজের ব্যাখ্যা তুলে ধরে বলেন, যেহেতু আইন নিয়ে গবেষণা করা তাদের কাজ, সেহেতু আদালতের এই রায় তাদের গবেষণার বিষয়ের মধ্যেই পড়ে। ‘কথা উঠে আমি ল কমিশনের চাকরি করি। এখানে বসে এত কথা বলা উচিৎ কি না? তাদের হয়ত ল কমিশন সম্পর্কে কোনো আইডিয়া না থাকারই কথা। ল কমিশন কিন্তু এমন একটা প্রতিষ্ঠান, যেখানে আইন নিয়েই আমাদের গবেষণা। আইনকে মনিটর করাও আমাদের আরেকটা কাজ। উচ্চ আদালতের একটি রায় কিন্তু আইন। সেটা দেশের জন্য আইন। প্রধান বিচারপতি রায়ের মধ্যে যে সব কথা বলেছেন সেটা যদি বাইরে বলতেন, তাহলে হয়ত এত কথা উঠত না। কিন্তু রায়ের মধ্যে বলেছেন, তখন সেটা আইনের অংশ হয়ে গেছে, এ কারণেই এত আপত্তি।’ ‘তিনি তার রায়ের মধ্যে সংসদকে অকার্যকর বলেছেন এটাই সর্বনাশী ব্যাপার। সে কারণে এটাতো আমাদের মনিটরিং করতে হবে, সেটা কারও পছন্দ হোক বা না হোক। ল কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব।’ সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ নিয়ে সাবেক এই প্রধান বিচারপতি বলেন, বর্তমানে একটি দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা চালু আছে। দ্বৈত শাসন মানে এ রকম যে, নিম্ন আদালতের বিচারকদের প্রমোশন বা বদলি সংক্রান্ত প্রস্তাব মন্ত্রণালয় থেকে সুপ্রীমকোর্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ওই প্রস্তাব জিএ কমিটি বা ফুল কমিটি বিচার বিবেচনা করে। হয় তাতে একমত হন অথবা দ্বিমত করেন। সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে- ‘‘বিচার-কর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচারবিভাগীয় দায়িত্বপালনে রত ম্যাজিষ্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল-নির্ধারণ, পদোন্নতিদান ও ছুটি মঞ্জুরীসহ) ও শৃঙ্খলাবিধান রাষ্ট্রপতির উপর ন্যস্ত থাকিবে এবং সুপ্রিম কোর্টের সহিত পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তাহা প্রযুক্ত হইবে।’’ খায়রুল হক বলেন,‘আমি মনে করি এই ব্যবস্থাটাই উত্তম। কারণ এখানে কোনো পক্ষেরই এক্সট্রিম কোনো কিছু করার সুযোগ নেই।’ সম্পূর্ণ ক্ষমতা সরকারের উপর থাকলে যেমন ‘কিছুটা অপব্যবহারের’ সুযোগ থাকে, তেমনি সুপ্রীমকোর্টের উপর থাকলেও একই ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
×