অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রূপকল্প বাস্তবায়নে আগামী ২০২১ সালের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাণিজ্যে সক্ষমতা অর্জনের জন্য বাংলাদেশ কাজ করে যাচ্ছে। দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা দিয়ে বাংলাদেশ আমদানি ও রফতানি নীতি গ্রহন করে। শুধু তাই নয়, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) দেয়া বাণিজ্য সুবিধা গ্রহনের জন্য পেপার লেস বাণিজ্যে সক্ষমতা অর্জনের প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার।
শনিবার ঢাকায় সেন্টার ফর গবর্নেন্স স্টার্ডিজ (সিজিএস) আয়োজিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এ্যান্ড স্টাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এর মিলনায়তনে “বাংলাদেশ ইন রিজিওনাল ট্রেড এন্ড কানেকটিভিটি : এ পলিটিকো-ইকোনমিক এ্যাসেসমেন্ট” শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এসব কথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, রফতানি বাণিজ্য বাড়াতে শ্রীলংকার সাথে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ) স্বাক্ষর করা করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ডব্লিউটিও’র সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইউরোপিয়ন ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, চীন ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশের দেয়া বাণিজ্য সুবিধা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। বৈদেশিক বাণিজ্যের ভলিউম বৃদ্ধির সাথে সাথে বাংলাদেশ চট্টগ্রাম, মংলা বন্দরের পাশাপাশি পানগাঁও ও পায়রা সমুদ্র মন্দর চালু করা হয়েছে। এসব বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে রাস্তাঘাট সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তিনি বলেন, বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধির সাথে সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের বিকল্প নেই। বাংলাদেশ, ভূটান, ইন্ডিয়া নেপাল (বিবিআইএন) এবং বাংলাদেশ, চীন, ইন্ডিয়া, মায়ানমার (বিসিআইএম) কানেকটিবিটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছে।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, মোট বিশ্ববাণিজ্যের মাত্র শতকরা ৫ ভাগের কম বাণিজ্য হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ায়। বাংলাদেশের সাথে ভারত ও চীনের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। আমাদের প্রয়োজনেই মেশিনারিজ ও পণ্যের কাঁচামাল সেখান থেকে বেশি আমদানি করা হয়। আমেরিকা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, চিলি, জাপান, ইউরোপিয়র ইউনিয়নসহ উন্নত বিশে^র অনেক দেশে বাংলাদেশ বেশি পণ্য রফতানি করে থাকে। বাংলাদেশ সার্ভিস সেক্টর বাদে গত বছর প্রায় ৩৪ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি করেছে। এ বছর ৩৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সার্ভিস সেক্টর মিলে মোট রফতানি ধরা হয়েছে ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অন্য দেশকে কোন ধরনের বাণিজ্য সুবিধা দিচ্ছে না। দেশীয় শিল্প সুরক্ষা দিয়ে বাণিজ্য করছে, এ নীতির ফলে বাংরাদেশ ইতোমধ্যে সিমেন্ট, রড, পেপার, টিনসহ অনেক পণ্যের ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে। কাঁচাপাট রফতানির উপর নিয়ন্ত্রন আরোপ করা হয়েছে। ভারত বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের উপর কাউন্টার ভেলিং ডিউটি আরোপ করেছে, কিন্তু কাঁচাপাট আমদানির উপর কোন ডিউটি আরোপ করেনি। বাংলাদেশ সবসময় নিজেদের শিল্পের সুরক্ষা দিচ্ছে। আগামী ২৯ আগস্ট বাংলাদেশ থাইল্যান্ডের ব্যাংককে বাণিজ্য সহজীকরণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে।
সেন্টার ফর গবরনেন্স স্টার্ডিজ (সিজিএস) এর প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. এম আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিষয়ের উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থনীতিবীদ এম শহিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, জাতীয় সমাজতান্ত্রীক দলের প্রেসিডেন্ট আ স ম আব্দুর রব, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট মীর নাসির হোসেন, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ ইব্রাহীম, এ্যাম্বাসেডর আশফাকুর রহমান, বিআইআইএসএস’র প্রেসিডেন্ট এ্যাম্বাসেডর মুন্সী ফয়েজ আহমেদ প্রমুখ।