ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কমলাপুরে মানুষের ঢল

প্রকাশিত: ০১:৩৫, ১৯ আগস্ট ২০১৭

কমলাপুরে মানুষের ঢল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের প্রায় ২০টি জেলা বন্যার কবলে। কয়েকটি জেলা উপজেলার সঙ্গে সড়ক ও রেলপথের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এরমধ্যে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ভাঙাচোরা রাস্তা। এ নিয়েই ঈদে ঘরমুখো মানুষের দুঃশ্চিন্তা। নিরাপদ ঈদ যাত্রা হবে তো। সড়ক পথে দুর্ভোগের কথা ভেবে অনেকেই রেলপথকে বেছে নেয়ার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ বিকল্প হিসেবে নৌ-পথকে নিরাপদ মনে করছেন। শনিবার ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রির দ্বিতীয় দিনে কমলাপুর রেল স্টেশনজুড়ে উপচেপড়া মানুষের ভীড় দেখা গেছে। এরমধ্যে অনেকেই সড়কের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ট্রেনের টিকেট কাটতে আসেন। রেল কর্তৃপক্ষও বলছে সড়ক পথে ঈদে ভোগান্তির আশঙ্কায় এবছর ট্রেনে বাড়তি যাত্রী চাপ থাকবে। অগ্রিম টিকেট বিক্রির দ্বিতীয় দিনে কমলাপুরে এসি টিকেট না পেয়ে খালি হাতে ফিরেছেন অনেকে। তেমনি বাসেরও একই চিত্র। বাসের বেশিরভাগ টিকেট শেষ। আবার সোনার হরিন টিকেট হাতে পেয়ে খুশিতে অনেককেই বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে। রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক জানিয়েছেন, বন্যার কারণে ট্রেনের সিডিউল বাতিল করা হলে যাত্রীদের টাকা ফেরত দেয়া হবে। সকাল থেকে কমলাপুর রেল স্টেশনের প্রতিটি কাউন্টারের সামনেই টিকেট প্রত্যাশীদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। এরমধ্যে অনেকেই মধ্য রাতে এসে দাঁড়িয়েছেন। কেউ এসেছেন ভোরে। শনিবার সকাল ৮টা থেকে কমলাপুর স্টেশনের ২৩টি কাউন্টার থেকে একসঙ্গে টিকেট বিক্রি শুরু হয়। এদিন দেয়া হয়েছে ২৮ অগাস্টের টিকেট। এবার কোরবানির ঈদে তিন দিনের সরকারী ছুটি শুরু হবে ১ সেপ্টেম্বর থেকে। আগের দিন বৃহস্পতিবার হওয়ায় সেদিনের টিকেটের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি থাকবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। শনিবার ৩১টি আন্তঃনগর ট্রেনের বিভিন্ন গন্তব্যের ২২ হাজার ৪৯৬টি টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। ৩৫ ভাগ েেকাটার জন্য সংরক্ষিত রেখে বাকি টিকেট কাউন্টার থেকে পাচ্ছেন যাত্রীরা। এছাড়া ঈদের বিশেষ ট্রেনের ২ হাজার ৬০৬টি টিকেটও কাউন্টার থেকে বিক্রি করা হচ্ছে। টিকেটের জন্য অপেক্ষমাণ মানুষের সারি টার্মিনাল ভবন ছাড়িয়ে স্টেশনের প্রবেশপথ পর্যন্ত চলে আসে। কমালাপুর স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, টিকেট প্রত্যাশীরা অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট কিনতে পারছেন। কোনো যাত্রী এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের অভিযোগ জানাননি। বেশিরভাগ মানুষ টিকেট নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারছেন। এসি টিকেটের কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ানেকের চাহিদা থাকে এসি টিকেটের। কিন্তু সংখ্যায় কম হওয়ায় আমরা চাহিদা পূরণ করতে পারি না। এজন্য না পাওয়ার অভিযোগ যাত্রীদের। তিনি জানান, কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে প্রতিদিন ৩১টি ট্রেনের ২২ হাজার ৪শ ৯৬টি টিকেট বিক্রি করা হবে। ক্রমান্বয়ে ২০, ২১ ও ২২ আগস্ট যাত্রীরা যথাক্রমে ২৯, ৩০ ও ৩১ আগস্টের অগ্রিম টিকেট কাটতে পারবেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া যাওয়ার টিকেটের জন্য শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় স্টেশনে এসেছেন বলে জানান বেসরকারী চাকুরীজিবী কামরুজ্জামান। শনিবার সকাল ৮টায় টিকেট হাতে পান তিনি। কামরুজ্জামান বলেন, পরিবারের সবাইকে নিয়ে যাবে। আমাদের ওই দিকে সড়কপথ ভালো, তবে সবাই বাসে চলতে পারে না। এজন্য ট্রেনে যাই। টিকেট কনফার্ম করার জন্যই আগের এসে বসেছিলাম। টিকেট পাওয়ার পর এখন ভালো লাগছে।” মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের টিকেট কাটতে আসেন যাত্রাবাড়ির বাসিন্দা প্রবীর কর। তিনি জানান, ঢাকা মোহনগঞ্জ পর্যন্ত ভাল বাস সার্ভিস নেই। তাছাড়া মহাসড়কে দিন দিন যানজট পরিস্থিতি মাত্রা ছাড়াবে। রাস্তার অবস্থাও ভাল নয়। শুনেছি টঙ্গী থেকে নাকি জয়দেবপুর চৌরাস্তা পাড়ি দিতে সময় লাগে চার ঘন্টারও বেশি। তাঁর সঙ্গে বন্ধু টিকেট কাটতে আসেন জামালপুরের ট্রেন দেওয়ানগঞ্জ এক্সপ্রেসের। সোহেল ও বিল্লাল জানান, এসি টিকেট চেয়েছিলাম। পাইনি। তাই এই ট্রেনের টিকেট কাটার কথা জানান তিনি। উত্তরবঙ্গেও ট্রেনের টিকেট কাউন্টারে ভিড় ছিল সবচেয়ে বেশি। এসব ট্রেনের টিকেটের জন্য শুক্রবার দুপুর থেকেই লোকজন কাউন্টারের সামনে ভিড় করেন। রাজশাহীর পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেটের জন্য শুক্রবার দুপুর ২টায় কমলাপুরে আসা মাদ্রাসা ছাত্র মোহাম্মদ ওয়ালিউল্লাহ কাঙ্খিত টিকেট পেয়ে বেশ খুশি। আরেকজন টিকেট প্রত্যাশী জানান, আমার আগে ৪ জন ১৬টা এসি টিকেট নিয়েছে। এখনই বলছে আর কোনো এসি টিকেট নাই। শুধু পদ্মা ট্রেনেই তিনটা এসি বগি আছে। এতগুলো ট্রেন মিলিয়ে কি মাত্র ১৬টা টিকেট? তাহলে বাকি টিকেটগুলো গেল কই? ২০ ঘন্টার বশি সময় দাঁড়িয়ে থাকার পর যদি বলে টিকেট নাই তাহলে কেমন লাগে বলেন। এসি টিকেট না থাকার বিষয়ে কমলাপুর স্টেশনের ব্যবস্থাপক সীতাংশু চক্রবর্ত্তী সাংবাদিকদের জানান, যাত্রীদের অভিযোগ সত্যি নয়। আমি নিজেই গিয়ে দেখে এসেছি সার্ভারে। এসি টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে, এগুলো কাউন্টার থেকেই বিক্রি হচ্ছে। কিছু কিছু লোক অযৌক্তিক কথা বলছে। এসি টিকেটের স্টেশন প্রতি কোটা থাকে জানিয়ে যাত্রীদের কাঙ্খিত স্টেশনের না পেলে পরবর্তী স্টেশনের টিকেট কেনার পরামর্শ দেন সীতাংশু চক্রবর্ত্তী। একটা টিকেট হবে? ॥ একটা টিকেট হবে ভাই। ৩০ আগস্টের খুলনার এসি টিকেট প্রয়োজন। কিন্তু হানিফ কাউন্টার থেকে স্পস্ট জবাব নেই। এসি টিকেট নেই। ২৮ তারিখের নন এসি তাও শেষের আসনের টিকেট হবে। নিরুপায় যাত্রী পরাশ তাই কেটে নিতে বাধ্য হলেন। অগ্রিম বাসের টিকেট বিক্রির দ্বিতীয় দিনে ঠিক এরকম চিত্র দেখা গেছে বেশিরভাগ কাউন্টারে। টিকেট কিনতে ভোর থেকেই নামি দামি কোম্পানীর কাউন্টারে সামনে ব্যাপক ভীড় দেখা গেছে। অথচ যাত্রীর তুলনায় অর্ধেক টিকেটও নেই। এর কারণ হিসেবে কাউন্টার ম্যানেজাররা জানান, এবারের ঈদে কিছু বাস বাড়ানো হলেও রাস্তা খারাপ থাকায় ট্রিভ কমানো হয়েছে। যানজট ও সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানান তারা। যাত্রীরা জানান, বিশেষ করে ৩০ ও ৩১ আগস্টের টিকেট শেষ। ফলে টিকেট না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন অনেকে, আবার অনেকে অন্যদিনের টিকেট নিতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে নামি দামি বাস কোম্পানীগুলোর সামনে ভীড় সবচেয়ে বেশি। হানিফ, সোহাগ, এস আলম, শ্যামলী সহ আরো কিছু বাস কাউন্টারের সামনে রীতিমত উপচেপড়া ভীড় ছিল। তবে কাল থেকে ভীড় কমে আসার কথা জানান পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, প্রথমদিনেই বেশিরভাগ টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। বাকি যা ছিল দ্বিতীয় দিনে শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার কবির হোসেন বলেন, অগ্রিম টিকেট ছাড়ার এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়। তাই নির্দিষ্ট দিনের টিকেট সবাইকে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে বাসের টিকেট বিক্রিতে বেশি অর্থ আদায়ের কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, প্রথম সারির পরিবহনগুলো মূলত অগ্রিম টিকেট বিক্রি করে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির পরিবহনগুলো যাত্রী ওঠানোর পর পরই বাস ছাড়ে। তাই দেশের উত্তর ও দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীরা ঈদের সময়ও টিকেট পাবেন। এদিকে ২০ আগস্ট অর্থাত আজ থেকে ছাড়া হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চ যাত্রীদের জন্য প্রথম ও দ্বিতীয় সারির কেবিনের টিকেট। সকাল আটটা থেকে সদরঘাট নদী বন্দরে সংশ্লিষ্ট কাউন্টার থেকে টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন যাত্রীরা। ২৩ আগস্ট থেকে বিআরটিসি বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হবে।
×