ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কাজে আসছে না টার্মিনাল, ভোগান্তিতে মানুষ

রাজশাহী নগরীর সব প্রবেশ মুখে অলিখিত বাসস্ট্যান্ড

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ১৯ আগস্ট ২০১৭

রাজশাহী নগরীর সব প্রবেশ মুখে অলিখিত বাসস্ট্যান্ড

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ বিশাল আয়তনের আধুনিক বাস টার্মিনাল থাকলেও রাজশাহীতে কাজে আসছে না সেটি। শুধুমাত্র বাস রাখার গ্যারেজে পরিণত হয়েছে এ টার্মিনাল। সড়কে যত্রতত্র বাস দাঁড়ানোর কারণে সাত বছরেও টার্মিনালমুখী হয়নি মানুষ। নগরীর বিভিন্ন মোড়ে যাত্রী ওঠানামা করানোয় ওই টার্মিনালটি আর কাজে আসছে না। রাজশাহী মহানগরীর যানজট নিরসন ও যাত্রীদের উন্নত সেবার লক্ষ্যে বড় পরিসরে নগরীর নওদাপাড়ায় নতুন বাস টার্মিনালের যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালে। ঢাকা ও আন্তঃজেলা সব রুটের বাস এ বাস টার্মিনাল থেকে চলাচল শুরু করে তখন থেকেই। কিন্তু টার্মিনালটি শুধুই বাস দাঁড়ানোর জন্য গ্যারেজে পরিণত হয়েছে শুরু থেকেই। সেখান থেকে বাস ছাড়লেও যাত্রীরা যান না সেখানে। ফলে নগরীর ভদ্রা গোল চত্বর (স্মৃতি অমøান) অলিখিত বাস টার্মিনাল হিসেবে পরিণত হয়েছে। সেখানে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে ওঠানো হচ্ছে যাত্রী। রাতদিন এখানে বাস দাঁড়িয়ে থেকে হর্ন বাজাচ্ছে সজোরে। আর পাশেই অবস্থিত অভিজাত পদ্মা আবাসিক এলাকার মানুষ পড়ছেন শব্দদূষণে। আবার ওই দিক দিয়ে পথচারীসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করতে গিয়েই নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রাস্তার ওপর টার্মিনাল গড়ে তোলার কারণে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাস্তা দখল করে শুধু এ টার্মিনাল নয়, নগরীর আরও তিনটি প্রবেশমুখে রাস্তার ওপর গড়ে তোলা হয়েছে অস্থায়ী টার্মিনাল। ফলে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে পড়তে হচ্ছে ব্যাপক ভোগান্তিতে। কোন কোন সময় ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এর শহরে যানজট যেন লেগেই থাকছে এ চারটি অলিখিত টার্মিনালের কারণে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরীর রেলগেট এলাকা দিয়ে চলাচলকারী মানুষদের। রাজশাহী শহরের প্রবেশদ্বার এ পয়েন্টটির দুদিকে গড়ে তোলা হয়েছে অস্থায়ী টার্মিনাল। দক্ষিণ পাশে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রাস্তার দক্ষিণ পাশে গড়ে তোলা হয়েছে এ রুটের জন্য পাশাপাশি দুটি বাসস্টপেজ। আবার উত্তর দিকে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের প্রবেশদ্বারের পশ্চিম পাশে গড়ে তোলা হয়েছে তিনটি স্টপেজ। এগুলোর মধ্যে লোকাল বাসের জন্য একটি, রাজশাহী-নওগাঁ বাসের জন্য একটি এবং বিআরটিসির জন্য একটি। আর এসব অস্থায়ী টার্মিনাল চালানোর জন্য রাস্তার পাশে চেয়ার-টেবিল পেতে বিক্রি হচ্ছে টিকেট। এসব কাউন্টার থেকে টিকেট কিনে মানুষ বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকছেন। বাসগুলো এসে সেখানে ২০ মিনিট করে দাঁড়ালে এক অরাজতার সৃষ্টি হয়। একটি না ছাড়তেই আরেকটি এসে তার পেছনে এলোমেলো হয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। এভাবে একের পর এক অন্তত ৬-৭টি করে বাস দাঁড়িয়ে থাকছে সার্বক্ষণিকের জন্য। রেলগেটের দু’পাশেই গড়ে তোলা এসব টার্মিনালে গড়ে সব সময়ের জন্য অন্তত ১০টি বাস দাঁড়িয়ে থাকে রাস্তা দখল করে। কখনও একটা বাইসাইকেল পার হওয়ার জায়গাও থাকে না। এছাড়া শহরময় রিক্সা ও অটোরিক্সার দৌরাত্ম্য তো নিত্যদিনের। নগরীর এক অটোরিক্সাচালক জামাল উদ্দিন বলেন, প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তা দখল করে যাত্রী ওঠানোয় ব্যস্ত হয়ে পড়ে একের পর এক বাস। ফলে রেলগেট দিয়ে অন্য যানবাহন চলাচলই দায় হয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষও ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে পড়ে। ওদিকে রেলগেটের উত্তর দিকে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের প্রবেশদ্বারের চিত্র আরও ভয়ানক। স্থানীয় চা দোকানদার হোসেন আলী বলেন, দুই পাশে রাস্তার ওপর বাস দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানোর কারণে সব মসয় এ এলাকাটি যানজটে পরিণত হয়। শহরের মধ্যে এখন এ এলাকাটিতে সব সময় যানযট লেগেই থাকে। আবার মাঝেমধ্যেই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। কিন্তু এসব বাস টার্মিনালের বিরুদ্ধে কখনও কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। নগরীর তালাইমারীতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কজুড়ে শহরের প্রবেশপথে গড়ে তোলা অস্থায়ী বাসস্টপ। ফলে সেখানেও যানজট লেগেই আছে। ভদ্রা এবং শিরোইল বাস টার্মিনাল থেকে যাত্রী ওঠানোর পর এখানে এসে সব বাসই আবার দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠিয়ে থাকে তালাইমারীতে গিয়ে। এখানেও রাস্তার ওপর বাস দাঁড় করে রাখার কারণে অন্য যানবাহন চলাচলে যেমন সমস্যা হয়, তেমনি মাঝেমধ্যে ঘটে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এর আগে বেশ কয়েকবার এখানে প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটেছে। রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের আহ্বায়ক কামাল হোসেন রবি বলেন, ‘রাস্তা ছাড়া তো যাত্রী পাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়ে এসব রাস্তার পাশে অস্থায়ী টার্মিনাল করা হয়েছে। যাত্রীদের কথা বিবেচনা করেই এসব স্থানে কিছু সময়ের জন্য বাস দাঁড়িয়ে থাকে।’ রাজশাহী মহানগর ট্রাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনার ইফতে খায়ের আলম বলেন, আমরা সব সময় রাস্তার ওপর বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠাতে নিষেধ করি। কিন্তু বাস শ্রমিকরা তা কানে তোলে না। তাদের বিরুদ্ধে ইচ্ছা করলেও ব্যবস্থা নেয়া যায় না। ফলে মানুষের ভোগান্তি কিছুটা হচ্ছে। তার পরেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ওই কয়েকটি স্থানেই ট্রাফিক পুলিশ রাত-দিন নিয়োজিত থাকে বলে জানান তিনি।
×