ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংবিধানের প্রেক্ষাপট

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৯ আগস্ট ২০১৭

সংবিধানের প্রেক্ষাপট

সংবিধান হলো দেশ পরিচালনার দলিল। সেই দলিলে বর্ণিত বিধি মোতাবেক সরকার দেশ পরিচালনা করবে। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে মেহেরপুরের আমবাগানে অস্থায়ী, বিপ্লবী, বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হলে একটি সংবিধানের প্রয়োজন হয়। এমতাবস্থায় ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ, রাষ্ট্রপতি ‘গণপরিষদ আদেশ’ জারি করে। এটাই ছিল সংবিধান বা শাসনতন্ত্র প্রণয়নের প্রাথমিক পদক্ষেপ। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল দেশে অনুপস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট মন্ত্রিপরিষদ গঠন করা হয়। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুযায়ী তারা শপথ গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হলে এক পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হয়। এর পাঁচ দিন পর মুজিবনগরে অবস্থানকারী স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ ঢাকা আগমন করে। দেশের শাসনভার হাতে নেয়। রাষ্ট্রপতি, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডন ও ভারত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ফিরে আসেন। ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বলে, অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারি করে রাষ্ট্রপতি শাসন পদ্ধতি পরিবর্তন করে দেশে পার্লামেন্টারিজ শাসন প্রবর্তন করে। দেশে নতুন শাসনতন্ত্র বা সংবিধান, প্রণয়ন ও কার্যকরী না হওয়া পর্যন্ত, অস্থায়ী সংবিধান চালু থাকে। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর একটি সংবিধানের প্রয়োজন হলে ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ রাষ্ট্রপতি গণপরিষদ আদেশ জারি করেন। বলা হয়, তা সংবিধান প্রণয়নের প্রথম পদক্ষেপ। এই আদেশ সমস্ত বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য এবং ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে কার্যকর। এই আদেশ মতে ১৯৭০/৭১ সালে অনুষ্ঠিত দুই পরিষদের নির্বাচনে বিজয়ী এমএনএ, এমপিদের সমন্বয়ে গণপরিষদ গঠন করে ৩৪ সদস্য পূর্ণাঙ্গ সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান নিযুক্ত হন ড. কামাল হোসেন। ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল গণপরিষদের অধিবেশনে, উত্তরবঙ্গের শাহ আঃ হামিদ ও নোয়াখালীর মোহাম্মদউল্লাহ গণপরিষদের স্পীকার ও ডেপুটি স্পীকার মনোনীত হন। ১৯৭২ সালের ১১ এপ্রিল থেকে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণপরিষদ সংবিধান বা শাসনতন্ত্র প্রণয়নে সচেষ্ট হন। সংবিধান সম্পর্কে দেশের সকল মহলের কাছে প্রস্তাব আহ্বান করলে ৯৮টি প্রস্তাব বা সুপারিশ পাওয়া যায়। ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়ন কমিটি সংবিধানের প্রাথমিক খসড়া অনুমোদন করে। কমিটি সংবিধানকে পূর্ণাঙ্গ, আরও ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে কমিটির চেয়ারম্যান ড. কামাল হোসেন ভারত, লন্ডনসহ কয়েকটি দেশ সফর করে সেখানকার পার্লামেন্টের কার্যকারিতা প্রত্যক্ষ করে আসেন। শাসনতন্ত্র বা সংবিধানকে ত্রুটিমুক্ত ও নিখুঁত করার লক্ষ্যে কমিটি ব্রিটিশ ও বিভিন্ন দেশের সংবিধান বিশেষজ্ঞের সাহায্য ও পরামর্শ গ্রহণ করেন। সংবিধান প্রণয়ন কমিটি ৬ মাসের মধ্যে সংবিধানের খসড়া রচনা সম্পন্ন করে ১৯৭২ সালের অক্টোবরের মধ্যে সংবিধান বা শাসনতন্ত্রের চূড়ান্ত রূপ দান করে। সংবিধানের কপিতে সকলে স্বাক্ষর করলেও স্বাক্ষর করেননি তখনকার বিরোধী দলের একমাত্র সদস্য সুনামগঞ্জের সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর গণপরিষদের অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু বলেন, আমাদের সংবিধান শহীদদের রক্তে লিখিত। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে নতুন সংবিধান বা শাসনতন্ত্র গ্রহণ করার পর পূর্বের গণপরিষদ ভেঙ্গে দেয়া হয়। মুর্শেদ উদ্দিন বাদশা মিয়া চকবাজার, ঢাকা
×