ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যা ও ঈদ-উল-আযহা

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৯ আগস্ট ২০১৭

বন্যা ও ঈদ-উল-আযহা

সারাদেশে অবিরাম বর্ষণ, বানভাসি মানুষের চরম দুর্দশা এবং পাহাড়ী এলাকায় পাহাড়ধসের মতো মারাত্মক দুর্যোগ জনগোষ্ঠীকে যে ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তার থেকে সহসা পরিত্রাণ পাওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ঘনবর্ষা তার সঙ্গে বন্যার আশঙ্কা তো থেকেই যায়। তার ওপর নদ-নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় বর্তমান পরিস্থিতিকে যে মাত্রায় নিয়ে গেছে তার সব নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া বর্তাচ্ছে সাধারণ জনগোষ্ঠীর নিত্য জীবন প্রবাহে। প্রতিদিনের যাতায়াত ব্যবস্থা প্রচ- হুমকির মুখে। সেটা বিভাগীয় শহরের অভ্যন্তরীণ সড়কেই হোক কিংবা দূরপাল্লার মহাসড়কেÑযাত্রাপথেও চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। যানজট তো স্বাভাবিক নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। বরং সেটা না থাকলে পুরো ঢাকা শহর অজানা, অচেনা হয়ে যায়। উপর্যুপরি বর্ষণে রাস্তাঘাটের যে বেহাল অবস্থা সেখান থেকেও যাত্রী সাধারণের দুর্ভোগ আর যন্ত্রণার শেষ থাকে না। বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি, রাস্তাঘাটের মারাত্মক দুর্দশার সঙ্গে যুক্ত হয় আরও এক মহা আপদ-দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধি। সব মিলিয়ে আজ সাধারণ জনগোষ্ঠীর জীবন বিপন্ন, প্রাণ ওষ্ঠাগত। তার ওপর সামনে অপেক্ষমাণ ঈদ-উল-আযহা। এই উৎসবের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে থাকে কোরবানির জন্য গরু-ছাগলের নিয়মিত সরবরাহ। যা কিনা বন্যার মতো দুর্গত পরিস্থিতির শিকারে যেমন পড়ে, একইভাবে সড়ক-মহাসড়কের দুরবস্থার কবল থেকেও তার মুক্তি থাকে না। আর দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি তো কোরবানির হাট-বাজারকে নানামাত্রিকে নিয়ন্ত্রণ করে এ কথা বলাইবাহুল্য। সুতরাং সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষ যে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের বোঝা কাঁধে নিয়ে বোড়াচ্ছে তার শেষ কোথায় কেউ জানে না। দুই ঈদে রাজধানীসহ সারাদেশের বিভাগীয় শহরের মানুষগুলোর যে ঘরে ফেরার তাগিদ থাকে সে অবস্থাও নানা সঙ্কটের আবর্তে। প্রথমত টিকেট ক্রয়ের ঝক্কি ঝামেলা তো আছেই। তার ওপর পেছনের দরজা দিয়ে টিকেট বিক্রির যে হিড়িক পড়ে যায় সেখান থেকেও যাত্রীদের কোন নিস্তার থাকে না। অস্থিরতা আর অনিশ্চয়তার মধ্যে ঘরে না ফেরা পর্যন্ত কাটাতে হয়। যাত্রাপথের দুর্ভোগের কথা তো বলাইবাহুল্য। সংস্কারহীন রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থার সঙ্গে যুক্ত হয় চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর এক অদম্য প্রতিযোগিতা। যেখানে সব সময়ই দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যায়। এবার বন্যার কারণে যাত্রাপথের আরও ভোগান্তি আসতেই পারে। গরু-ছাগলের হাট-বাজারও এই বেহাল সড়ক ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত। কারণ তাদেরও মানুষের মতো যাত্রী হয়ে দেশের একস্থান হতে অন্য জায়গায় ঘুরে বেড়াতে হয়। সর্বশেষ ঠিকানা একটা থাকলেও যাত্রাপথই তাদের আসল গন্তব্য। আর এই ঈদ-উল আযহাকে সামনে রেখে নিত্য ভোগ্যপণ্যের যে মূল্যবৃদ্ধি তার সমস্ত প্রভাবই এসে পড়ে সাধারণ জনগোষ্ঠীর ঘাড়ে। পেঁয়াজ-রসুনের দাম প্রতিদিনই বাড়তে থাকে। সারাদেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে শাক-সবজি, ফলমূলের সরবরাহেও ঘটছে মারাত্মক বিপত্তি। পর্যাপ্ত সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে প্রচুর। যার আর্থিক ক্ষতির মূল্য দিতে হচ্ছে খেটে খাওয়া কৃষকদের। একদিকে প্রকৃতির রোষানল অন্যদিকে মানুষের সৃষ্ট নানা অনিয়ম আর অব্যবস্থার কবলে পড়তে হয় অসহায় জনসাধারণকে। প্রকৃতি যদি শান্ত না হয় তাহলে উদ্ভূত পরিস্থিতিকে সামাল দেয়া কঠিন হবে। অর্থাৎ বন্যা আর বৃষ্টি যদি স্বাভাবিক গতিতে নিয়ন্ত্রিত না হয়, তার ভোগান্তিও পোহাতে হবে মানুষকে। আবার নদীর বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়া, রাস্তাঘাটের সুষ্ঠু সংস্কার না করা, কিংবা দ্রব্যমূল্যকে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারা এসবের দায়ভাগ কিন্তু এসে পড়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ওপর। জানি না শেষ অবধি যেটুকু করা সম্ভব সেটুকু করা যায় কিনা, জনগণের স্বার্থে সেটাই এখন দেখার বিষয়। আয়তি নাহার উত্তরা, ঢাকা
×