ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আশ্চর্য ভ্রমণ!

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৯ আগস্ট ২০১৭

আশ্চর্য ভ্রমণ!

ভ্রমণে মেধা-মননের ঘাটতি পূরণ হয়ত হয়। নিজ অর্থে সফরে যাওয়ার চেয়ে রাজভা-ারের তহবিলের বরাদ্দ অর্থে বিদেশ বিভুঁইয়ে যাতায়াতে আনন্দ উপচে পড়ে নির্ঘাত। বিদেশে শপিংয়ের মধ্যে যে আভিজাত্য ফুটে ওঠে তাতে দেহ-মনে রোমাঞ্চ আনে। সফরের এই অর্থ যে দেশের জনগণের করের অর্থ, সেটা ঘুণাক্ষরেও মনে আসার কথা নয়। প্রশিক্ষণ, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, সম্মেলন ইত্যাকার হরেক কিসিমের কর্মসূচীতে যোগ দিতে সরকারী কর্মকর্তারা কখনই বিমুখ ছিলেন না, থাকতে চাইবেনই বা কেন? এক বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে দেখা যায়, তাকে বদলি করা হয়েছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিষয়ের বিপরীতে কোন দফতরে। তাতে কারও কোন আক্ষেপ নেই। ভ্রুক্ষেপও নয়। এসব প্রশিক্ষণ যে আদৌ কোন কাজে লাগানো হয় না বা কোন কাজে আসে না এটা প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নিতে বিদেশ যাওয়া কর্মকর্তা ভালই জানেন। কোর্সে অংশ নেয়ার চেয়ে কখনও ঘুরে বেড়ানো, কেনাকাটা করাকেই গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। সরকারী কোষাগারের অর্থের বাইরেও আমন্ত্রিত দেশ, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান অনেক ক্ষেত্রে ব্যয়ভার বহন করে। সেক্ষেত্রে দেশ থেকে নেয়া সরকারী অর্থ কেনাকাটার মোচ্ছবে ব্যবহৃত হয়ে যায়। কারও কারও আবার সফর ভাতা থেকে সঞ্চয় করার বাতিক রয়েছে। বর্তমানে বিদেশে রয়েছে ২০টি দল। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিনিধিরা কাজে-অকাজে এই সফরে ভীষণভাবে আগ্রহী কর্মকর্তা থেকে কর্মচারী পর্যন্ত। প্রভাবশালী কর্মকর্তা হিসেবে যারা বর্তমানে বিরাজমান, ঘন ঘন বিদেশ সফরে যাচ্ছেন। কেউ যাচ্ছেন দাতা সংস্থার সঙ্গে বৈঠকেও। কিন্তু তাদের এই সফরের কোন ফলাফল পাওয়া যাওয়ার খবর মেলে না। যে প্রশিক্ষণে যাদের যাওয়া দরকার, তাদের বাদ দিয়ে কর্মকর্তারা নিজেরাই প্রাসঙ্গিক না হলেও সফরে যাচ্ছেন। দেশে নির্দিষ্ট দায়িত্ব থাকলেও অধিক ভ্রমণকারীরা সেসব দায়িত্ব পালনে অনাগ্রহী। যথাযথ কর্মকর্তা বা বিশেষজ্ঞরা অনেক ক্ষেত্রে যাওয়ার অনুমতি পান, ফিরে এলে তারা প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান কাজেও লাগান। বিদ্যমান বিদেশ সফরের নীতিমালাটি অসম্পূর্ণ। স্পষ্ট কোন নির্দেশনা নেই তাতে। ফলে যথেচ্ছ বিদেশ সফর চলছে। আর ক্ষতি হচ্ছে আর্থিকভাবে যেমন, তেমনি সরকারী কাজকর্মেও বাড়ছে শিথিলতা। যৌক্তিক কারণ ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থাহীনতা সফরে যেতে উৎসাহিত করে তুলছে কর্মকর্তাদের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্য মনে করেন, দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলে অবশ্যই বিদেশ যেতে হবে। টিম পাঠাতে হবে গুরুত্ব বুঝে। বিদেশে গেলে দক্ষতা বাড়ে বলে উল্লেখ করে হতাশা প্রকাশ করেছেন যে, আমাদের কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের পর দক্ষতার প্রতিফলন কাজকর্মে তেমন দেখা যায় না। এমন উপলব্ধি দেশবাসীরও। এই যে একটি বাজে সংস্কৃতির বিস্তার ঘটেছে তার শিকড় উপড়ানো না গেলে অপচয় চলতেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রী বিষয়গুলো অনুধাবন করার পর এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটার অপেক্ষায় থাকতে হবে। বর্তমান সরকার অবশ্য বিদেশ সফর নীতিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। এটা আরও আগে নেয়া সঙ্গত ছিল। দেরিতে হলেও যে সংশোধন করা হচ্ছে, তাতে অনিয়ম দূরীভূত হয়ে একটি স্বচ্ছ কাঠামোর রূপ পাবে। লাগামহীন অবস্থাকে লাগামযুক্ত করে তাতে বিধিবিধান সংযুক্তি একটি দিকনির্দেশনা দেবে। বিদ্যমান বিধিমালার ত্রুটিগুলো সংশোধন করা অত্যাবশ্যকীয় হলেও উদ্যোগী নেই। ফলাফল শূন্য। এ অবস্থান থেকে উত্তরণ ঘটানো তাই জরুরী। ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের সফরে না পাঠিয়ে যোগ্য ও যথাযথদের পাঠানো উচিত কর্তৃপক্ষের। আইন সংশোধনী যেন না বাড়ায় জটিলতা। তবুও নীতি-নৈতিকতা, শৃঙ্খলতা বজায় রেখে নীতিমালা সংশোধিত হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়।
×