ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নব্য জেএমবি পুলিশেরই নামকরণ!

জঙ্গীরা তৎপর একযুগ ধরে॥ তথ্যের অপেক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

প্রকাশিত: ০৫:০০, ১৯ আগস্ট ২০১৭

জঙ্গীরা তৎপর একযুগ ধরে॥ তথ্যের অপেক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সারাদেশে জঙ্গীরা তৎপর রয়েছে ২০০৫ সালের আগস্ট থেকে প্রায় এক যুগ ধরে। সোর্সের তথ্যের অপেক্ষায় রয়েছে দেশে কার্যকর থাকা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে এ সকল বাহিনীর অগোচরেই প্রশিক্ষণ নিচ্ছে জঙ্গী সদস্যরা। আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বা আনসারুল্লাহ ইসলামী দল ও জেএমবি সক্রিয় থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর এবার তৎপর থাকা জঙ্গী সংগঠনের নামকরণ করা হয়েছে নব্য জেএমবি। অভিযোগ রয়েছে, এ নব্য জেএমবি পুলিশেরই নামকরণ। আরও অভিযোগ রয়েছে, আকস্মিকভাবে একটি ঘটনা ঘটার পর কয়েকদিন নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। সোর্সের তথ্যের ভিত্তিতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় পুলিশ, র‌্যাব, ডিবি, সিআইডি, পিবিআই, কাউন্টার টেররিজম ইউনিটসহ সোয়াট টিম। এরপর আবারও প্রশাসনের ঢিলেঢালা অবস্থায় গোয়েন্দা সংস্থার অগোচরেই কার্যক্রম চালাচ্ছে জঙ্গীরা। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত জঙ্গীদের তৎপরতা বন্ধ করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশব্যাপী নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সচেষ্ট থাকার কথা বললেও জঙ্গী আক্রমণের পরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা তৎপরতা বেড়ে যায়। অথচ দেশব্যাপী অপতৎপরতা চালাতে জঙ্গীরা জনগণকে জানান দিতে নাশকতার লিফলেট বিতরণ অব্যাহত রেখেছে। চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত জঙ্গীদের সন্ধান মিলেছে এমন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর মধ্যে সীতাকু-, মীরসরাই, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা। তবে এসব এলাকায় র‌্যাবের ফোন নাম্বারও দেয়া হয়েছে জঙ্গীদের সন্ধানে। র‌্যাবের ইন্টেলিজেন্স টিম এ বিষয়ে সক্রিয় থাকলেও সীতাকু-ে আবাসিক ভবনে জঙ্গীর অবস্থান নিশ্চিত করেছে বাড়ির মালিক নিজেই। অভিযোগ উঠেছে সাধন কুটিরের মালিক শুভাশিষ দম্পতি ও স্বপ্ননীড়ের বাসিন্দাদের কয়েকদিনের জন্য পুলিশ নিরাপত্তা জোরদার করলেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বসবাসকারীরা। ২০১৫ সালে হাটহাজারীর এক মাদ্রাসায় অভিযানের পর র‌্যাবের এক তথ্যে প্রকাশ পেয়েছে, জঙ্গীদের চানচুয়ান, দাউসু, গুনসু, জিয়ানসু, জিয়াংসু, নানসুয়ান, নান্দাও, নানগুন, তাইসিসুয়ান, তাইসি জিয়ান ও চানসা নামক ভাষা ও বিভিন্ন ইভেন্টের ওপর প্রশিক্ষণ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হওয়াদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল একে-৪৭ রাইফেল প্রশিক্ষণের ভিডিও চিত্র, সিরিয়ায় আইএসআই-এর জঙ্গী প্রশিক্ষণ, আল নুসরা ট্রেনিং ভিডিও, আল কায়েদার ট্রেনিং ভিডিও, হামাস ও হিজবুল্লাহ গেরিলার ট্রেনিং ভিডিও, আনসার উল্লাহ বাংলা টিমের প্রশিক্ষণ ভিডিও। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় থাকা এসএসএফের ট্রেনিং ভিডিও ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের ভিডিও চিত্র পাওয়া গেছে তাদের কাছ থেকে। এছাড়াও গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন উড়োজাহাজ হাইজ্যাক করার ভিডিও, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিসহ দেশের উচ্চ পর্যায়ের মানুষদের অপহরণ ও নির্যাতনের ভিডিও চিত্র, ওসামা বিন লাদেন এবং আইমান আল জাওয়াহিরির বক্তব্য ও সাক্ষাতকার। আফগান যুদ্ধসহ বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলার দৃশ্য ভিডিও আকারে দেখিয়ে জঙ্গী প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এমন তথ্য র‌্যাবের এক অভিযানের। তবে সীতাকু-ের জঙ্গীরা এমন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কিনা তাও মানুষের অজ্ঞাত রয়ে গেল সুইসাইডের কারণে। দেশব্যাপী বিশাল নেটওয়ার্ক হাতে নিয়ে জঙ্গীরা মাঠে কাজ করলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বহীনতার কারণে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও পালানো জঙ্গীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গী হামলার নীলনক্সা তৈরি করেছে কিনা তা খতিয়ে দেখার তথ্য জানাতে পারছে না বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও তদন্তকারী সংস্থাগুলো। চরম দায়িত্বহীনতার মধ্যে তদন্ত সংস্থাগুলো কাজ করায় জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।
×