ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জনপ্রতি ত্রাণ মাত্র ১ কেজি চাল ও তিন টাকা!

দিনাজপুরে বন্যায় পৌনে ৬ লাখ গবাদিপশু হুমকির মুখে

প্রকাশিত: ০১:১৬, ১৮ আগস্ট ২০১৭

দিনাজপুরে বন্যায় পৌনে ৬ লাখ গবাদিপশু হুমকির মুখে

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ দিনাজপুরে ভয়াবহ বন্যায় ১৩ উপজেলায় ৫ লাখ ৮৬ হাজার ১৩টি গবাদিপশু হুমকির মুখে পড়েছে। এর মধ্যে ৩ লাখ ৭২ হাজার ৫০৫টি গরু, ১০৭টি মহিষ, ২ লাখ ১ হাজার ৯৩১টি ছাগল এবং ১১ হাজার ৪৭০টি ভেড়া রয়েছে। সংকট দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের। অপরদিকে দিনাজপুরে বন্যা পরিস্থিতি’র উন্নতি হলেও বেড়েছে বানভাসী মানুষের দুর্ভোগ। গৃহহীন বানভাসী মানুষ এখন বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকটে ভুগছে। সরকারি হিসেবে অনুযায়ী প্রায় পৌনে ৫ লাখ মানুষ গৃহহীন হলেও বরাদ্দ এসেছে ৪’শ ৮৫ মেট্রিক টন চাল ও ১৬ লাখ টাকা। এতে জনপ্রতি ভাগ্যে জুটছে ১ কেজি করে চাল ও ৩ টাকা। সরকারী হিসাব মতে, বন্যায় গো-খাদ্যের ৩৪৭ একর জমির কাঁচা ঘাস ও ১ হাজার ৬৬৬ মেট্রিক টন খড় বিনষ্ট হয়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী দিনাজপুর জেলায় ১৫ লাখ গরু, দুই হাজার ৮২৭টি মহিষ, ৯ লাখ ৩৩ হাজার ছাগল ও ১ লাখ ৩৩ হাজার ভেড়া হুমকির মুখে রয়েছে। দিনাজপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, বাজারে গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্দি পেয়েছে। বন্যার ফলে পশুখাদ্য সংকটের বিষয়টি প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালককে জানানো হয়েছে। পশুখাদ্য সংকট মোকাবেলায় আর্থিক বরাদ্দ চেয়ে বুধবার সকালে প্রাণিসম্পদ অধিদফরের মহাপরিচালক বরাবরে ফ্যাক্সবার্তা পাঠানো হয়েছে। খড় ব্যবসায়ী আবু হেনা জানান, শুকনা খড় কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া গেলেও দাম অনেক বেশি। খড় বর্তমানে ৪শ টাকা পোন বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে ভেঙে যাওয়ায় গো-খাদ্য বহন করার পরিবহন পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে দিনাজপুরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বেড়েছে বানভাসী মানুষের দুর্ভোগ। গৃহহীন বানভাসী মানুষ এখন বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকটে ভুগছে। সরকারি হিসেবে অনুযায়ী প্রায় পৌনে ৫ লাখ মানুষ গৃহহীন হলেও বরাদ্দ এসেছে ৪’শ ৮৫ মেট্রিক টন চাল ও ১৬ লাখ টাকা। এতে জনপ্রতি ভাগ্যে জুটছে ১ কেজি করে চাল ও ৩ টাকা। দিনাজপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান জানিয়েছেন, বন্যা দুর্গত এসব মানুষের মধ্যে ইতিমধ্যেই ৪৮৫ মেট্রিক টন চাল ও ১৬ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় ১৫ লাখ টাকা, ২’শ মেট্রিক টন চাল এবং সাড়ে ৩ হাজার প্যাকেট (চিড়া, গুড়, মুড়ি, বিস্কুট) শুকনো খাবার বন্যাদুর্গত এলাকায় বিতরণ করেছেন। দিন-রাত বন্যার্তদের সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন তিনি ও তার কর্মী বাহিনী। পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিয়েছে বানভাসী মনুষের। এজন্য স্থানীয় প্রশাসন ১‘শ ২৫টি স্বাস্থ্য ক্যাম্প খুলেছে। জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি’র ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় আরো ১‘শ ২০টি চিকিৎসা টিম মাঠে নামিয়েছেন। পানি বিশুদ্ধকরণ টেবলেট, খাবার সেলাইনসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করছে বন্যা দুর্গতদের। এছাড়াও সেনাবাহিনী এবং বিজিবিও চালিয়ে যাচ্ছে বানভাসী মানুষে বিনামূল্যে চিকিৎসা। বানভাসী মানুষের আশ্রয়ে দিনাজপুরের ২‘শ ৬৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১’শ ৬৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। দিনাজপুরের অধিকাংশ সড়ক ও মহাসড়ক পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ায় সেসব সড়ক ও মহাসড়কের অধিকাংশ স্থান ভেঙে গেছে। এতে দিনাজপুর জেলার সঙ্গে বিভিন্ন উপজেলাসহ ঢাকার সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। রেল লাইন ডুবে যাওয়ায় ৬ দিন ধরে বিচ্ছিন্ন রয়েছে পাবর্তীপুর-পঞ্চগড় রেল যোগাযোগ।
×