ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সূর্যিমামার রথে

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ১৮ আগস্ট ২০১৭

সূর্যিমামার রথে

সূর্যরৌদ্রে নিজেকে পুড়িয়ে চিনে নিতে হয় এই পৃথিবীকে তার বাসিন্দাদের। শিশুদের ‘রবিমামা/দেয় হানা। ওঠে রোজ সকালে’ কী মিষ্টি মধুর রোদ ছড়ায়। এই রোদে আবার শিশুদের জন্যও ভিটামিন ‘ডি’-এর কাজ করে। শিশুদের সূর্যিমামার রথে চড়ে পৃথিবী ঘুরে আসে তার চারধারে প্রতি চব্বিশ ঘণ্টায়। গঠনে প্রায় নিখুঁত গোলকের মতো, কিন্তু উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর দিকে কমলা লেবুর মতো একটু চাপা। আয়নিত গ্যাস তথা প্লাজমা দিয়ে গঠিত বলেই সূর্য বিষুবীয় অঞ্চলে মেরু অঞ্চলের চেয়ে বেশি বেগে ঘোরে। এর কারণ, সূর্যের মধ্যকার পরিচলন এবং কেন্দ্রের চেয়ে পৃষ্ঠের দিকে তাপমাত্রার ঢাল বেশি বাঁকা হওয়ায় ভরের স্থানান্তর। সূর্যের নিজ কক্ষের চারদিকে আবর্তন বেগ খুবই কম। এই ঘূর্ণন বেগ থেকে যে কেন্দ্রাতিগ বলের সৃষ্টি হয় তা সূর্যের পৃষ্ঠ অভিকর্ষের তা সূর্যের অভিকর্ষের তুলনায় ১৮০ লাখ ভাগের এক ভাগ। সূর্যে ভারি মৌলিক পদার্থের পরিমাণ বেশি। পার্থিব গৃহগুলোর মতো সূর্যের কোন নির্দিষ্ট পৃষ্ঠসীমা নেই। এর গ্যাসের ঘনত্ব ব্যাসার্ধ্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সূচকীয় হারে হ্রাস পায়। তথাপি এর প্রায় সৃনির্দিষ্ট একটি অভ্যন্তরীণ গঠন রয়েছে। সূর্যের ব্যাসার্ধ্য নির্ণয়কারী কেন্দ্র আলোকম-লের শেষ প্রান্ত, যা সূর্যের এমন একটি অঞ্চল; যার বাইরে গ্যাস এত পাতলা হয়ে যায়। ফলে, উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিকিরণ নিঃসরণ করতে পারে না। এ জন্যই দৃশ্যমান আলোয় সাধারণত সূর্যের আলোকম-লী দেখল পৃথিবীবাসী। পৃথিবীর ওপর সূর্যের বিশাল প্রভাব সেই প্রাগৈতিহাসিককাল থেকেই মানুষ অনুধাবন করে আসছে। অনেক সংস্কৃতিতে সূর্যকে দেবতা মনে করা হতো। সূর্য পূজা হতো বেশ জাঁকজমকের সঙ্গেই। তবে সূর্যের প্রকৃত কাঠামো সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক ধারণা গড়ে ওঠতে অনেক সময় লেগেছে। উনিশ শতকেও বিজ্ঞানীরা সূর্যের গাঠনিক উপাদান এবং শক্তির উৎস সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতেন না। এখনও সূর্য নিয়ে গবেষণা চলছে। কারণ তার কিছু ব্যবহার এখনও পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা যায়নি। পৃথিবীর কক্ষপথ উপবৃত্তাকার বলেই সূর্য থেকে তার দূরত্ব পরিবর্তিত হয়। তাই জানুয়ারি মাসে সূর্যের সবচেয়ে কাছে আসে। আর জুলাইয়ে সবচেয়ে দূরে যায়। গড় দূরত্বে সূর্য থেকে আলো পৃথিবীতে আসতে সময় নেয় আট মিনিট উনিশ সেকেন্ড। এই সূর্যালোকের শক্তি পৃথিবীর প্রায় সকল জীবকে বাঁচিয়ে রাখে। এই আলো থেকে উদ্ভিদ খাদ্য উৎপাদন করে। প্রাণীরা এই উদ্ভিদ বা অন্য প্রাণীর ওপর নির্ভর করে খাদ্যের জন্য। ধারণা করা হয় সূর্যের বয়স চার শ’ ষাট কোটি বছর। সূর্য পৃথিবী পৃষ্ঠতলের সকল শক্তির মূল উৎস সৃষ্টিকাল থেকেই। সেই সূর্য জয়ের অভিলাষ জেগেছে বিজ্ঞানীদের। তাদের মনে জাগা কত কি রহস্য আর সুলুক সন্ধান করার বাসনা নিয়ে এবার সূর্য স্পর্শ করতে যাচ্ছে নাসা। শিশুদের সূর্যিমামা সম্পর্কে তারা তত্ত্ব তালাশ করতে যাচ্ছে। চাঁদ ও মঙ্গলে অভিযান শেষে এবার সূর্যের রহস্য ভেদ হতে যাচ্ছে। সূর্যের অভিমুখে নাসার অভিযান শুরু হচ্ছে। সৌর অনুসন্ধান যানটি ২০১৮ সালের একত্রিশে জুলাই যাত্রা শুরু করবে। এক নবেম্বর এটি বুধের কক্ষপথ পেরিয়ে ভেতরে ঢুকে যাবে। এরপর এটি সূর্যের সবচেয়ে কাছে সেই কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে ২০২৪ সালের উনিশ ডিসেম্বর। উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার আওতায় নাসার পারকার সোলার প্রোব মিশনটির এই অভিযান মানব ইতিহাসে সূর্যের বায়ুম-লে এই প্রথম সরাসরি অভিযান। যানটি সূর্যের চল্লিশ লাখ মাইলের মধ্যে একটি কক্ষপথ পরিভ্রমণ, সূর্যের বাইরের পৃষ্ঠের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে। এ সময় যানটি চৌদ্দ শ’ ডিগ্রী তাপমাত্রার মধ্যে অবস্থান করবে। একটি নক্ষত্রের জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও আবহাওয়ার তথ্য সংগ্রহ করাসহ বিজ্ঞানীদের সৌর অগ্নিতরঙ্গ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করতে সাহায্য করাই এ অভিযানের মূল লক্ষ্য। সূর্য মূলত অগ্নিকু-। তার অতিরিক্ত তাপমাত্রার হাত থেকে যানকে সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মাথার ওপর জ্বলজ্বল দিনমণির আলোয় আলোকিত বিশ্ববাসী এক নতুন জগতের সন্ধান পেতে যাচ্ছে। এই অভিযান সফল হোক বিশ্ববাসী তাই কামনা করে।
×