ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শ্রদ্ধা ভালবাসায় স্মরণ করা হলো শামসুর রাহমানকে

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৮ আগস্ট ২০১৭

শ্রদ্ধা ভালবাসায় স্মরণ করা হলো শামসুর রাহমানকে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বাধীনতা তুমি/রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান/স্বাধীনতা তুমি/কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো/মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা/স্বাধীনতা তুমি/শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা/স্বাধীনতা তুমি/পতাকাশোভিত সেøাগানমুখর ঝাঁঝালো মিছিলÑকবিতার শব্দমালায় এভাবেই পরাধীনতার শৃঙ্খল পেরিয়ে বাঙালীর স্বাধীনতা চেয়েছিলেন কবি শামসুর রাহমান। সারাটি জীবন অসাম্প্রদায়িকতা, গণতন্ত্র ও গণমানুষের কথা এবং স্বৈরশাসনের প্রতিবাদ করেছেন কাব্যের ছন্দে। কবিতায় সমকালীনতা ধারণকারী অনন্য প্রতিভায় উজ্জ্বল এই নাগরিক কবি ছিলেন বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। কাব্য রচনায় সৃষ্টি ও মননের দ্যুতিময় উপস্থাপনা তাকে দিয়েছে কবিতার বরপুত্রের উপাধি। বৃহস্পতিবার ছিল দেশ, মাটি ও মানুষের কথা বলা এ কবির একাদশ মৃত্যুবার্ষিকী। কবির প্রয়াণবার্ষিকীর খবরটি প্রতিটি পত্রিকার পাতায় গুরুত্বসহকারে ছাপা হয়েছে। এছাড়াও এই নাগরিক কবিকে পারিবারিক ও সাংগঠনিকভাবে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। আনুষ্ঠানিক কোন আয়োজন না থাকলেও সকালেই কবিকে স্মরণ করতে অনেকেই ছুটে যান বনানী কবরস্থানে। কবির কবরের সামনে দাঁড়িয়ে তার প্রতি জানানো হয় শ্রদ্ধাঞ্জলি। কবির কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় বিভিন্ন সংগঠন। শরতের সকালে পরিবারের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান কবির ভ্রাতুষ্পুত্র ব্যারিস্টার তৌফিকুর রাহমান চৌধুরী। সভাপতি ড. মুহাম্মদ সামাদ ও সাধারণ সম্পাদক তারিক সুজাতের নেতৃত্বে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় জাতীয় কবিতা পরিষদ। সম্পাদক মুহাম্মদ সামাদের নেতৃত্বে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করে শামসুর রাহমান স্মৃতি পরিষদ। কবির সমাধিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করেছে কবি শামসুর রাহমান ফাউন্ডেশন। শ্রদ্ধা জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংগঠন। ব্যক্তিগত পর্যায়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান জাতীয় কবিতা পরিষদের সাবেক সভাপতি কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক প্রমুখ। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে পালন করা হয় এক মিনিটের নীরবতা। এরপর কবির আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়া করা হয়। কবির প্রয়াণবার্ষিকীতে কবি ড. মুহাম্মদ সামাদ জনকণ্ঠকে বলেন, বাঙালীর দীর্ঘ ৫০ বছরের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক মানস গঠনে শামসুর রাহমানের ভূমিকা ছিল অনন্য। তিনি একদিকে যেমন প্রেম ও সুন্দরের কবি ছিলেন, অন্যদিকে স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িকতার পক্ষের পুরোধা পুরুষ। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে তার কবিতা ও ভূমিকা দ্বারা আমরা অনুপ্রাণিত হই। অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে আজও তিনি প্রেরণার উৎস হয়ে আছেন। ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন সমকালীন বাংলা কবিতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি শামসুর রাহমান। ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর তিলোত্তমা শহর ঢাকার মাহুতটুলিতে জন্মেছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার নাগরিক কবি শামসুর রাহমান। ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট তিনি পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। জন্ম ও মৃত্যুর মধ্যবর্তী ৭৭ বছরের বর্ণময় জীবনের বড় অংশজুড়েই নিমগ্ন থেকেছেন কবিতা সৃজনের মোহ ও অনুরাগে। পুরনো ঢাকায় বেড়ে ওঠায় নগর জীবনের নানা অনুষঙ্গ ও প্রকরণ উদ্ভাসিত হয়েছে এ নাগরিক কবিতার কবিতায়। শিল্পী মুর্তজা বশীরের জন্মদিন পালন আমাদের দেশের অনেক শিল্পীর মতো তার মধ্যেও একটা দোলাচল আছে। নিজের ছবিতে তিনি কী ফুটিয়ে তুলবেন স্থানকালে বিশিষ্টতা না আন্তর্জাতিক শিল্পধারার আধুনিক উদ্ভাবনের সংলগ্নতা। তিনি দেশীয় রীতিতে ঝুঁকেছেন, তবে এখানেই স্থিত থাকেননি। শিল্পীমাত্রেরই মনোজগতের রূপ ও রং বদলায়, বশীরের ক্ষেত্রেও তা ঘটেছে। ব্যক্তি বশীর সম্পর্কে যা বলেছি, তা থেকে তাকে আত্মসচেতন মনে হবে। এ আত্মসচেতনতার মূলে আছে আত্মপ্রত্যয়। সে আত্মপ্রত্যয় না থাকলে তিনি আজ যেখানে এসে পৌঁছেছেন, সেখানে পৌঁছতে পারতেন না। বৃহস্পতিবার বিকেলে এশিয়াটিক সোসাইটি আয়োজিত ‘মুর্তজা বশীর : মানুষ ও শিল্পী’ শীর্ষক আমিনা বশীর স্মারক বক্তৃতায় প্রফেসর ইমেরিটাস আনিসুজ্জামান এসব কথা বলেন। এদিন দেশবরেণ্য এ শিল্পীর ৮৫তম জন্মবার্ষিকী ও ৮৬তম জন্মদিন উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে অতিথিদের সঙ্গে কেক কেটে আপন জন্মদিন উদ্্যাপন করেন মুর্তজা বশীর। সংক্ষিপ্ত কথনে প্রকাশ করেন আপন অনুভূতি। খ্যাতিমান চিত্রশিল্পীর পাশাপাশি বহুমাত্রিক পরিচয়ের এক ব্যক্তিত্ব মুর্তজা। ছবি আঁকার পাশাপাশি লিখেছেন পাঠক সমাদৃত গল্প ও উপন্যাস। প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছেন বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে। আর মুর্তজা বশীরের সঙ্গে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের বন্ধুত্বের সম্পর্কটি দীর্ঘ ৬৭ বছরের। সেই দীর্ঘ সময়ে কাছ থেকে দেখা এ বিখ্যাত চিত্রশিল্পীকে মূল্যায়ন করলেন স্মারক বক্তৃতায়। রাজধানীর নিমতলীর এশিয়াটিক সোসাইটি মিলনায়তনে দেয়া ওই বক্তৃতায় উঠে এলো শিল্পীর শিল্পিত জীবনের কথা, সাহিত্য জীবনের কথা, সংসার জীবন, তথ্য মুদ্রা সংগ্রহের কথা, রাজনৈতিক দর্শনসহ নানা ভাবনা। এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেনÑ এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি আমিরুল ইসলাম চৌধুরী, সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ড. সাব্বির আহমেদ। বক্তব্য রাখেন শিল্পী মুর্তজা বশীর ও তার মেয়ে মুনিজা বশীর। আলোচনা শেষে সবাই মিলে কেক কেটে জন্মদিন উদ্যাপন করেন। স্মারক বক্তৃতায় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ১৯৬৭ সাল থেকে মুর্তজা বশীর মহিলাদের যেসব ছবি এঁকেছেন, তা ছিল কেবল বিক্রির জন্য। রমণীদের ছবি এঁকে তিনি কখনই তৃপ্তি পাননি। তবুও যে মেয়েদের ছবি এঁকেছেন, তা অবচেতন মনে জৈবিক আকাক্সক্ষাজনিত। কিন্তু অতৃপ্তি? সে কি শিল্পীমাত্রই যে-অতৃপ্তিবোধ ক্রমাগত তাদের সৃজনশীলতাকে উস্কে দেয়। শিল্পীর চিত্রপটে রঙের বৈভব প্রসঙ্গে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, মুর্তজা বশীরের ক্যানভাসে বর্ণের বহুলতা চোখে পড়ার মতো। রং দিয়েই সৃষ্টি করা হয়েছে ছবির অন্তর্নিহিত আকার, রঙের নিপুণ ব্যবহার এবং কর্মের বৈচিত্র্য। এখানে আধা-বিমূর্ততার ভাব এক ধরনের সম্মোহন সৃষ্টি করে।
×