ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্লগার হত্যাকারী চিহ্নিত ও গ্রেফতারে বাংলাদেশে অগ্রগতি

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৮ আগস্ট ২০১৭

ব্লগার হত্যাকারী চিহ্নিত ও গ্রেফতারে বাংলাদেশে অগ্রগতি

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ধর্মীয় সহিংসতা ও হয়রানির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে নিন্দা জানাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানোর সুপারিশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক কমিশন। এছাড়া ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগার হত্যাকারীদের চিহ্নিত ও গ্রেফতারে বাংলাদেশ সরকার অগ্রগতি করতে পেরেছে বলেও উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদন বুধবার প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৬-১৭ সালের এ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ব্লগার হত্যাকারীদের ধরতে বাংলাদেশ সরকার অনেকদূর এগিয়েছে। প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় আনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাসহ এ ধরনের বেশকিছু ঘটনার দায়ভার স্বীকার করেছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো। ধর্মান্তরিত ও শিয়াদের ওপরও হামলা চালিয়েছে তারা। হিন্দু, খ্রীস্টান ও বৌদ্ধগোষ্ঠীর ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাও ঘটেছে। গত বছরের পহেলা জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার কথাও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। ওই হামলায় দুই পুলিশসহ ২৪ জন নিহত হন। ওই হামলার দায় স্বীকার করেছিল একটি জঙ্গীগোষ্ঠী। এছাড়া গত বছরের ৬ এপ্রিল আল কায়েদাসংশ্লিষ্ট এক গ্রুপের হামলায় একজন ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগার নিহত হন বলেও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, হিন্দু ও খ্রীস্টানদের মতো সংখ্যালঘুদের অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে তারা ঘর ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। জমির মালিকানা নিয়েও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তারা। ধর্মীয় সংগঠনগুলোর মতে, নতুন রাস্তা ও ভবন নির্মাণ শুরু হলেই এমন বৈষম্য ও বিরোধের মুখে পড়েন তারা। ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও অন্য দূতাবাসের প্রতিনিধিরা ধর্মের নামে এমন সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানান। একই সঙ্গে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ারও আহ্বান জানানো হয়। প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে। এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে সন্ত্রাস মোকাবেলা কৌশল উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারকে উৎসাহ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করা। ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টি করে এমন বক্তব্য এবং ধর্মীয় কারণে সহিংসতা ও হয়রানির প্রকাশ্যে নিন্দা জানাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারী কর্মকর্তাদের আহ্বান জানানো। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মান এবং ধর্মীয় সহিংসতার তদন্ত ও বিচার বিষয়ে স্থানীয় সরকার কর্মকর্তা, পুলিশ ও বিচারকদের প্রশিক্ষণ দিতে বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা প্রদান করা। সংখ্যালঘুদের ভূমি দখলের অভিযোগ তদন্ত করতে বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানানো। মিয়ানমারে নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিরাপদ আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশ সরকারকে উৎসাহ প্রদান করা। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ধর্মীয় স্বাধীনতা মূল্যায়নের পর এ বিষয়ে বলা হয়, গত বছর বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগার, বুদ্ধিজীবী ও বিদেশীদের ওপর অভ্যন্তরীণ ও আন্তঃদেশীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর সহিংস ও প্রাণঘাতী হামলার মাত্রা বেড়েছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার এসব হামলার তদন্ত, হোতাদের গ্রেফতার ও বিচার এবং হামলার শিকার হতে পারে এমন ব্যক্তিদের নিরাপত্তার উদ্যোগ নিলেও সব ধর্মানুসারী বাংলাদেশী নাগরিকের মধ্যেই ভয় বেড়েছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মধ্যে বিশেষভাবে সনাতন ও খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বীরা ভূমি দখল ও মালিকানা বিরোধের শিকার। এটি এখনও অব্যাহত আছে। এছাড়া সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়া এবং রোহিঙ্গা পরিস্থিতিকেও উদ্বেগের কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক দৃশ্যপট মূলত আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে বিভক্ত। ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে ৬৪টি জেলার মধ্যে ১৬টিতে সহিংসতা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি হামলা হয়েছে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে। এসব হামলার জন্য বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগুলোকে দায়ী করা হয়। উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক কমিশন প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এ প্রতিবেদন তৈরির জন্য কমিশনের প্রতিনিধি দল বিভিন্ন দেশ সফরও করে। ধর্মীয় স্বাধীনতা পর্যবেক্ষণের জন্য গত বছরের মার্চ মাসে একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরেও এসেছিল।
×