ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে জনমনে আতঙ্ক

সর্বহারা পার্টির নামে চাঁদা দাবি, ২০ জনকে প্রাণনাশের হুমকি

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৮ আগস্ট ২০১৭

সর্বহারা পার্টির নামে চাঁদা দাবি, ২০ জনকে প্রাণনাশের হুমকি

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ শিক্ষক, চাকরিজীবী, ঠিকাদার, ব্যবসায়ীসহ ২০জনের কাছে সর্বহারা পার্টির পরিচয়ে চাঁদা চেয়ে হুমকি দেয়া হয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার নলতা এলাকায় মোবাইল ফোনে এ হুমকি দেয়া হয়। সর্বহারা পরিচয়ে জীবননাশের হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবির ঘটনায় এলাকায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকে হুমকির ভয়ে ইতোমধ্যে বিকাশ নম্বরে টাকাও পরিশোধ করেছেন। এ বিষয়ে একাধিক ব্যক্তি কালীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়রি করেছেন। কালীগঞ্জ উপজেলার নলতা ইউনিয়নের সোনাটিকারী গ্রামের সিরাজুল হকের ছেলে নলতা বাজারের বস্ত্র ব্যবসায়ী মাহাবুবল হক (৫৫) জানান, বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ০১৮৫৫-৪৮৫৭৮০ নম্বর থেকে পরপর তিনবার তার নম্বরে ফোন করা হয়। এ সময় এক ব্যক্তি নিজেকে সর্বহারা পার্টির সদস্য পরিচয়ে তার কাছে দু’লাখ টাকা চায়। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। এমনকি তাকে জীবননাশের হুমকি দেয়া হয়। একই নম্বর থেকে তার কাছে দুপুর আড়াইটার দিকে আবারও টাকা চাওয়া হয়। তিনি আবারও দিতে অপরাগতা প্রকাশ করায় তিনি কত দিতে পারবেন এটা জানতে চাওয়া হয়। একপর্যায়ে রাতে বাড়ি থাকলে তার ব্যবস্থা করা হবে বলে হুমকি দিয়ে মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। বাধ্য হয়ে তিনি বিষয়টি স্থানীয় বাজার ব্যবসায়ী, আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সংসদ সদস্য ডাক্তার আফম রুহুল হককে অবহিত করেন এবং তাদের পরামর্শ মতো বুধবার বিকেলে কালীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তবে ডায়েরি করার সময় চাঁদার পরিমাণ ও সর্বহারা পার্টির নাম উল্লেখ না করার পরামর্শ দেন কর্তব্যরত অফিসার উপপরিদর্শক আব্দুল জলিল। নলতা শরীফের ইব্রাহীম হোসেনের ছেলে বস্ত্র ব্যবসায়ী হাবিবুল্লাহ(৩৫) জানান, বুধবার সকাল ১০টায় তার কাছে সর্বহারা পার্টির সদস্য শ্যামল পরিচয়ে ০১৮৫৫-৪৮৫৭৮০ নম্বর মোবাইল থেকে ছয় লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। সন্ধ্যার মধ্যে চাঁদার টাকা না দিলে জীবননাশের হুমকি দেয়া হয়। দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় রাতে বাড়িতে তার লাশ সকলে দেখতে পাবে বলে হুমকি দিয়ে মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ ঘটনায় তিনি বুধবার কালীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। নলতা বাজারের সামছুর রহমানের ছেলে ব্যবসায়ী মাহাবুবর রহমান জানান, বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তার কাছে ০১৮৫৫-৪৮৫৭৮০ নম্বর মোবাইল ফোন থেকে সর্বহারা পার্টির সদস্য আবুল হোসেন পরিচয়ে তিন লাখ টাকা চাঁদা চাওয়া হয়। দুপুরের মধ্যে বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠিয়ে না দিলে হত্যা করে লাশ বাড়ির পাশে ফেলে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। বিষয়টি তিনি স্থানীয় নলতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনিছুজ্জামান খোকন ও সাবেক মন্ত্রী সংসদ সদস্যকে অবহিত করে বুধবার বিকেলে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। এরপরও তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কে রয়েছেন। নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হাবিবুর রহমান জানান, গত সোমবার সকাল ১০টা ২৯ মিনিটে সর্বহারা পার্টির সদস্য শ্যামল পরিচয়ে দু’লাখ টাকা চাঁদা চাওয়া হয়। টাকা চাওয়ায় উল্টো হুমকি দেয়ায় তাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়া হয়। এমনকি হত্যা করে লাশ গুম করে দেয়ার কথা বলা হয়। তবে তিনি বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানিয়ে রাখলেও থানায় কোন সাধারণ ডায়েরি করেননি। শুইলপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রেজাউল ইসলাম জানান, গত সোমবার বিকেল তিনটার সময় তার কাছে ০১৮৫৫-৪৮৫৭৮০ নম্বর মোবাইল ফোন থেকে শ্যামল পরিচয়ে সর্বহারা পাটির নামে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা চাওয়া হয়। তিনি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় তাদের দেয়া একটি বিকাশ নম্বরে ১২ হাজার টাকা দেন। এরপরও তার কাছে আবারও চাঁদা চেয়ে টাকা চাওয়া হচ্ছে। নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পরিতোষ চক্রবর্তী ও কর্মচারী আহছান রাজীব জানান, গত শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ০১৯৯৫-৭৬৯২৬৯ মোবাইল ও ০১৮৫৫-৪৮৫৭৮০ নম্বর মোবাইল ফোন থেকে কখনও শ্যামল আবার কখনও আবুল হোসেন পরিচয়ে সর্বহারা পার্টির পক্ষে তিন লাখ টাকা করে চাঁদা দাবি করা হয়। বিকেলের মধ্যে চাঁদা না দিলে জান খালাস করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। তবে তারা বিকাশে টাকা দিয়েছেন এমন খবরের সত্যতা জানতে চাইলে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। যদিও তারা বিকাশে ৭০ হাজার টাকা দিয়েছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ ছাড়া একইভাবে নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ধর্ম বিষয়ক শিক্ষক মাওলানা আব্দুল মোমিনের কাছে বুধবার সকাল ১০টার দিকে একটি বাংলা লিঙ্ক নম্বর থেকে সর্বহারা পার্টির সদস্য পরিচয়ে তিন লাখ টাকা চাঁদা চাওয়া হয়। নিরুপায় হয়ে কাকুতিমিনতি করে দুপুরে একটি বিকাশ নম্বরে এক হাজার টাকা দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাতক্ষীরা শাখার কর্মকর্তা নলতা ইউনিয়নের ইন্দ্রনগর গ্রামের নূর ইসলাম ও নলতার ঠিকাদার জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছে সর্বহারা পার্টির পরিচয়ে চার লাখ টাকা করে চাঁদা চাওয়া হয়। বিষয়টি তারা প্রশাসন ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানিয়েছেন। একইভাবে নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক নলতা এলাকার কমপক্ষে ১০ ব্যক্তি জানান, তাদের কাছে গত এক সপ্তাহে সর্বহারা পার্টির পরিচয়ে বিভিন্ন সময়ে চাঁদা চাওয়া হয়েছে। টাকা না দিলে জীবননাশের হুমকি দেয়ায় গোপনে কিছু টাকাও তারা দিয়েছেন। কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লস্কর জায়াদুল হক বৃহস্পতিবার বিকেলে জনকণ্ঠকে বলেন, একটি মহল বা প্রতারক চক্র এই কাজ করছে বলে তারা সন্দেহ করছেন। মোবাইল নম্বর ট্র্যাক করে তাদেরকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
×