ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কলড্রপের ক্ষতিপূরণ দেয়া শুরু করেছে মোবাইল অপারেটররা

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১৮ আগস্ট ২০১৭

কলড্রপের ক্ষতিপূরণ দেয়া শুরু করেছে মোবাইল অপারেটররা

ফিরোজ মান্না ॥ চলতি মাস থেকে মোবাইল অপারেটররা গ্রাহকদের কলড্রপের ক্ষতিপূরণ দেয়া শুরু করেছে। ক্ষতিপূরণ না দিতে মোবাইল অপারেটররা দীর্ঘদিন নানা টালবাহানা চালিয়ে গেছে। কিন্তু ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং বিটিআরসির চাপে গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ দিতে শুরু করেছে অপারেটররা। দীর্ঘদিন সীমাহীন কলড্রপে মোবাইল গ্রাহকরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। কলড্রপের ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়ে গত বছরের জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল বিটিআরসি। কিন্তু অপারেটররা বিটিআরসির নির্দেশ উপেক্ষা করে গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ দেয়নি। বিটিআরসির হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন ২ কোটি ৮০ লাখ মিনিট কলড্রপ হয়। অপারেটররা কলড্রপ থেকে দিনে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, কলড্রপের পুরো টাকাই অপারেটররা বিদেশে পাচার করেছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সম্প্রতি জানিয়েছেন, অপারেটরদের কাছ থেকে কলড্রপের ক্ষতিপূরণ আদায় করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন বিষয়টি নিয়ে অপারেটররা নানা টালবাহানা করলেও চলতি মাস থেকে গ্রাহকদের কলড্রপের ক্ষতিপূরণ দিয়ে যাচ্ছে। গ্রাহক স্বার্থরক্ষায় মোবাইলের সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করা হবে। এখানে কোন প্রকার আপোসের প্রশ্নই ওঠে না। যদিও কাজগুলো করা আমার জন্য খুবই কঠিন হচ্ছে। তবু গ্রাহকসেবা এবং সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন হাতে নেয়া সব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে আমরা প্রস্তুত। বিটিআরসি জানিয়েছে, গ্রাহকদের কলড্রপের টাকা বা ‘টকটাইম’ ফেরত দেয়ার নির্দেশটি বাস্তবায়ন করার জন্য মোবাইল অপারেটরদের গতবছরের জুন মাস পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু জুনের মধ্যে অপারেটররা এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করেনি। সম্প্রতি বিটিআরসি কলড্রপের ক্ষতিপূরণ নিয়ে অপারেটরদের দফায় দফায় চিঠি দিয়েছে। এবারের চিঠিতে বলা হয়েছিল, কলড্রপের ক্ষতিপূরণ গ্রাহককে না দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এমন নির্দেশের পরে মোবাইল অপারেটররা আগস্ট মাস থেকে কলড্রপ ফেরত দেয়া শুরু করেছে। সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে ছয়টি অপারেটরের দিনে মোট কলের সংখ্যা প্রায় ১ শ’ ৮০ কোটি মিনিট। এর মধ্যে গড় কলড্রপের হার ১ শতাংশ। এই হিসেবে প্রতিদিন কলড্রপ হচ্ছে ২ কোটি ৮০ লাখ মিনিট। বিটিআরসির হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে দেশে মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা ১৩ কোটি ৫৯ লাখ। এতে গ্রাহকপ্রতি কলড্রপের হার শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, বিটিআরসি আইটিইউয়ের (আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন) নীতিমালার বাইরে কতগুলো কলড্রপ হয় তা মনিটর করে দেখেছে আইটিইউয়ের নীতিমালার বাইরে কলড্রপ হচ্ছে। এ কারণে অপারেটরকে ওই টাকা বা টকটাইম গ্রাহককে দিতে হবে। কলড্রপের বিষয়ে মোবাইল গ্রাহকরা সিরিয়াস, মন্ত্রণালয়ও সিরিয়াস। বিটিআরসির কোয়ালিটি অব সার্ভিসের ওপর সজাগ থেকে কলড্রপ ফেরত দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। কলড্রপ নিয়ে মোবাইল অপারেটররা বলছে, নেটওয়ার্ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রতিবন্ধকতায় কলড্রপের বড় কারণ। যেমন ঢাকার একটি স্থানে গ্রাহক বেড়ে গেছে কিংবা বড় বড় উঁচু দালান ওঠার কারণে উন্নত সেবা ধরে রাখতে সেখানে আরও বেশি বেস ট্রান্সসিভার স্টেশন (বিটিএস) বসানো প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবে বিটিএস বসানোর জন্য উপযুক্ত জায়গা পাওয়া যায় না। এখন বেশির ভাগ বাড়িওয়ালা, এমনকি সরকারী অফিসের কর্মকর্তারাও বিটিএস বসানোর জন্য ভবনের ছাদ ব্যবহার করতে দিতে চান না। আবার যেখানে স্থান পাওয়া যায়, সেখান থেকে পুরো এলাকায় বৃত্তাকারে সমমানের নেটওয়ার্ক সেবা দেয়া সম্ভব হয় না। ফলে কলড্রপ হচ্ছে। আবার ইন্টার-কানেকশন এক্সচেঞ্জে ত্রুটির কারণে কলড্রপ হয়। অপারেটররা জানিয়েছে, মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন গ্রাহদের কলড্রপের ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে। আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েই গ্রাহকসেবা দিয়ে যাচ্ছি।
×