ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শোকের মাসে হামলার আশঙ্কা রয়েই গেছে

পর্দার অন্তরাল থেকে জঙ্গী হামলায় মদদ দিচ্ছে বিএনপি-জামায়াত

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৭ আগস্ট ২০১৭

পর্দার অন্তরাল থেকে জঙ্গী হামলায় মদদ দিচ্ছে বিএনপি-জামায়াত

শংকর কুমার দে ॥ শোকের মাস আগস্টে বার বার জঙ্গী হামলা চালাচ্ছে জঙ্গীগোষ্ঠী। এখনও জঙ্গী হামলার আশঙ্কা রয়ে গেছে বলে মনে করছে গোয়েন্দা সংস্থা। জঙ্গী সংগঠন জেএমবি এই শোকের মাসে ১৭ আগস্ট ঘটিয়েছে দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার ঘটনা। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলে থাকাকালে জঙ্গীগোষ্ঠী তাকে হত্যার জন্য ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে। এবারও যে শোকের মাস আগস্টে মাসে জঙ্গী হামলা ও নাশকতার ঘটনা ঘটানো হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল তা গোয়েন্দা সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে দৈনিক জনকণ্ঠে ৩ আগস্টে সংবাদ ছাপা হয়েছিল। আগস্ট মাসকে কেন বার বার বেছে নিচ্ছে জঙ্গীগোষ্ঠী? ষড়যন্ত্র বা চক্রান্ত শেষ হয়নি দাবি করে নেপথ্যের রাজনৈতিক ঘটনাবলীর ওপর প্রতিবেদন তৈরি করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আগস্ট মাসে বার বার জঙ্গী হামলার নেপথ্যের কারণ হচ্ছে, যারা জঙ্গীগোষ্ঠীগুলোকে মদদদান, আর্থিক সহায়তা, পৃষ্ঠপোষকতা করছে তারা থেকে যাচ্ছে পর্দার অন্তরালে। পর্দার অন্তরাল থেকে জঙ্গীগোষ্ঠীগুলোকে জঙ্গী তৎপরতায় উৎসাহ যোগাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত, যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠীরাই। কারণ, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতার মসনদে বসে জামায়াত-শিবিরকে পুনর্বাসিত করেন। যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে জামায়াতের আমির গোলাম আযমসহ যারা পাকিস্তানে ছিলেন তাদের দেশে এনে এবং যারা দেশে ছিলেন তাদের প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ দান করেছেন জেনারেল জিয়া। তারপর তিনি রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের নিয়ে দল গঠন করেন, যার নামকরণ করা হয় বিএনপি। সুতরাং সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান বিএনপি-জামায়াত ও যুদ্ধপরাধী গোষ্ঠী। বিএনপি-জামায়াত, যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠী ক্ষমতায় এলে ব্যাপকভাবে জঙ্গী তৎপরতা বেড়ে যায় দেশব্যাপী। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের মধ্যে জঙ্গী হামলা, নাশকতা, সন্ত্রাসী কর্মকা-, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে ক্ষমতাচ্যুতি করার জন্য ছক কষে জঙ্গী হামলা ঘটানো হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকা-ের এই শোকের মাসে আবারও নতুন করে জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটানোর জন্য বার বারই চেষ্টা করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এবার শোকের মাস আগস্টে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে নাশকতা ও নৈরাজ্যের ছক কষে তৎপরতা শুরু করেছে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীগোষ্ঠী। নেপথ্য থেকে তাদের মদদ দিচ্ছে বিএনপির উগ্রপন্থী যাদের বিদেশী অশুভ শক্তির সঙ্গে গোপন যোগাযোগ আছে। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে তাদের এ তৎপরতায় ইন্ধন যোগাচ্ছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটসহ উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ দল ও বিভিন্ন জঙ্গীগোষ্ঠী। গোয়েন্দা সংস্থার দেয়া এই প্রতিবেদনটির বরাত দিয়ে এই প্রতিবেদকের তৈরি করা প্রতিবেদনটি গত ৩ আগস্টে দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাজধানীর পান্থপথে নব্য জেএমবির আত্মঘাতী জঙ্গী সাইফুল ইসলামের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মহত্যা করা এবং ১৫ আগস্টে ধানম-ির ৩২নং বাড়িতে ও শোক র‌্যালিতে জঙ্গী হামলার ছক কষার ঘটনায় দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিই সত্যে পরিণত হলো। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শোকের মাসে নতুন করে কোন ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা যাতে না ঘটতে পারে সে জন্য আগাম গোয়েন্দা নজরদারি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতিসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। আগস্ট মাস অত্যন্ত শোক ও বেদনাবিধুর হওয়ায় নানা ধরনের কর্মসূচী পালন করে আওয়ামী লীগসহ স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি। এই সুযোগটা নিতে পারে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বিশেষ করে জামায়াত-শিবির যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠী। তাদের সহায়তা করতে পারে বিএনপির মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা পাকিস্তানপন্থী উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ চক্রটি। এ জন্য পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই স্বাধীনতাযুদ্ধের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে ইতিপূর্বেই স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ধ্বংসে ষড়যন্ত্রের নীলনক্সা করেছে, যা বাস্তবায়নের চেষ্টা করতে পারে। এই আগস্ট মাসেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে ঘাতকরা। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতা নিলে দেশে ভয়াবহ জঙ্গীবাদের উত্থান ঘটে। দেশব্যাপী একের পর হামলার ঘটনা ঘটতে থাকে। এর মধ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এমন ঘটনার পর বিএনপি হামলার জন্য আওয়ামী লীগকেই দোষারোপ করতে থাকে। এতে করে জঙ্গীরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এরপর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলেই ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় (মুন্সীগঞ্জ বাদে) যুগপৎ বোমা হামলা চালিয়েছিল নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবি। সেই জঙ্গীবাদের শীর্ষ নেতা জেএমবির সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই মিডিয়ার সৃষ্টি বলে অভিযোগ করেছিলেন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, যাকে যুদ্ধাপরাধের মামলায় উচ্চ আদালতের রায়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বছর ২০১৬ সালের শোকের মাস আগস্টে জঙ্গী হামলার ছক কষে আগের মাস জুলাইয়ে ভয়াবহ জঙ্গী হামলা চালানো হয় গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় সবচেয়ে বড় ঈদের জামায়াতে। এবারের আগস্ট মাসকে বেছে নিয়েই মঙ্গলবার ধানম-ির ৩২নং বাড়িতে ও শোক র‌্যালিতে আত্মঘাতী জঙ্গী হামলার প্রস্তুতির খবর পেয়ে জঙ্গীবিরোধী অভিযান চালানো হলে রাজধানীর পান্থপথে জঙ্গী সাইফুল ইসলাম বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হয়। সামনে রয়ে গেছে সিরিজ বোমা হামলার সেই ১৭ আগস্ট ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার কলঙ্কময় দিবস। এই শোকের মাসকে কেন্দ্র করে কোন অশুভ মহল যাতে নতুন করে আবারও কোন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটাতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কারণ, এ মাসে যে কোন ধরনের নাশকতা ঘটতে পারে বলে সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অস্থিরতা বাড়াতে, নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে ফের নাশকতার ছক কষছে জামায়াত, ছাত্র শিবির ও বিএনপির মধ্যকার স্বাধীনতাবিরোধী পন্থীরা। তাদের নাশকতার লক্ষ্য নানা স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও ব্যক্তিবর্গ। এর মূল লক্ষ্য অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দেখিয়ে বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। এ সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অতীতের মতো এবারও জামায়াতকে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় নাশকতা, সহিংসতা ছড়াতে গোপন মাধ্যমে সব ধরনের সাহায্য করছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। জামায়াত-শিবির নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে জঙ্গীগোষ্ঠীর সদস্যদের সঙ্গে গোপন আঁতাত গড়ে সন্তস্ত্র করে তুলেছে, যা বিগত দিনে দেখা গেছে। তারা নিজেদের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে ফের নাশকতার ছক কষছে। আর এ জন্য সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সেই শোকের মাস আগস্টকেই বার বার জঙ্গীগোষ্ঠী বেছে নিচ্ছে, যাতে পর্দার অন্তরাল থেকে দেশী-বিদেশী অশুভ শক্তি কলকাঠি নাড়াচ্ছে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি।
×