ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মাহিয়ান দ্বীপ

আপন আলোয় শিপার্স

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১৬ আগস্ট ২০১৭

আপন আলোয় শিপার্স

আবারও পাদপ্রদীপের আলোয় ডেফনে শিপার্স। একেবারে সোনার মুকুট মাথায় দিয়ে প্রত্যাবর্তন! লন্ডনের বিশ্ব এ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপের ২০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণপদক পুনরুদ্ধার করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে ২০১৫ সালের বেজিং বিশ্ব মিটের পর আবারও ২০০ মিটারে স্বর্ণপদক জিতলেন হল্যান্ডের এই তারকা এ্যাথলেট। অলিম্পিকে অল্পের জন্য ২০০ মিটারের স্বর্ণপদক হাতছাড়া হয়েছিল এই ডাচকন্যার। ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিকে ২০০ মিটার স্প্রিন্টে রৌপ্যপদক জিতেছিলেন তিনি। এবারও সংশয় ছিল; কিন্তু লন্ডন স্টেডিয়ামে সব সংশয় মুছে দিয়ে ২০০ মিটারে সোনার মুকুট মাথায় পরেছেন ‘ডাচ কুইন’ শিপার্স। ২২.০৫ সেকেন্ড সময় নিয়ে ২০০ মিটারের নতুন রানী হলেন তিনি। স্বর্ণপদক জিতেই দারুণ রোমাঞ্চিত শিপার্স। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এটার জন্য লড়াই করেছি। আমি এই বছর কঠিন পরিশ্রম করেছি। এখন আমি খুশি। টানা দু’বার জেতাটা আমার জন্য বিশেষ কিছু।’ সেকেন্ডের তিন শ’ ভাগের ব্যবধানে দ্বিতীয় হয়ে ২০০ মিটারে রৌপ্য জিতেছেন আইভরিয়ান মারি-জোসি টা লও। ১০০ মিটারেও আমেরিকান টোরি বোওইর কাছে হেরে রৌপ্য জিতেছিলেন টা লও। ২০০ মিটারে অবশ্য ১০০ মিটারে চ্যাম্পিয়ন টোরি অংশগ্রহণ করেননি। বাহামার শাওনে মিলার-ইউবো ২২.১৫ সেকেন্ড সময় নিয়ে তৃতীয় হন। ২০০ মিটারে ব্রোঞ্জ জেতার আগে ৪০০ মিটারে চতুর্থ হয়েছিলেন মিলার-ইউবো। ২০১৫ সালে বেজিং বিশ্ব এ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে ২০০ মিটারের রানী এবার পদক ধরে রাখতে পারবেন কি-না তা নিয়ে সংশয় ছিল। শুক্রবার রাতে লন্ডন এ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে অবশ্য সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে স্বর্ণপদক নিজের শোকেসে তোলেন। প্রতিযোগিতার শেষেই ডাচকন্যা বলেন, ‘এই জয়টা খুবই গুরত্বপূর্ণ। আমি গত বছর কঠোর পরিশ্রম করেছি এবং গত বছর আমার জন্য মোটেই সহজ ছিল না। আমি সবকিছু বদলে ফেলেছিলাম। নতুন কোচও নিয়েছিলাম। এখন আমি খুব খুশি। স্বর্ণপদক জয়টা অসাধারণ ব্যাপার। আমি খুবই কৃতজ্ঞ। আমার রেস আর খেলাকে আমি খুব উপভোগ করি। শুরুর দিকে কিছুটা নার্ভাস ছিলাম। শেষ পর্যন্ত আমিই সেরা হয়েছি। শেষ হওয়ার পর মনে হচ্ছে অসাধারণ অনুভূতি।’ বেজিং বিশ্ব আসরে সবাইকে চমক উপহার দিয়েছিলেন ড্যাফনে শিপার্স। হেপ্টাথলন থেকে স্প্রিন্টে দীক্ষা নিয়েই হয়েছিলেন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। কিন্তু অন্যতম সেরাদের কাতারে নিজেকে নিয়ে যেতে পারেননি মাঝের দুই বছরে আহামরি কোন সাফল্য না পেয়ে। এককভাবে আধিপত্য করেছেন এ সময়টাতে জ্যামাইকার তরুণী এ্যালেইন টমসন। এমনকি গত অলিম্পিকেও শিপার্সকে দুঃখ উপহার দিয়েছিলেন এলেইন। এবার তিনি ছিলেন না, দুঃখটা ঘুচে গেছে শিপার্সের। টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপসের ২০০ মিটারে স্বর্ণপদক জিতে নিজেকেও সেরাদের কাতারে নিয়ে গেছেন হল্যান্ডের এ তরুণী। মহিলাদের ২০০ মিটারে গত দুই বছর ধরেই অন্যতম ফেবারিট ২৫ বছর বয়সী শিপার্স। কারণ বেজিং বিশ্ব আসরের অভাবনীয় সাফল্য। কিন্তু এরপর থেকেই ছক পাল্টে যেতে শুরু করেছে। ডায়মন্ড লীগ মিটগুলোতে তার চরম শত্রু হয়ে ওঠেন যুক্তরাষ্ট্রের টোরি বাউয়ি। আর জ্যামাইকান গতি সম্রাজ্ঞী এলেইন হয়ে ওঠেন দুর্ধর্ষ। তার সঙ্গে কোনভাবেই পেরে উঠছিলেন না শিপার্স। এমনকি রিও অলিম্পিকে ডাবল জিতে শিপার্সকে হতাশ করেন এলেইন। কিন্তু হাল ছাড়েননি শিপার্স। চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। এবার বাউয়ি কিংবা এলেইন দু’জনের কেউ ২০০ মিটারে নামেননি। ১০০ মিটার স্প্রিন্টে এলেইনকে চমকে দিয়ে বাউয়ি গতির রানী হয়ে ওঠেন, আর শিপার্সের কপালে জোটে ব্রোঞ্জ। তাদের উপস্থিতি থাকলেও অন্যতম ফেবারিট হিসেবে গণ্য শিপার্স। আর তারা দুজনের অনুপস্থিতিতে প্রায় নিশ্চিতই হয়ে গিয়েছিল ২০০ মিটারের স্বর্ণপদক জিতবেন এ ডাচ তরুণী। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে। মৌসুমের সেরা টাইমিং গড়েছেন তিনি, হয়েছেন টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। অবশ্য বেজিংয়ে চ্যাম্পিয়নশিপস রেকর্ড গড়ে তাক লাগিয়েছিলেন তিনি। এবার সময় অনেকখানি বেশি নিয়েছেন। দ্বিতীয় স্থানে থাকলেন আইভোরি কোস্টের ম্যারি জোসি টা লুই। রৌপ্য জয়ের সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি গর্বেরও কারণ হয়েছে তার এ টাইমিং। এটি জাতীয় রেকর্ড আইভোরি কোস্টের। এবার শিপার্সের জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ ছিল, সেটা হচ্ছে নিজেকে সেরাদের একজন হিসেবে প্রমাণ করা। কারণ বেজিংয়ে হুট করে এসেই চ্যাম্পিয়নশিপস রেকর্ড গড়ে স্বর্ণপদক জয়টাকে অনেকে আচমকা ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা হিসেবে মনে করছিলেন। টানা দুই বছর ডায়মন্ড লীগ মিট ও গত অলিম্পিকের ব্যর্থতা যেন সেই কথাটিকেই প্রতিষ্ঠিত করছিল। কোচ পরিবর্তন করে অবশেষে সাফল্য পেলেন এবং প্রমাণ দিলেন তিনিও সেরাদের কাতারে। সাম্প্রতিক এ্যাথলেটদের আতঙ্ক ডোপিং। লন্ডনের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের আগেও তিক্ততায় ভরিয়ে দিচ্ছিল তার দিকে তাক করা ডোপিংয়ের তীর। তবে যারা তার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকান, তাদের শিপার্স দেখেন ঘৃণার চোখে। এ বিষয়ে সম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘আমি এটাকে ঘৃণা করি। মানুষ যখন আমাকে এই সংক্রান্ত প্রশ্ন করে, সেটাকেও ঘৃণা করি আমি।’ একজন ভাল এ্যাথলেট হিসেবে দিনের পর দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন শিপার্স। তার অন্তত তেমনই দাবি, ‘একজন ভাল এ্যাথলেট হিসেবে আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি। খাদ্যাভ্যাস মেনে চলেছি। ঘুমোবার নিয়ম মেনেছি এবং খেলার মতো করেই বেঁচেছি আমি। এরপরও যখন কেউ তোমাকে এমন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করবে, সেটা হৃদয়বিদারক। তখন তুমি কি বলতে পার?’ মুখে এবং পিঠের চামড়ায় দেখা দেয়া দাগগুলোকে বংশানুক্রমিক হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন শিপার্স। এর পেছনে তার যুক্তি, ‘আমার চামড়ার জন্য এটা কঠিন। এমটা আমার এবং আমি কে? চিহ্নগুলো এমন, সেটা পারিবারিক সূত্রেও হয়। আমার মায়ের বয়স যখন ৩০ থেকে ৪০, তখন তারও এমনটা ছিল। কিছু মানুষ বলে- ওহ, এটা ডোপিংয়ের চিহ্ন। একনজ নারী হিসেবে, চামড়ার দাগগুলোতে ভোগা হাস্যকর কিছু নয়। এটা বয়ে বেড়ানো কঠিন এবং মানুষ যখন ব্যক্তিগতভাবে এটা নিয়ে কথা বলে সেটাও কঠিন।’
×