ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তাহমিনা আকতার

কষ্টের বিদায় ‘মোবটের’

প্রকাশিত: ০৫:০২, ১৬ আগস্ট ২০১৭

কষ্টের বিদায় ‘মোবটের’

মুকতারের কাছে মুকতারের পরাজয়! এখানেই সব পরিষ্কার হয় না। কারণ যে মুকতার হেরে গেছেন ক্যারিয়ারের শেষ রেসে, তিনি কিংবদন্তি হয়েছেন অন্য নামে, অন্য পরিচয়ে এবং অন্য দেশের পক্ষে। সেই মুকতার হচ্ছেন মোহাম্মদ মুকতার জামা ফারাহ। তাঁকে বিশ্বব্যাপী সবাই চেনেন ‘মো ফারাহ’ নামে। পুরো ক্যারিয়ারটাকে রঙ্গিন রেখেই এক রূপকথা তৈরি করে বিদায় নেয়ার সুবর্ণ সুযোগ ছিল। কিন্তু ৩৪ বছর বয়সী ফারাহ হেরে গেছেন ইথিওপিয়ার তরুণ মুকতার ইদ্রিসের কাছে। তিনি আবার জয়ের পর হয়ত নজর কাড়তেই কিংবা ফারাহর পরাজয়ের ব্যথায় আরেকটু বিষাদ ঢেলে দিতেই ‘মোবট’ জয়োৎসব কৌশলটার নকল করেছিলেন। কিন্তু ‘মোবট’ শুধুই ফারাহর জন্য। অভিনব এই উদযাপন ভঙ্গি তিনি টানা ৬ বছর ধরেই করেছেন চারটি বিশ্ব আসর ও দুই অলিম্পিকে। তাই ইথিওপিয়ান মুকতারের দিকে কেউ নজরই দেননি। ফারাহ ৫ হাজার মিটারে হেরে গিয়ে ট্র্যাকেই হাঁটুতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন। নিজের দেশের মাটিতে যেখানে ৮ বছর বয়স থেকে বেড়ে উঠেছেন সেখানে স্বাগতিক দর্শকরা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু পরে রৌপ্যপদক নিয়েই দর্শকদের জন্য শেষবারের মতো ‘মোবট’ হয়েছেন তিনি। পদক নেয়ার মঞ্চে এবং পরে ট্র্যাকে সেভাবেই ঘুরে ঘুরে বিদায় নিয়েছেন ৩৪ বছর বয়সী ফারাহ। দূরপাল্লার দৌড়কে বিদায় জানালেও রোড রেস ও ম্যারাথনে থাকবেন। তবে আর কখনও ‘মোবট’ দেখা যাবে না। কারণ, ‘মো’ অধ্যায় শেষ হয়ে গেছে, রোডরেসে ‘মোহাম্মদ’ হিসেবে পরিচিত হতে চান সেটাই জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। মাত্র ৮ বছর বয়সে সোমালিয়া থেকে দারিদ্র্যের কষাঘাতে বস্তির ছেলে ফারাহ পাড়ি দেন ইংল্যান্ডে। সেখানে ভাগ্যন্বেষণের জন্য অবস্থান করা বাবার সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। সেখানেই বেড়ে ওঠেন ফারাহ, নিজেকে গড়ে তোলেন দূরপাল্লার দৌড়বিদ হিসেবে। তিনি একজন পূর্ণ ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠেন, তার পরিচয় ব্রিটিশ। সোমালিয়ান নামটা ছিল মোহাম্মদ মুকতার জামা ফারাহ। কিন্তু মাত্র ৮ বছর বয়স থেকে ইংল্যান্ডে অবস্থান করা ও দূরপাল্লার দৌড়ে ক্যারিয়ার শুরুর পর পরিচিত হয়ে ওঠেন সংক্ষিপ্ত মো ফারাহ নামে। এমনকি তার অভিনব উদযাপন কৌশলটিও তার নামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ‘মোবট’ হিসেবে পরিচিতি পেয়ে যায়। দূরপাল্লার দৌড়ের ক্যারিয়ারে সমাপ্তি টেনেছেন সোমালিয়ান বংশোদ্ভূত এ ব্রিটিশ দৌড়বিদ। এবার বিশ্ব আসরে আর ডাবল জিততে পারেননি। ১০০০০ মিটারে স্বর্ণ জিতলেও ৫০০০ মিটারে রৌপ্য নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ড থেকে এখুনি বিদায় নিচ্ছেন না। থাকবেন বৈশ্বিক পর্যায়ের ম্যারাথন ও রোড রেসে। আর এই রোড রেসে তিনি মোহাম্মদ হিসেবে পরিচিতি পেতে চান। তিনি নিজেই জানিয়েছেন ‘মো’ যা করার দরকার ছিল সেটা করে ফেলেছে। সেটা ভুলে গিয়ে এখন মোহাম্মদ হিসেবে কিছু করতে চান। এবার লন্ডন বিশ্ব আসরের প্রথম দিনেই ১০ হাজার মিটারের স্বর্ণপদক টানা তৃতীয়বারের মতো জিতে ইতিহাস সৃষ্টি করেন ফারাহ। আরেকটি অনন্য ইতিহাস কড়া নাড়ছিল তার আরেকটি স্বর্ণপদক জিতলেই। সেটা ৫ হাজার মিটার। স্বাভাবিকভাবেই ব্রিটিশরা আরেকটি উৎসবে মাতার অপেক্ষায় ছিলেন। লন্ডন স্টেডিয়ামে তাই উপস্থিত হয়েছিলেন ৬০ হাজার দর্শক। কিন্তু তাদের বিস্মিত দৃষ্টির সামনে পতন ঘটল তাদের মহাতারকার। ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্ব আসর দৌড়ে পরাজয় কোনভাবেই মানতে পারছিলেন না। ইথিওপিয়ার মুকতার ইদ্রিস ১৩ মিনিট ৩২.৭৯ সেকেন্ড টাইমিংয়ে স্বর্ণপদক ছিনিয়ে নিলেন ফারাহর কাছ থেকে। যে স্বর্ণপদক তিনি আগলে রেখেছিলেন গত ৬ বছর ধরে। ফারাহ এবার নিয়েছেন রৌপ্য। ১৩ মিনিট ৩৩.২২ সেকেন্ড সময় নিয়েছেন তিনি। সব শেষ হয়ে গেছে। ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডে দূরপাল্লার দৌড় শেষ। বিশ্ব আসরে ৬ স্বর্ণ আর ২ রৌপ্যসহ ৮ পদক নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ হলো ফারাহর। আর অলিম্পিকেও তিনি টানা দুইবার ডাবল জিতেছেন। ৩৪ বছর বয়সী সোমালিয়া বংশোদ্ভূত এ ব্রিটিশ দৌড়বিদকে আর দেখা যাবে না বিশ্ব আসর কিংবা অলিম্পিকে। কিন্তু রোড রেসে থাকবেন। এ বিষয়ে ফারাহ বলেন, ‘আমার রোড নাম হবে মোহাম্মদ। আমি অনুভব করছি যে ‘মো’ হিসেবে আমার সমাপ্তি ঘটেছে। আমার ভুলে যাওয়া দরকার যে কি অর্জন করেছি ট্র্যাকে। কারণ সেটা শেষ।’ ফারাহর দূরপাল্লার দৌড়ে ক্যারিয়ার শেষ হলেও একটি কালো ছায়া গ্রাস করেছে বার বার। অনেক আগেই গুঞ্জন উঠেছে তার মার্কিন কোচ আলবার্টো সালাজারে বিরুদ্ধে ড্রাগ গ্রহণের। কিন্তু রবিবার রাতে আবেগী এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলতে গিয়ে এ বিষয়ে দারুণ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান ফারাহ। তিনি বলেন, ‘যে কেউ যা খুশি লিখতে পারে। শুধু জানি আমি যা কিছু অর্জন করেছি সেটা আমার কঠোর পরিশ্রম ও মানসিকভাবে নিজেকে উৎসর্গ করে। বছরের পর বছর নিজের দেশকে এভাবেই আমি কিছু দিতে পেরেছি। কিন্তু অনেকে এই অর্জনগুলোকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছে।’ ২০১১ সালে দেগুতে প্রথমবার ৫ হাজার মিটারে স্বর্ণ জয় করেন ফারাহ। এরপর ২০১৩ সালে মস্কো ও ২০১৫ সালে বেজিংয়েও সেটা ধরে রেখে ইতিহাস গড়েন। দেগুতে ১০ হাজার মিটারে রৌপ্য জেতার কারণে ডাবল হয়নি। কিন্তু পরের দুই আসরেই ডাবল জিতেছেন তিনি। একটি ইভেন্টে রৌপ্যে শুরু স্বর্ণে শেষ, আরেকটির স্বর্ণে শুরু রৌপ্যে শেষ। বিশ্ব আসরে ৬ স্বর্ণ আর ২ রৌপ্যসহ ৮ পদক নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ হলো ফারাহর। আর অলিম্পিকেও তিনি টানা দুইবার ডাবল জিতেছেন। ৩৪ বছর বয়সী সোমালিয়া বংশোদ্ভূত এ ব্রিটিশ দৌড়বিদকে আর দেখা যাবেনা বিশ্ব আসর কিংবা অলিম্পিকে।
×