ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পরের জীবনে যেন বাংলায় জন্ম হয় ॥ নওয়াজউদ্দিন

প্রকাশিত: ২০:৫৫, ১৫ আগস্ট ২০১৭

পরের জীবনে যেন বাংলায় জন্ম হয় ॥ নওয়াজউদ্দিন

অনলাইন ডেস্ক ॥ সারাদিন ধরে ঘুরতে হয়েছে ছবির প্রচারে। দুপুরে আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে সন্ধেয় স্পনসরদের নানা অনুষ্ঠান পেরিয়ে রাতে আবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি। স্বাভাবিক ভাবেই ক্লান্তির ছাপ নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির চোখে মুখে। এখানেই কথা বলেন নানা প্রসঙ্গে। প্র: সেন্সরকর্তা পহলাজ নিহালনিকে সরিয়ে দেওয়ায় কতটা খুশি আপনি? উ: খুব খুশি। দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুম হচ্ছিল না ঠিকঠাক। ‘বাবুমশাই বন্দুকবাজ’ থেকে আটচল্লিশটা সিন বাদ দিতে বলেছিল। আরে, এত দৃশ্য বাদ দিলে ছবিটার থাকবেটা কী! প্রযোজক তো ট্রাইব্যুনালে গিয়েছে কাটের বিরোধিতা করে। দেখি, এ বার প্রসূন (‌জোশি) নিশ্চয়ই সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে। প্র: কিন্তু আপনি কি সঠিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন? এক জন চরিত্রাভিনেতার বছরে ছ’-সাতটা ছবি! উ: (থামিয়ে দিয়ে) ও ভাই, আমি মোটেই চরিত্রাভিনেতা নই। আমি হিরো। এখন বলিউডে কনটেন্টই রাজা, চরিত্রাভিনেতারাই হিরো। (‌হেসে) দেখুন না সুপারস্টারদেরও কেমন চরিত্রাভিনেতা হতে হচ্ছে। ‘ডিয়ার জিন্দেগি’তে শাহরুখ, ‘সুলতান’-এ সলমন... সবাই তো ক্যারেকটার প্লে করছে। আমি আগে থেকেই এই ট্র্যাকে। প্র: তবুও বছরে সাতটা ছবি একটু বাড়াবাড়ি না? উ: বেশি কেন? আমি যখন বারো বছর বসে ছিলাম, তখন তো কেউ বলেনি, ‘এত দিন বসে আছো’। আজকে যখন একটু বেশি ছবি করছি তখনই, ‘টু মাচ, টু মাচ’। আমি যখন থিয়েটার করতাম, তখন একসঙ্গে পাঁচটা প্রোডাকশনে রিহার্স্যাল করেছি। এখন তো তবু একটা সময়ে একটা ছবিই হাতে নিচ্ছি। প্র: আপনি তো নানা ধরনের চরিত্র করেন। ‘বাবুমশাই...’-এ ভাড়াটে খুনি আবার ‘মান্টো’তে নামভূমিকায়। নিজেকে বদলান কেমন করে? উ: সত্যি অসুবিধা হয়। বলছিলাম না, একটা সময় একটা ছবিতেই অভিনয় করি। এই কারণে। একটা ছবির শ্যুটিং শেষ হয়ে গেলে সেটা থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসি। তবে যখন যে চরিত্রটা করি, সেটায় পুরোপুরি ঢুকে যাই। এই যেমন বাবু (‘বাবুমশাই...’ ছবিতে তাঁর চরিত্র)। সে বেশরম, কাউকে ভাল লাগলে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। গুন্ডা-বদমায়েশের চরিত্র করার সময় প্রয়োজকদের বলে দিই, আমার জন্য যেন ফাইভ স্টার হোটেলের ব্যবস্থা না করে। চরিত্রের মতোই থাকতে চাই। যদি এই চরিত্রটা দেখে লোকে রাগে জ্বলতে থাকে, তা হলে মনে করব আমি সফল। প্র: কাজের এত ব্যস্ততায় বাড়িতে তো সময় দিতে পারেন না... উ: পারি না তো। (‌হেসে) বিবি তো ডাটতি হ্যায়। ছেলেও বায়না করে। কিন্তু কী করব, টাকা তো কামাতে হবে! বউকে বলে দিয়েছি, টাকা কামাতেই তো বাড়ির বাইরে বাইরে থাকছি। প্রেম তো করছি না। প্র: করছেন না? বলিউডের সফল অভিনেতার দিকে প্রস্তাব তো আসে? উ: (একটু লজ্জা পেয়ে) আসে না বলব না। তখন নিজেকে বলি, কালাকালুটা তোকে দেখে কিন্তু প্রেমের প্রস্তাব দিচ্ছে না। তোর কাজের জন্য আদিখ্যেতা করছে। কাজটা মন দিয়ে কর। প্র: কাজ তো মন দিয়ে করছেনই। বলিউডের সব ক্যাম্পেই এখন নওয়াজউদ্দিন। উ: আপনারা এই যে সব ক্যাম্প-ট্যাম্প বানিয়ে রেখেছেন, বলিউডে কিন্তু এ সব একেবারেই নেই। কীসের ক্যাম্প ভাই! আমি তো আমিরের ছবিতে কাজ করেছি, সলমনের ছবিতে কাজ করেছি, শাহরুখের সঙ্গেও কাজ করেছি। ভাল অভিনয় করলে সকলের কাছ থেকেই কাজ আসবে। প্র: যোগাযোগ ছাড়া স্বজনপোষণের বলিউডে সেটা কতটা সম্ভব? উ: আমার তো কোনও যোগাযোগ ছিল না... প্র: ব্যতিক্রম তো আর উদাহরণ হতে পারে না। উ: (একটু ভেবে) যোগাযোগ থাকলে সুবিধা হয়, সেটা মানছি। তারকার ছেলেমেয়ে হলে ছবি ফ্লপ হলেও ছবির পর ছবি পাওয়া যায়। সবই ঠিক। কিন্তু এ সব ভেবে তো কোনও লাভ হবে না। আমি মনে করি, যোগ্যতা থাকলে বারো বছর লাগুক, কুড়ি বছর লাগুক, এমনকী চল্লিশ বছর লাগুক, এক দিন না এক দিন সুযোগ আসবেই। ওটা কেউ চাপতে পারবে না। কলকাতায় এলে এই কথাটা আমার বেশি করে মনে হয়। আমার প্রথম হিট ছবি ‘কহানি’ তো এখানেই শ্যুট করা। এত থিয়েটার, এত ভাল ভাল ছবি বাংলায়। পরের জীবনে যেন বাংলায় জন্ম হয়। মনে হয়, এখানে জন্মালে আরও আগে সাফল্যের মুখ দেখতে পেতাম। প্র: বলিউড তো হল। হলিউডে পাড়ি দিচ্ছেন না কেন? ইরফান খান তো বেশ... উ: (কথা থামিয়ে দিয়ে) যারা হলিউড-হলিউড করে লাফায়, তারা হয়তো ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্সে ভোগে। হলিউডে যাওয়ার দরকারটা কী? আমরা এখানে খারাপ কাজ করছি নাকি, যে হলিউডে যেতে হবে। এখানে হলিউডের কোনও কাজ এলে করব। আমি কোথাও যাব না। পাকিস্তানি অভিনেতাদের যেমন লক্ষ্য হিন্দি ছবিতে কাজ করা। আমাদের হিন্দি ছবির অভিনেতাদের তেমন লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে হলিউডি ছবিতে কাজ করা। নিজেদের দেশ, নিজেদের ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে গর্ব বোধ না করলে, কিচ্ছু হবে না। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×