ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আসাদ মান্নান

জাগো কবি কোনঠে সবাই

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ১৫ আগস্ট ২০১৭

জাগো কবি কোনঠে সবাই

দিন আসে দিন যায়, ক্যালেন্ডারে পাতা উল্টায়। সময়ের অনিবার্য আবর্তনে ফি-বছর ঘুরে ফিরে আসে ৭ মার্চ, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর। এ তিনটি ঐতিহাসিক তারিখ বাঙালী জাতির জন্য আনন্দ আর গৌরবের। একই চক্রে আসে ১৭ মার্চ ও ১৫ আগস্ট। অনাদিকালব্যাপী আসবে। ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন- জাতীয় শিশুদিবস; আনন্দঘন বর্ণিল ও বর্ণাঢ্য নানান অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে জাতি দিবসটি উদযাপন করে থাকে। অন্যদিকে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস- বঙ্গবন্ধুর মহাপ্রয়াণ দিবসÑ ১৯৭৫ সালের এ দিনে কতিপয় নরপশু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করে; অনেক লড়াই সংগ্রামের পর তিরিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশকে প্রকারান্তরে পর্যায়ক্রমে তারা এবং তাদের মদদদাতারা ‘পাকবাংলা’য় রূপান্তর করে। বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে কোটি কোটি বাঙালীর মতো আমিও শোকাহত। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর থেকে এ বুকে যে শোকের আগুন অনির্বাণ জ্বালিয়ে রেখেছি তা তো বংশানুক্রমে অনাদিকাল ধরে জ্বলতে থাকবে। সেই দহনের যন্ত্রণা নিয়ে বহু কবিতা লিখেছি, আরও লিখবÑ না লিখে আমার নিষ্কৃৃতি নেই। শুধু কবিতা নয়, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ নিয়ে সবার মতো আমারও কিছু একান্ত কথা আছে। কথাগুলো লেখার সুযোগ পাইনি। বহুদিন ধরে ভাবছি কথাগুলো লেখা দরকার। বঙ্গবন্ধু তো কোন ব্যক্তি নন, ব্যক্তির উর্ধেÑ বাঙালীর মুক্তিকামী, স্বাধীনতাকামী লক্ষ লক্ষ বীর শহীদের রক্তে ভেজা আমাদের এ প্রিয় মাতৃভূমির অস্তিত্বের মর্মমূলে সতত জাগ্রত এক অবিনাশী চেতনার নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশের বরেণ্য কবি-লেখক থেকে নবীন কবি-লেখক, সুশীল বুদ্ধিজীবী থেকে রাজনীতিজীবী, ক্ষুদে আমলা থেকে প্রাজ্ঞ কলামিস্ট বঙ্গবন্ধুর বহুমাত্রিক বিষয়-আশয় নিয়ে কত বলেছেন,কত লিখেছেন! তাঁরা প্রত্যেকে সে সব লেখায় স্ব-স্ব বোধ ও বিবেচনায় বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের বিভিন্ন দিক নিয়ে অনেক লিখেছেন, আরও লেখা হবে। কেউ কেউ মহামতি বঙ্গবন্ধুর গুণকীর্তন করেছেন। আবার কোনও কোনও দুষ্ট দুরাচার যে বঙ্গবন্ধুর প্রতি ঈর্ষাজনিত কারণে নিন্দার বাণ নিক্ষেপ করেনি, তা নয়। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ নিয়ে আমার অনেক কথা বলার আছে। স্মৃতিতে, চিন্তায় ও চেতনায় ৫০ বছরে অনেক কথা জমা হয়েছে। মনঃস্থির করেছি এখন থেকে একটু একটু লিখব। একটা স্মৃতিকে অবলম্বন করে এ ক্ষুদ্র লেখা শুরু। শুরু করতে চাই ৭ মার্চকেন্দ্রিক একটি ঘটনা দিয়ে। এ ঘটনার কথা বলতে বলতে প্রাসঙ্গিকভাবে কিছু উপকথা এসে যাবে। তার জন্যে পাঠকের কাছে মার্জনা চাইছি। সন্দেহ বা সংশয়ের কোন কারণ বা লক্ষণ দেখি না- যতদিন বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতি ঠিকে থাকবে ততদিন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের ভাবনায় বঙ্গবন্ধু তাঁর মহাজীবন ও আদর্শ নিয়ে সগৌরবে উঠে আসবেন; তাঁর কালজয়ী এ ভাষণ নিয়ে বহুভাবে বহুমাত্রিক কথা হবে, লেখা হবে অজস্র পাতায়। এ ভাষণ নিয়ে উচ্চমার্গের কোনও লেখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়, এ জন্য নয় যে- এ ক্ষেত্রে যে প্রজ্ঞা ও পা-িত্য থাকা দরকার তা থেকে বাস্তবে আমার অবস্থান বহু দূরে। আমি কবিতার এক সামান্য নফর। বড়জোর ৭ মার্চ নিয়ে প্রচ- আবেগ মথিত ভাষায় একটি কবিতা লিখতে পারি। কিন্তু গুণ দার (কবি নির্মলেন্দু গুণ) সেই বিখ্যাত কবিতার পর অন্য কোনও স্বরে যদি অলৌকিক ভাষায় নতুন কবিতা লেখা না যায়, তা হলে লিখে লাভ নেই। তবে যে কোনওভাবে একটি কবিতা আমার জন্য সহজ; এ জন্য সহজ যে, আমার মনে হয় কবিতা আমি লিখি না- কেউ একজন আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নেয়। কিন্তু গদ্যে আমি বড় ভীতু। এ জন্য আমার কোনও সঙ্কোচ বা লজ্জা নেই। আমি যা নই জোর করে তা তো হতে পারি না! কাককে বড় জোর কোকিল বানানোর চেষ্টা করা যায়, কিন্তু ময়ূর বানানো যায় না। অথচ আমাদের দেশে হরহামেশা তাই হচ্ছে। মাঝে মাঝে আমার হাসি পায় যখন চারপাশে এসব কাকদের দেখি: যে যা নয় তাকে তা বানানো হচ্ছে; যেমন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী হানাদার বাহিনীর এ দেশীয় দোসর, সহচর ঘাতক-দালাল ও তাদের বংশধর সম্পূর্ণ ব্যক্তি স্বার্থে এক অখ্যাত মেজরকে আমাদের মহান স্বাধীনতার ঘোষক বানিয়ে ইতিহাস বিকৃতির চরম দৃষ্টতা দেখিয়ে প্রায় আড়াই দশক ধরে। দু’শ’ বছর ধরে আমাদের পূর্বপুরুষরা ব্রিটিশ-বেনিয়ার অধীনে ছিল। তখন কোনও সংবিধান ছিল না। এখনও ব্রিটেনে কোনও লিখিত সংবিধান নেই। কিন্তু আমাদের একটি সংবিধান আছে। অনেকে একটু আবেগ দিয়ে বলেনÑ রক্তে লেখা সংবিধান। ... হ্যাঁ, রক্তেই তো লেখা। তিরিশ লক্ষ শহীদের অদৃশ্য রক্ত রয়েছে এ সংবিধানের পাতায় পাতায়। আর এই সংবিধানের মলাট খুললেই তো তা থেকে মহামতি জাতির পিতার রক্তধারা নিরন্তর বয়ে যাচ্ছে। বললে কী অত্যুক্তি হবেÑ আমাদের সংবিধান একটি নয়, তিনটি- প্রথম সংবিধান বঙ্গবন্ধু; দ্বিতীয় সংবিধান মুক্তিযুদ্ধ এবং তৃতীয় সংবিধানটি প্রথম ও দ্বিতীয় সংবিধানকে ভিত্তি করে জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রণীত গৃহীত ও লিখিত- ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান’। শেষোক্ত সংবিধান সময়ের প্রয়োজনে সংশোধন, পরিবর্তন করা যায়; কিন্তু তার যে মূল ভিত্তি বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে বাদ দিয়ে এটি সংশোধন বা পরিবর্তন কী করে সম্ভব! না, সম্ভব নয়। তা হলে যে আর একটা যুদ্ধ করতে হবে। অশুভ অপশক্তি বেজন্মার দল মাঝে মাঝে সেই অনাকাক্সিক্ষত যুদ্ধের মহড়া দিচ্ছে চোরাপথে, সন্ত্রাসী আর জঙ্গীর আস্তানা বানাতে চায় স্বপ্নের চেয়ে প্রিয় বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাকে। দিবালোকের মতো এটি আজ স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, পাকিস্তান আমলে বাঙালী ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বিপরীত মেরুতে অবস্থান নিয়ে যারা এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, একাত্তরে তারা প্রত্যক্ষভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে শুধু ক্ষান্ত থাকেনি, তারা ও তাদের বংশধর পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমাদের স্বাধীনতা অর্জনকে নানাভাবে প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করেছে। স্বাধীনতার পরপরই শুরু হয় নানা ষড়যন্ত্র। এ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে প্রথমেই ভাঙন ধরানো হয় বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে প্রতিষ্ঠা করা তাঁর প্রিয় সংগঠন ছাত্রলীগকে। তারা জানত এ ছাত্রলীগই বঙ্গবন্ধুর আন্দোলন-সংগ্রামের মূল শক্তি। কী হাস্যকর! বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের কলা দেখিয়ে বিভ্রান্ত করা হয় স্বাধীনতা পরবর্তী প্রজন্মের মেধাবী তরুণদের। আমরা দেখেছি সারাদেশে তথাকথিত সর্বহারা ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রীরা কিভাবে চোরাগুপ্তা হামলা চালিয়েছে, নিরীহ ছাত্র-শ্রমিক, নিরস্ত্র রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে প্রকাশ্যে হত্যা করেছে; পাটের গুদামসহ বিভিন্ন গুদাম আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। মনে পড়ছে, ১৯৭৩ সালে সন্দ্বীপে এক নির্বাচনী জনসভায় কিভাবে গ্রেনেড ছুড়ে জননেতা এম. এ হান্নানসহ অন্য নেতা-কর্মীকে হত্যা করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছিল। স্পটে ৩ জন মারা গেলেও অল্পের জন্য হান্নান ভাইসহ আমরা প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলাম। অর্থাৎ এ সব নাশকতামূলক কর্মকা-ের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সরকারকে একটি ব্যর্থ ও অকার্যকর সরকারে পরিণত করার জন্য ওরা সর্ব শক্তি নিয়োগ করে। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে নানা ধরনের মিথ্যা প্রপাগা-া চালাতে থাকে ভাড়াটিয়া সুশীল জনেরা। সেসব মিথ্যুক সুশীল ও তাদের নির্বোধ অনুসারীরা এখনও সুযোগ পেলে পুরনো ছকে প্রপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক ফ্রন্টে বিভক্ত হয়ে তারা গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক কয়েকটি দেশের আর্থিক সহায়তায় এবং পাকিস্তান ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার মদদপুষ্ট হয়ে তারা ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে; এমন নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, যাতে এ ভূ-খ-ের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর পরিবার বা তাঁর উত্তরাধিকারের নাম-নিশানা না থাকে, মুজিব দর্শন বলে এ দেশে আর কিছু যেন অবশিষ্ট না থাকে। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে উর্দি পরে ঢুকে পড়ে আইউব-ইয়াহিয়া খানের প্রেতাত্মা সেই স্বঘোষিত রাষ্ট্রবিধাতা চতুর মেজর, যে কি-না এক কলঙ্কময় ইতিহাসের খলনায়ক। বঙ্গবন্ধুর তিরোধানের পর মূলত এ খলনায়কের ছত্রছায়ায়, তারই আস্কারায়, লালনে পালনে ও ইন্ধনে মুক্তিযুদ্ধ তথা বঙ্গবন্ধুর বিপক্ষের অপশক্তি ক্রমান্বয়ে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সব কিছুর নিয়ন্ত্রণে অকল্পনীয় শক্তি ও সাহস সঞ্চয় করে, যার খেসারত জাতিকে এখনও দিতে হচ্ছে, আর কত দিন দিতে হবে! জানি না। জাতি অবাক হয়ে দেখতে থাকে যে, কোটি কোটি টাকার সম্পদ ও সম্পত্তির মালিক বনে যায় স্বাধীনতা পূর্বকালের ফকির-মিসকিন ও তাদের বংশধররা। মেজর হুজুরের প্রস্থানের পর একই মঞ্চে যারা আসীন হয়েছে তারাও তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছে একই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধনকল্পে; একই কায়দায় বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে পুরনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়, এখনও রয়েছে। এ সব নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। আমার এ লেখার উদ্দেশ্য ষড়যন্ত্রকারী এসব ছদ্মবেশী ‘পাকবাঙালী’র মুখোশ উন্মোচন বা সমালোচনা করা নয়। এ বিষয়ে যারা অধিকতর যোগ্য তাঁরা করবেন। এ প্রসঙ্গে শুধু এটুকু বলাই যথেষ্ট যে, পৃথিবীতে সব ষড়যন্ত্রই চূড়ান্ত পর্যায়ে টিকে থাকতে পারেনি। কাজেই এ দেশের ষড়যন্ত্রকারীরাও টিকতে পারবে নাÑ জনতার কাছে ধরা খাবেই। এ কথা চন্দ্রসূর্যের মতো সত্য যে, বাঙালী জাতির এবং বাংলাদেশের গৌরবময় ইতিহাসের নির্মাতা ও প্রধান নায়ক মহামতি বঙ্গবন্ধু। এ আসন শুধু তাঁর। এতে কাউকে শেয়ার দেয়া যায় না। তারপরও একটা বিষয় স্পষ্ট যে, ষড়যন্ত্রী ঘাতকবাহিনী ও তাদের পরবর্তী প্রজন্ম পূর্বসূরিদের মতোই পথভ্রষ্ট, বিভ্রান্ত ; ইতিহাস বিকৃতি করে তারা একধরনের সুখ পায়। স্বাভাবিক সঙ্গমের চেয়ে বিকৃত বলাৎকারে এরা অধিকতর সুখ পায় বলে মনে হয়। তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার লক্ষে ইতিহাস বিকৃতি বন্ধের পাশাপাশি কঠোর আইনী ব্যবস্থা থাকা দরকার। এটি সময়ের দাবি এবং রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আর এ জন্যে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত যে কোন বিষয় বা তথ্য যাতে কেউ বিকৃত করতে না পারে সে দিকে নজর দিতে হবে আমাদের। প্রকৃত সত্য চর্চার মাধ্যমেই প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের মন্ত্রে উজ্জীবিত করতে হবে, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সংস্কৃতিমনস্ক অসাম্প্রদায়িক একটি মানবিক উদার রাষ্ট্র বিনির্মাণের নিরন্তর প্রচেষ্টা প্রত্যেককেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে চালাতে হবে। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রসঙ্গক্রমে কিছু বিষয় এসে গেছে। বঙ্গবন্ধুর কথা বলতে গেলে তো এক কথার মধ্যে হাজার কথা শত প্রসঙ্গ এসে যাবে। একে কোন মতোই অপ্রাসঙ্গিক বলা যাবে না। বিগত ৭ মার্চ তারিখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্্রাস্ট আয়োজিত সেমিনারে বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনা ৭ মার্চ ও বঙ্গবন্ধুর ভাষণ নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। এ ধরনের সেমিনারে বা অনুষ্ঠানে একসময় আমার উপস্থিত থাকার সুযোগ ছিল,যা এখন নেই; তবে বিভিন্ন পত্রিকা সূত্রে সেই সেমিনারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের উদ্ধৃতি মূলে খুবই তাৎপর্যম-িত কিছু তথ্য পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বাজানো নিষিদ্ধ ছিল। তারপরও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যেখানে সুযোগ পেয়েছে তারা প্রতিবছর ৭ মার্চের এ ভাষণ বাজাতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিল এবং অনেককে জীবনও দিতে হয়েছিল। ৭ মার্চেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন জাতির পিতা। প্রায় ৪৭ বছর ধরে বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষণটি জনগণকে উজ্জীবিত করে যাচ্ছে। পৃথিবীতে আর কোন ভাষণ নেই যে ভাষণটি এত বছর ধরে মানুষ শুনছে, যার আবেদন এখনও এতটুকুও কমেনি।’ সত্যিই তো ! এ ভাষণের একটি চিরকালীন আবেদন রয়েছে। প্রকৃত কবিতার মতো এর আবেদন। কখনও পুরনো হবে না। যতবার শুনি ইচ্ছে হয় পুনরায় শুনি, বার বার শুনি জনপ্রিয় সঙ্গীতের মতো। মনে পড়ে : ১৯৭১ সালে ৮ মার্চ। আমি তখন সন্দ্বীপে এক অজ গাঁয়ে থাকি। নবম শ্রেণীর ছাত্রÑ বঙ্গবন্ধুর আদর্শপুষ্ট ১৪ বছরের উন্মাতাল এক ক্ষুদে ছাত্রকর্মী। শত শত মানুষ শিবেরহাটের বটতলায় জড় হয়ে রেডিওতে বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ শুনছে। আমরাও তরুণ-কিশোর কর্মীরা শুনছি। কী তুমুল উত্তেজনা! যেন গর্জে ওঠে ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব... শেখ মুজিব, তোমার আমার ঠিকানাÑ পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’ ইত্যাদি স্লোগানে চারদিক প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। তারপর মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের স্বাধীনতা লাভ, পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণ,বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের লড়াই-সংগ্রাম ও নিরলস কর্মপ্রয়াস। এটা সত্য যে, ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর রেসকোর্স উদ্যানে পরাজিত পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করলেও তাদের এ দেশীয় দোসর সঙ্গীরা পরাজয় স্বীকার করেনি; তারা নানামুখী ষড়যন্ত্রের চূড়ান্ত বাস্তবায়ন করে ১৯৭৫ সালে অভিশপ্ত আগস্ট মাসের ১৫ তারিখে। সেই থেকে প্রায় দীর্ঘ আড়াই যুগ বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণটি শুধু বাজানো নিষিদ্ধ ছিল না, বলা যায় অলিখিতভাবে শোনাও নিষিদ্ধ করে ইয়াহিয়া আর টিক্কা খানের জারজ বাচ্চারা। এমনি এক সময়ে ১৯৯৪ সালে ৭ মার্চ আমি রিক্সায় চড়ে আমার তৎকালীন কর্মস্থলে সচিবালয়ে যাচ্ছি শাহবাগ হয়ে। হঠাৎ পরীবাগে মাইকে বেজে ওঠেÑ ‘ভাইয়েরা আমার! আমার গায়ে এক ধরনের শিহরণ অনুভব করি। রিক্সাওয়ালাকে থামতে বলি এবং রিক্সা থেকে নেমে পড়ি। ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থেকে পুরো ভাষণটা শুনলাম। আমার চোখ দিয়ে অজান্তে ক’ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। দুঃসময়ে সিগারেট টানতে খুব আরাম লাগে। সিগারেট টানতে টানতে আবার আর একটা রিক্সায় উঠলাম। শাহবাগ পার হয়ে সচিবালয়ে যাচ্ছি। পার হচ্ছি সেই ঐতিহাসিক উদ্যান, যেখানে বঙ্গবন্ধু ২৩ বছর আগে কালজয়ী ভাষণটি দিয়েছিলেন। অনেক কথা মনে পড়ল। ১৯৭২ সালে ২১ জুলাই এ উদ্যানে আমি প্রথম আসি সুদূর সন্দ্বীপ থেকে ছাত্রলীগের সম্মেলনে যোগ দিতে। সেদিন জাতির পিতাসহ অন্যান্য জাতীয় নেতাকে দেখার সুযোগ পেয়ে আনন্দে আবেগে উদ্বেলিত হয়েছিলাম। আজ বঙ্গবন্ধু নেই, বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী জাতীয় নেতারা নেই। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। যেতে যেতে দূর থেকে তখনও শুনতে পাচ্ছিলাম বঙ্গবন্ধুর ভাষণ আর তাঁর গগন বিদীর্ণ করা অবিনাশী কণ্ঠধ্বনি। অবচেতনে ভুলে যাই যে আমি একজন সরকারী কর্মকর্তা। মনে মনে স্থির করলাম রেসকোর্স উদ্যানের যে স্থানে মঞ্চে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিয়েছিলেন সেখানে পুষ্পার্ঘ নিবেদন করব, জাতির পিতাকে নিবেদন করে কবিতা পাঠ করব। কিন্তু একা একা না গিয়ে সঙ্গে আরও দু-তিন জন থাকলে ভাল হয়। কাকে কাকে নেয়া যায়? কে আছেন এমন কবি? ভাবতে ভাবতে আমার কর্মস্থল মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পৌঁছি। আমি এ মন্ত্রণালয়ে সহকারী সচিব। জানা শোনা কোনও কবি বন্ধুকেও ল্যান্ড ফোনে পাচ্ছি না। তখন তো মোবাইল ছিল না। কবি কামাল চৌধুরীর কথা মনে পড়লÑ তথ্য মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব তিনি; আমার সমসাময়িক কবিবন্ধু। আমি বসি ৬ নম্বর ভবনের ৫ তলায়, উনি বসেন ৪ নং ভবনের ৮ তলায়। ফোনে কামালকে পাচ্ছিলাম না। কামাল তখন সপরিবারে নারায়ণগঞ্জে থাকেন। তা সত্ত্বে¡ও আমি ৪ নং ভবনের কামাল চৌধুরীর খোঁজে বের হলাম বেলা ১টার সময়। ৮ তলার পূর্বদিকের একটি কক্ষে কামাল বসেন। খোঁজ নিয়ে জানলাম তিনি মন্ত্রণালয়ে আছেন, হয়ত এদিক ওদিক গেছেন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। কামাল আসলেন। আমার পরিকল্পনার কথা বললাম। তার মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা লক্ষ্য করি। চৌধুরী বললেন, সময় তো কম, বিখ্যাত কাউকে তো পাওয়া যাবে না। আমি বললাম, বিখ্যাত কবির দরকার নেই। বিখ্যাতদের নিতে গেলে আমরা যেতে পারব না। জানাজানি হয়ে গেলে খবর আছেÑ চাকরিতে অসুবিধা হবে। বরং চলুন সাদিক যাবে কিনা তাকে জিজ্ঞেস করিÑ তাকে নেয়া যায়। কবি মোহাম্মদ সাদিকÑ তখন তথ্য সচিবের একান্ত সচিব। আমরা সাদিকের ওখানে গেলাম। সাদিককে বলতেই ও রীতিমতো উত্তেজনায় লাফিয়ে ওঠে। সাদিকের উত্তেজনায় আমরাও উত্তেজিত হয়ে যাই। স্থির করলাম: আমরা তিনজন ছাড়া বাইরের কোনও কবিকে বলব না; এ বিষয় প্রকাশ পেলে জীবন না গেলেও নির্ঘাৎ তিনজনের চাকরি চলে যাবে। আমি হাসতে হাসতে সাদিককে বললাম, তোমাদের চাকরি গেলে তো ভাতে মরবে না, আমাকে কিন্তু মরতে হবে। দুই ভাবীই চাকরি করেন: একজন সহকারী কমিশনার, অন্যজন সহকারী জজ। যা-ই হোক, আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম: সাদিকের বাসায় গিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে শাহবাগে যাব, ফুল কিনব, তারপর সেই পবিত্র ভূমিতে গিয়ে ফুল দেব, বঙ্গবন্ধুকে নিবেদন করে কবিতা পড়ব। প্রবল উত্তেজনায় সেদিন আর অফিস করিনি আমরা তিনজন। গ্রীনরোডে সরকারী ডরমিটরি। এখানে মোহাম্মদ সাদিক ছোট্ট এক রুমের বাসায় সপরিবারে থাকে। সাদিকের মাইক্রোবাসে আমরা তার বাসায় এলাম। সাদিক ভাবীর নিজ হাতে রান্না করা অসাধারণ সুস¦াদু আইড় মাছ- সবজি-ডাল-ভাত খেয়ে আমরা দ্রুত বেরিয়ে পড়ি। সঙ্গে নিলাম সাদিকের একমাত্র শিশু পুত্র সৃজনকে। শাহবাগ থেকে ৪টি ফুলের স্তবক নিলাম। তারপর রেসকোর্স উদ্যানে প্রবেশ করি। শিশুপার্কের দেয়াল ঘেঁষে পড়ে থাকা কয়েকটি ভাঙা ইটের টুকরো সংগ্রহ করিÑ ইটের টুকরোগুলো যে জায়গায় ৭ মার্চের মঞ্চ স্থাপন করা হয় সেখানে রাখলাম। ইটের টুকরোগুলো দিয়ে কাল্পনিক মিনার বানিয়ে আমরা জাতির পিতার উদ্দেশ্যে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করলাম। প্রাণ খুলে কবিতা পড়লাম। আমাদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা কোন কবিতা ছিল না। স্মৃতি থেকে কবিতা পাঠ করেছি। আমার মনে আছে ১৯৭৫ সালে ১৬ আগস্ট কার্ফিও আক্রান্ত রাতে অন্ধকারে মোমবাতি জ্বালিয়ে আমি জাতির পিতার মর্মান্তিক হত্যাকা-ে প্রতিবাদে ক্ষোভে বিক্ষুব্ধ হয়ে একটা কবিতা লিখেছিলাম। বলা যায়, এ কবিতাটিই আমার প্রথম কবিতা, যা কিছুটা কবিতা হয়ে উঠেছে। এর আগে যে ৪/৫ টি কবিতা লিখেছি সেগুলো প্রকৃত কবিতা হয়ে ওঠেনি। কবিতাটির নাম ছিল ‘সহসা আগুন জ্বলে যমুনার জলে’Ñ একটি দীর্ঘ কবিতা। লেখার পর পরই একটি পুরনো অভিধানের পাতার ভাঁজে রেখে দিই। একসময় কবিতাটি কোথায় রেখেছি তা ভুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু কবিতাটির শেষের কয়েকটি চরণ ভুলতে পারিনি, আমার মুখস্থ ছিল। ১৯৭৮ সালে ভাগ্যক্রমে কবিতাটি পেয়ে যাই উঁইএ কাটা জরাজীর্ণ ইংরেজি অভিধানের ভেতর। চট্টগ্রামে কবি মিনার মনসুর সম্পাদিত ‘এপিটাফ’ নামের একটি সঙ্কলনে এটি প্রথম ছাপা হয় আগস্ট মাসে। যাই হোক, রেসকোর্স উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে ‘সহসা আগুন জ্বলে যমুনার জলে’ কবিতার শেষাংশ আমি মুখস্থ আবৃত্তি করলাম। সঙ্গে আরও ২/৩ কবিতা স্মৃতি থেকে পড়েছি। কামাল চৌধুরী আর মোহাম্মদ সাদিকও স্মৃতি থেকে কবিতা পড়ল। সৃজন মনে হয় একটা ছড়া আবৃত্তি করেছিল। আমার ‘সহসা আগুন জ্বলে যমুনার জলে’ কবিতার শেষাংশের কয়েকটি ছত্র এ রকম : ‘স্বদেশী কুত্তার পিঠে বিদেশী শকুন বেশ্যার ছেলের হাতে ইতিহাস খুন আগুন লেগেছে তাই যমুনার জলেÑ আগে আগে হনুমান রাম পিছে চলে সীতাকে হরণ করে রাক্ষস রাবণ টুঙ্গিপাড়ায়ই হবে বঙ্গভবন তা হলে আবার আমি যুদ্ধে যাবো আমি যাবো ঘাতকের হাড় মাংস খাবো পিতা! তুমি বলোÑ ইতিহাস কা’কে বলে কা’কে বলে স্বাধীনতা কা’কে মাতৃভূমি কী আমার জন্ম-পরিচয়! মহাকাল নির্বাক তাকিয়ে রয়: সহসা আগুন জ্বলে যমুনার জলে পাশে জ্বলে দ্রৌপদীর শাড়ির আঁচল অই কাঁদে স্বদেশ বেহুলাÑ কেন কাঁদে বাঙালীর বেহুলা জননী? এ ভাবেই সেদিন আমরা তিনজন কনিষ্ঠ সরকারী কর্মকর্তা ঐতিহাসিক ৭ মার্চের পবিত্র ভূমিতে জাতির পিতাকে শব্দে-ছন্দে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন শেষে বিষয়টা পত্রিকায় প্রকাশের চিন্তা করলাম। আমাদের বন্ধু কবি জাফর ওয়াজেদের কথা মনে পড়ল। জাফর তখন দৈনিক সংবাদ-এ কাজ করে। সাদিক ছেলেকে নিয়ে বাসায় চলে গেল। কামাল আর আমি সন্ধ্যার সময় সংবাদ অফিসে গেলাম। সুভাগ্যক্রমে জাফরকে পেয়ে গেলাম। তাকে পুরো ঘটনা জানালাম। জাফর আমাদের সাহসের তারিফ করল। আমাদের নাম না দিয়ে পরদিন ৮ মার্চ দৈনিক সংবাদ-এর প্রথম পৃষ্ঠায় বক্সের মধ্যে ছোট্ট একটা সংবাদ পরিবেশন করলেন ‘ভিন্ন আয়োজন’ শিরোনামে : ‘‘ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে এবার নেয়া হয়েছিল এক ভিন্নধর্মী উদ্যোগ। ১৯৭১ সালের এই দিনটিতে বঙ্গবন্ধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের (সাবেক রেসকোর্স) যে স্থানটিতে বিশাল জনসভার মঞ্চে দাঁড়িয়ে ডাক দিয়েছিলেন স্বাধীনতার, সেই ঘোষণাস্থলে গতকাল সোমবার দেশের কয়েকজন তরুণ কবি পুষ্পমাল্য অর্পণ ও কাব্য পাঠ করেন হৃদয়ের সকল অর্গল খুলে দিয়ে। স্বাধীনতার ঘোষণাস্থলে দাঁড়িয়ে কবিরা ঘোষণা করেন যে, এখন থেকে প্রতিবছর ৭ মার্চ এই ঐতিহাসিক ঘোষণাস্থলে বেলা সোয়া তিনটায় পুষ্পার্ঘ অর্পণ ও কবিতা পাঠ করা হবে। শহীদ মিনারকে কেন্দ্র করে যেভাবে গড়ে উঠেছে বাঙালীর ঐতিহ্য, তেমনি ৭ মার্চের ঘোষণা মঞ্চকে কেন্দ্র করে আবার আর একটি ঐতিহ্য গড়ে উঠবেই।’’ জাতির দুর্ভাগ্য যে, এ ঐতিহ্য গড়ে তোলার জন্য আজ পর্যন্ত তেমন কোন উদ্যোগ আজও নেয়া হয়নি। এ প্রসঙ্গে কবি জাফর ওয়াজেদ ২০১৬ সালে জনকণ্ঠের ৭ মার্চ সংখ্যায় ‘‘ ভেঙেছে দুয়ার, এসেছে জ্যোতির্ময়’’ শিরোনামের কলামের উপসংহারে আক্ষেপ নিয়ে লিখেছে : ‘‘৭ মার্চের ভাষণের স্থানটি মুছে ফেলার জন্য পঁচাত্তর-পরবর্তী শাসকরা অপতৎপরতার আশ্রয় নিয়েছিলেন। ১৯৯৪ সালের ৭ মার্চ যে স্থানটিতে বিশাল জনসভার মঞ্চে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু ডাক দিয়েছিলেন সংগ্রামের, সেই ঘোষণাস্থলে দেশের কয়েকজন তরুণ কবি পুষ্পমাল্য অর্পণ ও কাব্য পাঠ করেন হৃদয়ের সকল অর্গল খুলে দিয়ে। সেই কবি কামাল চৌধুরী, আসাদ মান্নান, মোহাম্মদ সাদিক সাহসী ভূমিকা নিয়েছিলেন। সাংবাদিক হিসেবে তাদের সেই সাহস নিয়ে প্রতিবেদন লিখেছিলাম। সেই স্থানটি আজও সংরক্ষণ করা হয়নি। জাতি হিসেবে এটা দুর্ভাগ্যের যে, আমরা ঐতিহ্যগুলোর মূল্য দিতে জানিনে।’’ প্রিয় বন্ধু প্রিয় কবি জাফর ওয়াজেদ, আর আক্ষেপ করো না বন্ধু। সময় এখন আমাদের, সময় এখন নতুন প্রজন্মের। এবার ঘুরে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। মহামতি জাতির পিতা ও ৭ মার্চের অবিনাশী মর্যাদা আমাদের রক্ষা করতে হবে যে কোন মূল্যে। জাগো কবি, কোনঠে সবাই। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। লেখক : কবি ও সাবেক সচিব
×