ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এ্যালার্জি টেস্টিং কী?

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১৫ আগস্ট ২০১৭

এ্যালার্জি টেস্টিং কী?

এ্যালার্জি রোগীদের শরীরে কিছু কিছু লিপিড জিনিসের কারণে প্রতিক্রিয়া হয়। কোন জিনিসি যখন শরীরে এ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া বাড়িয়ে দেয় তখন তাকে এ্যালার্জেন বলা হয়। রোগী ঠিক কোন কারণে এ্যালার্জি আক্রান্ত হয়, তা নির্ধারণ করার জন্য এ্যালার্জি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রোগীর ত্বক বা রক্ত নিয়ে পরীক্ষা করেন এ্যালার্জেনের সঙ্গে। কাদের এ্যালার্জি টেস্ট করা প্রয়োজন? বয়স্ক বা শিশু যেই হোক না কেন, এ্যালার্জিতে আক্রান্ত হলে তার কিছু উপসর্গ দেখা যায়। যেমন: শ্বাসতন্ত্রে উপসর্গ: চোখ, নাক বা গলার মধ্যে চুলকানোর অনুভূতি, সর্দি চোখ থেকে পানি ঝরা, নাক বন্ধ থাকা, বুক চেপে ধরা এবং শ্বাসকষ্ট। ত্বকে উপসর্গ হাইভস, সারা শরীরে চুলকানো এবং এ্যাটোপিক ডারমাটাইটিস। অন্যান্য উপসর্গ: এ্যানাফাইলেক্সিস (মারাত্মক এ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া যাতে মৃত্য পর্যন্ত ঘটতে পারে। পেটের উপসর্গ (ব্যথা, ডায়রিয়া), বিশেষ করে কোন নির্দিষ্ট ধরনের খাবার গ্রহণের পরে পতঙ্গ দংশনজনিত এ্যালার্জি। যে সমস্ত এ্যালার্জেন শ্বাসের সঙ্গে গলাধঃকরণ করা হয়, যেমন- ধুলোর জীবাণু, ঘাস, গাছ বা ফুলের রেুণু। সেগুলোর শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ তৈরি করে। অন্যদিকে খাদ্যের সঙ্গে যেসব এ্যালার্জি সংশ্লিষ্ট, সেগুলো ত্বকে, পেটে উপসর্গ সৃষ্টি করে। এ্যানাফাইলেক্সিসও শেষোক্ত ধরনের। তবে ব্যতিক্রমও হতে পারে। ত্বকের এ্যালার্জি টেস্টের কারণ কী? রোগীর এ্যালার্জির সঠিক চিকিৎসা করতে হলে চিকিৎসককে প্রথমে জানতে হবে ঠিক কোন জিনিসটির দ্বারা এ্যালার্জি সংঘটিত হচ্ছে। যেমন- রোগী যদি ধুলোর জীবাণু থেকে মুক্ত থাকতে চায়, তাহলে তার ঘরে বিড়াল পোষা চলবে না। এ্যালার্জি টেস্ট সঠিক এবং প্রত্যক্ষভাবে নির্ধারণ করে দেয় যে কিসে কিসে রোগীর এ্যালার্জি এবং কিসে কিসে এ্যালার্জির ভয় নেই। যদি সুনির্দিষ্ট এ্যালার্জেনগুলোকে শনাক্ত করা যায়, তাহলে রোগীর জন্য সঠিক চিকিৎসার পরিকল্পনা করা সম্ভব হয়। রোগীর এ্যালার্জি- উপসর্গগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে তার জীবন ধারায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব। শ্বাসতন্ত্রের সঙ্কোচন না থাকলে রোগীর ঘুম ভালো হয়, নাক দিয়ে দিনভর সর্দি গড়ানো কিংবা হাঁচি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, রোগীর ব্যায়াম করার শক্তি এবং কর্মকক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস না থাকলে রোগী স্বাভাবিক জীবনে অনেক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কোন এ্যালার্জেন পরীক্ষা করা হবে? ডাক্তার যদিও একটি প্রাথমিক ধারণা রাখেন তবুও রোগীকে পরীক্ষা করলে সুনির্দিষ্টভাবে জানা সম্ভব। এ্যালার্জির কারণ ও প্রতিকার : রোগীর এ্যালার্জির ধরন দেখে নিম্নলিখিত সম্ভাব্য কারণগুলো সম্পর্কে জানা যায়: * কারণ হতে পারে ধুলাবালির জীবাণু (যা খালি চোখে দেখা যায় না) রোগীর ঘরেই যার উৎপত্তি। * লোম অল্প গৃহপালিত জন্তুর নিঃসৃত এক ধরনের হেশটিন, যা থাকে তাদের শরীরের ত্বকের নিঃসরণে, থুথুতে এবং প্রসাবে। * ঘর কিংবা বাইরের বাতাসে ভাসমান ছত্রাক। * বৃক্ষ, ঘাস এবং আগাছা থেকে উঠে আসা পুষ্পরেণু তেলাপোকার নিঃসরণ বেশি মারাত্মক এ্যালার্জির কারণ। *মৌমাছির হুলের বিষ, হলদে পোকা *খাদ্য *রাবার, ল্যাটেক্স, যেমন-গ্লাভনন বা বেলুন। *ওষুধ, যেমন- পেনিসিলিন। সমস্ত এ্যালার্জেন নির্দিষ্ট ধরনের প্রোটিন দ্বারা তৈরি। এ্যালার্জি টেস্টের মাধ্যমে নির্ধারণ করা যায় ঠিক কোন ধরনের প্রোটিন দ্বারা রোগী আক্রান্ত হয়েছেন। এ্যালার্জেনের নির্যাস বা ভ্যাকসিন দ্বারা বিশেষজ্ঞগণ এ্যালার্জির ধরন নির্ধারণ করে থাকেন। এ্যালার্জি টেস্টের প্রকারভেদ প্রিক পদ্ধতি : এই পদ্ধতিতে সামান্য পরিমাণে এ্যালার্জেন রোগীর ত্বকের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। যদি রোগীর এ্যালার্জি থাকে, তাহলে তার শরীরে সুনির্দিষ্ট ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে একের পর এক। এ্যালার্জি রোগীদের শরীরে একটি এ্যালার্জি এন্টিবড়ি থাকে, যার নাম ইমুনোগ্লোবিউলিন-ই বা আইজি-ই। এই দ্রব্যটি রোগীর শরীরের মাস্ট কোষকে সক্রিয় করে তোলে। তখন মাস্ট কোষ কিছু রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদন করে, যাদের বলা হয় কেমিক্যাল মেডিয়েটর বা রাসায়নিক মাধ্যম। এই রকম একটি দ্রব্য হচ্ছে হিস্টামিন। হিস্টামিনের কারণেই এ্যালার্জির জায়গায় ত্বক ফুলে ওঠে ও লাল হয়ে যায়। পরীক্ষার সময় ত্বকের শুধু সেই জায়গাতেই এই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। যেখানে এ্যালার্জেন ঢুকিয়ে দেয়া হয়। সুতরাং রোগী যদি বিড়ালের নিঃসরণের কারণে এ্যালার্জিক না হয়ে থাকে তাহলে ত্বকে যেখানে এই নিঃসরণ ঢোকানো হবে সেখানে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে না। অন্যদিকে যদি তিনি পুষ্পরেণুর কারণে এ্যালার্জিক হয়ে থাকেন, তাহলে যেখানে পুষ্পরেণু ঢোকানো হবে, সেখানে প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে। এই পরীক্ষা সম্পন্ন করতে ২০-৩০ মিনিটের বেশি সময় লাগে না। ফলে রোগীকে লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হয় না। তাছাড়া এই পরীক্ষার সময় শরীরে (ত্বকে যে প্রতিক্রিয়া হয় তা ৩০ মিনিটের মধ্যেই স্বাভাবিক হয়ে যায়। ইনট্রাডারমাল টেস্ট: এইক্ষেত্রে সিরিঞ্জের সাহায্যে খুব সামান্য পরিমাণ এ্যালার্জেন ত্বকের নিচে পুশ করে দেয়া হয়। প্রিক টেস্টের চাইতে এই পদ্ধতি অধিক কার্যকর। তাই প্রিক টেস্টের মাধ্যমে যদি এ্যালার্জি সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়া যায়, তাহলে এই টেস্ট করা হয়। অন্যান্য এ্যালার্জি টেস্টের পদ্ধতি স্ক্যাচ টেস্ট সব সময় করা হয় না। এই পরীক্ষার সময় রোগীর শরীর বা ত্বকে আঁচড় কাটা হয়। তার পর আঁচড়ের ক্ষতের ওপর এ্যালার্জেন ঢেলে দেয়া হয়। চ্যালেঞ্জ টেস্ট : এই ক্ষেত্রে সন্দেহকৃত এ্যালার্জেন রোগীকে খাইয়ে দেয়া হয় বা নিশ্বাসের সাথে গলাধঃকরণ করতে বরা হয়। সচরাচর খাদ্য এবং ওষুধ এ্যালার্জির ক্ষেত্রে এই টেস্ট করা হয়। এই পরীক্ষা করার সময় রোগীর পাশে অবশ্যই ডাক্তারের উপস্থিত থাকতে হবে। রক্তের আরএএসটি টেস্ট: এটির পুরোনাম রেডিও অ্যালারগোসোরবল্ট টেস্ট। এই পরীক্ষার জন্য রক্ত নিতে হয়। এর খরচ বেশি এবং সময় সাপেক্ষ। ত্বকের এ্যালার্জি পরীক্ষা কোনো কারণে অসম্ভব হলে কেবল তখনই এই পরীক্ষা করা হয়। অন্য আরও পরীক্ষা আছে, সেগুলো হচ্ছে- * এ্যাপ্লাইড কাইনোসিসোলজি (মাধ্যমে এ্যালার্জি পরীক্ষা) * সাইটোটক্সিসিটি টেস্টিং * ইউরিন অটোইনজেকশন * সাবলিঙ্গুয়াল প্রভোকেশন এই পদ্ধতিগুলো খুব কম ব্যবহৃত হয়। এমনকি অনেক বিশেষজ্ঞ এই পদ্ধতিগুলোকে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন না। কাদের এ্যালার্জি টেস্ট করা দরকার? যে কোন বয়সের মানুষেরই এ্যালার্জি টেস্টের দরকার হতে পারে। এমনকি শিশুরাও একেক এ্যালার্জিতে আক্রান্ত হতে পারে। তাই প্রায় প্রত্যেকটি টেস্টের প্রয়োজন আছে। তবে এ্যালার্জি পরীক্ষার সময় অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ যেমন এভিল ট্যাবলেট খাওয়া নিষেধ। ডা. গোবিন্দ চন্দ্র দাস দি এলার্জি এ্যান্ড এ্যাজমা সেন্টার।
×