ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নুসরাত জাহান

বাঁচতে হবে প্রতি মুহূর্তে

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ১৪ আগস্ট ২০১৭

বাঁচতে হবে প্রতি মুহূর্তে

আমাদের জীবন দাবা খেলার মতো। জিততে চান? তাহলে আপনাকে অবশ্যই উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। আর এই পদক্ষেপের মাধ্যমেই বৃদ্ধি পাবে আপনার চিন্তাশক্তি, বিবেক-বুদ্ধি। অনেক সময় আমাদের জীবন সমুদ্রের মতো হয়। অনেক স্রোত, সামলে নেয়া যায় না নিজেকে। তখন এই জীবনটা অনেক তুচ্ছ মনে হয়। ইচ্ছে হয় নিজ হাতেই এই স্রোতকে থামিয়ে দিই। আমরা অনেকেই হয়ত জীবনে কোন না কোন সময় ভেবেছি, মৃত্যু দেখতে কেমন হয়? কেমন লাগবে, যদি মরে যাই? তাদের এ প্রশ্নের ছোট্ট একটি উত্তর, মরে যাওয়া আসলে অনেক সহজ। কিন্তু বেঁচে থাকা? বেঁচে থাকা আসলে অনেক কঠিন। বেঁচে থাকাতে একটা চ্যালেঞ্জ আছে। আত্মহত্যা হচ্ছে এ সমাজের একটি ভয়াবহ অসুস্থতার নাম। আজকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুললেই দেখা যায় কেউ না কেউ সুইসাইড করেছে। আর এর বেশিরভাগই হচ্ছে তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশ। আত্মহত্যা কী? আত্মহত্যা মানে নিজেকে নিজে ধ্বংস করা, নিজ আত্মাকে চরম কষ্ট ও যন্ত্রণা দেয়া, নিজ হাতে নিজের জীবনের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের পরিসমাপ্তি ঘটানো। আবার কিছু মানুষ আছে, যারা নিজেকে আহত বা নিজের ক্ষতি করে। কিন্তু তাদের আসলে মৃত্যুবরণ করার কোন প্রকৃত ইচ্ছা নেই। একে বলে প্যারাসুইসাইড। স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চল, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো এবং জাপানে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি (লাখে পঁচিশের ওপর)। গত ৫০ বছরে সারা পৃথিবীতে, মূলত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আত্মহত্যার হার শতকরা ৬০ শতাংশ বেড়েছে। সারা পৃথিবীর যত মানুষ আত্মহত্যার মাধ্যমে মৃত্যুবরণ করে, তার মধ্যে ২.০৬ শতাংশ বাংলাদেশী। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রতি লাখে ১২৮.০৮ জন আত্মহত্যা করে। প্রতিবছর এ সংখ্যার হার বেড়েই চলছে। বাংলাদেশে প্রতিদিন ২৮ জন আত্মহত্যা করে। কি ভয়াবহ কথাবার্তা, তাই না? কিন্তু এটাই সত্যি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে মানুষ কেন আত্মহত্যা করে? কারা আত্মহত্যা করে? দুনিয়ার সবকিছুই যখন কারও কাছে নেতিবাচক মনে হয়, তারাই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। তারা নিজের সম্পর্কে, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ও অন্য মানুষ সম্পর্কে নেতিবাচক চিন্তা পোষণ করে। তারা ভাবে, এই পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হবে এবং এটি পরিবর্তনের জন্য শত চেষ্টায়ও কোন লাভ হবে না। এর চেয়ে মুক্তির একমাত্র উপায় নিজেকে মেরে ফেলা। এ চিন্তায় তাড়িত হয়ে তারা আত্মহত্যা করে। বাংলাদেশে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায় পারিবারিক সমস্যা (৪১.২%), পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া (১১.৮%), বৈবাহিক সমস্যা (১১.৮%), ভালবাসায় কষ্ট পাওয়া (১১.৮%), বিবাহ বহির্ভূত গর্ভধারণ ও যৌন সম্পর্ক (১১.৮%), স্বামীর নির্যাতন (৫.৯%) এবং অর্থকষ্ট (৫.৯%) থেকে রেহাই পেতে বেশিরভাগ মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা করে। আমাদের জীবনে যেমন ভাল সময় থাকে, ঠিক তেমনইভাবে খারাপ সময়ও থাকে। ভাল আর খারাপ একে অপরকে পরিপূর্ণ করে। যেমন রাত শেষে এক নতুন ভোর হয়। তেমনই খারাপ সময় শেষে ভাল সময় ঠিকই আসে। আত্মহত্যা যদি সমাধান হতো তাহলে পৃথিবীর অর্ধেক মানুষই এ পথ বেছে নিত। আপনি প্রতারণা, অবহেলার শিকার হলেন মানেই যে আপনার জীবন দিয়ে দিতে হবে তা নয়। বরং আপনি আরও একবার নিজের জীবনকে সুন্দর করে গোছানোর সুযোগ পেলেন। আপনার জীবনে এমন সময় আসলে নিজেকে একটু সময় দিন। পরিবার বা প্রিয় মানুষগুলোর সঙ্গে সময় কাটান। দরকার হলে কয়েকদিনের জন্য একঘেয়ে জীবন থেকে ছুটি নিয়ে কোথাও ঘুরে আসুন। নিজের জীবনকে হনন নয়, নতুন করে সাজাতে শিখুন। যদি কেউ তোমাকে উঠতে বসতে বলে তুমি একটা অপদার্থ, তোমাকে দিয়ে কোন কিছুই হবে না, তাহলে হাল ছেড় না। তুমি আজকে যে কাজটি করতে পারনি, তার মানে এই নয় যে ভবিষ্যতেও করতে পারবে না। একটি পথ বন্ধ হয়ে গেল মানে বেশ অনেক পথ খুলে গেল। সেই পথগুলো খুঁজে বের করার জন্য দরকার কেবল ধৈর্য আর নিজের প্রতি আস্থা। জীবন যেখানে দ্রোহের প্রতিশব্দ, মৃত্যুই সেখানে শেষ কথা নয় সেনোরিটা! যদি ভেবে থাক তুমি মরে গেলে শুধু তুমিই মর, তাহলে তুমি ভুল! তুমি মরে গেলে মরে যায় তোমার পরিবার, মরে যায় তোমার আপনজনরা। হয়ত সেও মরে, যে তোমাকে লুকিয়ে ভালবাসত। হারানোর ভয়ে হয়ত কখনও বলতেই পারেনি যে সে তোমাকে ভালবাসে। হয়ত তুমি তার সঙ্গে কথা না বলে সময় দিয়েছিলে সেসব অমানুষকে, যাদের কারণে একদিন তুমি আত্মহত্যার পথ বেছে নেবে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আত্মহত্যা যেমন মহাপাপ, তেমনি সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকেও এটি গ্রহণযোগ্য নয়। জীবনে এমন অনেক সময় আসবে যখন আপনি প্রচণ্ড বিষণœ অনুভব করবেন, হতাশায় ভুগবেন। যেকোন প্রকার নীতিবাক্য তখন আপনার কাছে অসহ্য মনে হবে। ঠিক সেসময় নিজেকে বোঝানোর দায়িত্ব মূলত আপনার নিজেরই। খারাপ সময়ে নিজেকে শক্ত রাখুন, মনকে অন্যদিকে ব্যস্ত রাখুন। ধর্মীয় কাজে মন দিন, মনে প্রশান্তি মিলবে। ঢাকা শহরে অনেক বস্তি। তাদের জীবনটা একবার কাছ থেকে দেখে আসুন। ওদের মাথার ওপর মাঝে মাঝে ছাদটাও থাকে না। তবু ওরা ওদের জীবন নিয়ে অতৃপ্ত নয় যে, নিজের জীবন নিজেই দিয়ে দেবে। ওরা তবু বাঁচতে চায়। বিশ্বাস করুন, ওদের দেখলে আপনার বাঁচতে ইচ্ছে করবে! সময় কাটান এই মানুষগুলোর সঙ্গে। তবু কেউ আত্মহত্যা করবেন না। কারণ বেঁচে থাকার জন্য অনেক কারণ আছে, কিন্তু মরে যাওয়ার কারণ হয়ত দুই-একটা। এ সুন্দর পৃথিবীতে আপনার জন্ম হয়েছে হেসে-খেলে জীবনটাকে উপভোগ করতে। যখন আপনার মৃত্যুর ডাক আসবে, তখন কেউ আপনাকে বাঁচাতে পারবে না। তাহলে কেন হেলায় নিজের জীবনটাকে বিলিয়ে দিবেন? মনে রাখবেন আকাশের তারাগুলো অন্ধকার ছাড়া জ্বলতে পারে না। বেঁচে থাকা একটা আশীর্বাদ। ভীরুর মতো না মরে, হিরোর মতো বাঁচতে শিখুন।
×