ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা

শতাধিক শিক্ষকের কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে দুদক

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৩ আগস্ট ২০১৭

শতাধিক শিক্ষকের কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে দুদক

মশিউর রহমান খান ॥ সরকারের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে রাজধানীর স্বনামধন্য এমন ৮ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে ও সরেজমিনে অনুসন্ধান করে এসব তথ্য সংগ্রহ করে সংস্থাটি। তবে এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানা গেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে ভিকারুননিসা নুন স্কুল এ্যান্ড কলেজ, গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কু‹ল, ধানমন্ডি সরকারী বালক স্কু‹ল এ্যান্ড কলেজ মতিঝিল সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়, মতিঝিল সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মতিঝিল আইডিয়াল স্কু‹ল এ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল মডেল স্কু‹ল, ও খিলগাঁও সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়। উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২০ জুন কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করতে নীতিমালা তৈরি করে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্ত কিছু শিক্ষক সরকারের নীতিমালা উপেক্ষা করে অবৈধভাবে কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। দুদকের অনুসন্ধান দল প্রাথমিকভাবে এসব শিক্ষকদেরকে মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা ভঙ্গ করায় সতর্ক করে দেয়। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে যারা কোচিং বাণিজ্যে লিপ্ত থাকবেন তাদের বিরুদ্ধে দুদক নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। কোচিং বাণিজ্য নিয়ে নিজেদের করা অন্তর্বর্তীকালীন অনুসন্ধান প্রতিবেদন পেশ করার পর দুদক কর্তৃপক্ষ প্রতিবেদনটি খতিয়ে দেখতে অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয়। বিষয়টি অনুসন্ধান করতে ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়-১-এর উপপরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিমের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের টিম গঠন করে অনুসন্ধান কাজ শুরু হয়। কমিটির অপর সদস্যরা হচ্ছেন দুদকের সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম, আবদুল ওয়াদুদ, মনিরুল ইসলাম, ফজলুল বারী ও উপ সহকারী পরিচালক আতাউর রহমান। দুদক সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে অভিযুক্ত সব শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নিতে অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি ও সংশ্লিষ্ট তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করছে দুদকের অনুসন্ধান দল। তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ শেষে অনুসন্ধান দলটি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কমিশনের কাছে সুপারিশ করবে। এরই প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে বলে জানা গেছে। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে গত ৫ আগস্ট দুদকের ১০ সদস্যের একটি টিম রাজধানীর মতিঝিল, সিদ্ধেশ্বরী ও শাহজাহানপুর এলাকায় কোচিং সেন্টার বা বাসা ভাড়া করে প্রাইভেট পড়ানোর বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। অভিযানে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় ও ভিকারুননিসা নুন স্কু‹ল এ্যান্ড কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষককে কোচিং সেন্টারে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান অবস্থায় পাওয়া যায়। অভিযানে কিছু শিক্ষকের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিকভাবে প্রাইভেট পড়ানোর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলেও এসব শিক্ষক পেছন দরজা দিয়ে পালিয়ে যান। দুদক সূত্র জানায়, অভিযানের সময় মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজের ইংরেজীর শিক্ষক নিজাম কামাল শাহজাহানপুরে একটি ছয় তলা ভবনের চার তলা পর্যন্ত ভাড়া নিয়ে কোচিং ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। দুদকের অভিযান চালিয়ে তার সত্যতা খুঁজে পায়। এ সময় তিনি কোচিং সেন্টারেই অবস্থান করছিলেন। ভবনের একটি কক্ষের দরজা বন্ধ করে ভেতরে অবস্থান করলে দুদক কর্মকর্তারা অনেক অনুরোধ করলেও তিনি তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করেননি বলে জানা গেছে। অভিযানে ওই একই স্কুলের বাংলার শিক্ষক আফজাল গনী ও গণিতের শিক্ষক আবদুর রহিমের বিরুদ্ধে কোচিং ব্যবসার সত্যতা পায় দুদকের অনুসন্ধান দল। তাদের প্রত্যেকের কোচিং সেন্টারে কমপক্ষে অর্ধশত ও শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতি পাওয়া যায়।
×