ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

তৈরি পোশাক রফতানিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৩ আগস্ট ২০১৭

তৈরি পোশাক রফতানিতে এগিয়ে  যাচ্ছে দেশ

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প যাত্রা শুরু করে ষাটের দশকে। তবে সত্তরের দশক শেষের দিকে রফতানিমুখী খাত হিসেবে এই শিল্পের উন্নয়ন ঘটতে থাকে। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রফতানিমুখী শিল্পখাত। ১৯৫০ সালের দিকে পশ্চিমা দেশগুলোতে তৈরি পোশাক শিল্পের বিকাশ ঘটে। ১৯৭৪ সালে উন্নয়নশীল দেশ হতে উন্নত দেশগুলোতে আরএমজি পণ্যের রফতানি নিয়ন্ত্রণ করতে মাল্টি ফাইবার এগ্রিমেন্ট (এমএফএ) নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিতে উন্নয়নশীল দেশ হতে উন্নত দেশে রফতানি ৬% হারে প্রতি বছর বৃদ্ধি পাবে তা বলা হয়। আশির দশকের শুরুর দিকে বাংলাদেশ আরএমজি খাতে বৈদেশিক সাহায্য পাওয়া শুরু করে। এই সময়টাতে কিছু বাংলাদেশী একটি কোরিয়ান কোম্পানি হতে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ লাভ করে। প্রশিক্ষণ শেষে এই কর্মীগণ দেশে ফিরে অন্যের কারখানাতে বা নিজের উদ্যোগেই কাজ শুরু করে। ১৯৮০’র দশকের গোড়ার দিকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক নিয়মিতভাবে ইউরোপ ও আমেরিকাতে রফতানি হতে শুরু করে। এ বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা নুরুল কাদের খান তথা দেশ গার্মেন্টসের উদ্যোগ ছিল আভিযাত্রিক। সত্তরের দশক থেকে রফতানিমুখী খাত হিসেবে তৈরি পোশাক শিল্পের উন্নয়ন ঘটতে শুরু করে। ধীরে ধীরে এ শিল্পের অভ্যন্তরীণ বাজারও দ্রুত সম্প্রসারিত হতে থাকে। তখন থেকেই এ পোশাক শিল্প কর্মসংস্থানের এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে এ সেক্টরে প্রায় ২৫ লাখ শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত লোকের কর্মসংস্থানের এক দ্বার উন্মোচিত হয়েছে এ শিল্পের মাধ্যমে। সম্প্রতি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটেসটিকস রিভিউ ২০১৭’ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায় আমাদের দেশ তৈরি পোশাক রফতানিতে ২০১৬ সালে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে তৃতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। তবে একক দেশ হিসেবে সর্বোচ্চ পোশাক রফতানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। এ শিল্প থেকে গত বছর রফতানি আয় ছিল ১০.৭১ বিলিয়ন ডলার। এ থেকেই প্রমাণিত হয় এ শিল্পের সম্ভাবনা অনেক। একটা সময় ছিল যখন শিক্ষিত বেকার ছেলেমেয়েরা এ শিল্পে আগ্রহী ছিল না। কিন্তু বর্তমানে কাজের সুযোগ-সুবিধা এবং বেতন উপযুক্ত হওয়ার কারণে অনেক শিক্ষিত তরুণ পোশাক শিল্পে তাদের ক্যারিয়ার জীবন শুরু করছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৪ হাজার ৫০০টি গার্মেন্টস আছে যা ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে। বর্তমানে যে গার্মেন্টস রয়েছে তার জন্যই উপযুক্ত লোকবল পাচ্ছে না মালিক পক্ষ আর এ সেক্টরের বৃদ্ধির সঙ্গে প্রচুর দক্ষ ও শিক্ষিত লোকবল প্রয়োজন এ পোশাক শিল্পে। দেশের ক্রমবিকাশমান এ শিল্পে শুধু যে শিক্ষিত লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে তা নয়। এখানে অর্ধশিক্ষিত এবং দেশের পিছিয়ে পড়া অনেক বেকার যুবক-যুবতী তাদের শ্রম দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা খুলে দিয়েছে এ শিল্পের সম্ভাবনার দ্বার। বিভিন্ন দেশ থেকে গত বছর ৪৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে। শীর্ষ দশ রফতানিকারক দেশ গত বছর ৩৪ হাজার কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করেছে। বৈশ্বিক মোট পোশাক রফতানির চার ভাগের তিন ভাগই এই শীর্ষ দশ দেশের দখলে রয়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। তবে তৈরি পোশাক রফতানিতে বরাবরের মতো শীর্ষ অবস্থানে আছে চীন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে যথাক্রমে ইইউ ও বাংলাদেশ। তবে ২৮ দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) বাদ দিলে এককভাবে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। গত বছর ২ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয় বাংলাদেশ থেকে। যা বিশ্বের মোট পোশাক রফতানির ৬ দশমিক ৪ শতাংশ বলে উল্লেখ করা হয়। ডব্লিউটিওর প্রতিবেদনে জানানো হয়, পোশাক রফতানিতে শীর্ষ অবস্থানে থাকা চীন গত বছর ১৬ হাজার ১০০ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করেছে। বিশ্বের মোট পোশাক রফতানির ৩৬ দশমিক ৪ শতাংশই চীনের দখলে। তবে গেল বছর পোশাক রফতানি ৭ শতাংশ কমে গেছে চীনের। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ২৮ দেশের জোট ইইউর প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশ। তারা রফতানি করেছে ১১ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের পোশাক। এদিকে চতুর্থ শীর্ষ পোশাক রফতানিকারক দেশ ভিয়েতনাম গত বছর ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করেছে। তাদের প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত গত বছর ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করেছে। অবশ্য তাদের পোশাক রফতানি ২ শতাংশ কমে গেছে। বর্তমানে বিশ্বের মোট পোশাক রফতানির ৪ শতাংশ ভারতের দখলে আছে। তবে শীর্ষ দশে থাকা কম্বোডিয়াও বাংলাদেশের মতো ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এ ছাড়া গত বছর হংকং ১ হাজার ৬০০ কোটি, তুরস্ক ১ হাজার ৫০০, ইন্দোনেশিয়া ৭০০, কম্বোডিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই ৬০০ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করেছে। এর মধ্যে হংকংয়ের রফতানি প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশ কমে গেলেও শীর্ষ দশ রফতানিকারক দেশের মধ্যে ষষ্ঠ অবস্থানে চলে এসেছে। আগের বছর তাদের অবস্থান ছিল ১৫।
×