ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জলি রহমান

বাংলাদেশের ইলিশ জিআই স্বীকৃত পণ্য

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১৩ আগস্ট ২০১৭

বাংলাদেশের ইলিশ  জিআই স্বীকৃত পণ্য

বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ। যা রফতানি করে এদেশ অর্জন করছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। দেশের ইলিশের সুনাম রয়েছে সারাবিশ্বে। এখানকার মাটি ও পানি ইলিশ মাছ প্রজননের জন্য অনুকূল। তাই জামদানির পর এবার ইলিশ মাছ ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন পণ্যের স্বীকৃতি লাভ করেছে। ফলে ইলিশ বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাবে সারা বিশ্বে। ওয়ার্ল্ড ফিশের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বিশ্বের মোট ইলিশের ৬৫ শতাংশ উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। ভারতে ১৫ শতাংশ, মিয়ানমারে ১০ শতাংশ, আরব সাগর তীরবর্তী দেশগুলো এবং প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগর তীরবর্তী দেশগুলোতে বাকি ইলিশ ধরা পড়ে। ইলিশ আছে বিশ্বের এমন ১১টি দেশের মধ্যে ১০টিতেই ইলিশের উৎপাদন কমছে। একমাত্র বাংলাদেশেই ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কর্তৃক ইলিশের স্বত্ব দাবি করার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু এবার ইলিশ নিজস্ব পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেড মার্কস অধিদফতর থেকে। এর ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ইলিশ মাছের স্বীকৃতির দাবি জোরালো হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদ গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘ইলিশ বাংলাদেশের সম্পদ, আমাদের জাতীয় মাছ। এ বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে পেতে আবেদন করি। ইলিশ আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে। এটি আমাদের একার অর্জন নয়, গোটা জাতির অর্জন।’ বাংলাদেশের পণ্য আন্তর্জাতিকভাবে যেন স্বীকৃতি পায়, সে জন্য আন্দোলন করে বিল্ড বেটার বাংলাদেশ। সংগঠনটির অন্যতম উদ্যোক্তা ও ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক বিপাশা মতিন বলেন, জামদানির পর এটি হচ্ছে দ্বিতীয় পণ্য, যেটি জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেল। এটি একটি অত্যন্ত আনন্দের খবর। এর ফলে অন্যান্য আরও ৭০টি পণ্য জিআই পণ্য হিসেব স্বীকৃতি পাওয়ার পথ সুগম হলো। উপমহাদেশের ২৬ কোটি লোক ইলিশ খায়, তবে বাংলাদেশেই এই মাছ ধরা পড়ে সবচেয়ে বেশি। এবার ভরা বর্ষার কারণে মধ্য জুলাই থেকেই ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। বর্ষা এলেই বাঙালী ইলিশের স্বাদ পেতে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। এবার জুলাই থেকেই বঙ্গোপসাগর বেয়ে বাংলার নদ-নদীতে ইলিশ আসতে শুরু করেছে। চকচকে রুপালি এই মাছ এবার ৫ লাখ টন ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশা করছে মৎস্য অধিদফতর, যার আর্থিক মূল্য হবে ৫০ থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু ইলিশের বাজারমূল্যই সবটা নয়, আরও অনেক বিষয়ের গুরুত্বের কথাও এখন আলোচনায় আসছে। এগুলোকে বলা হচ্ছে খাদ্যবহির্ভূত মূল্য (নন-কনজাম্পটিভ ভ্যালু)। যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইআইইডি), বাংলাদেশ সেন্টার ফর এ্যাডভান্সড স্টাডিজ (বিসিএএস) ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশ যৌথভাবে ইলিশের খাদ্যবহির্ভূত মূল্য নিয়ে সম্প্রতি একটি গবেষণা প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বৈদেশিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির অর্থায়নে করা ওই গবেষণায় দেখা গেছে, খাদ্য ছাড়াও ইলিশের সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, সামাজিক ও জীবিকা সৃষ্টির মূল্য রয়েছে। একটি বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে ইলিশের এই চারটি বিষয়ের আর্থিক মূল্যমান পরিমাপ করেছে তারা। তাতে এর খাদ্যবহির্ভূত গুরুত্বের মূল্যমান দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৮৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এই আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সংস্থাগুলো বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে প্রাকৃতিক উৎসের মাছের মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান হচ্ছে ইলিশ। ভারতে কই মাছের বাজার বা মোট আর্থিক মূল্য সবচেয়ে বেশি হলেও তার বড় অংশ আসে কৃত্রিমভাবে চাষ থেকে। প্রাকৃতিক উৎসের মাছের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ইলিশ। শুধু আর্থিক বা খাবার মূল্য নয়, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও জীবনযাত্রার দিক থেকেও ইলিশ এই উপমহাদেশের সেরা মাছ।
×