ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফরহাদ মজহার মামলার চার্জশীট এ মাসেই

সেই অর্চনা এখন অজ্ঞাত স্থানে নজরদারিতে, ঘটানো হয়েছে গর্ভপাত

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১৩ আগস্ট ২০১৭

সেই অর্চনা এখন অজ্ঞাত স্থানে নজরদারিতে, ঘটানো হয়েছে গর্ভপাত

শংকর কুমার দে ॥ কবি-প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহারকে ‘গুরুবাবা’ সম্বোধনকারী সেই ‘সেবাদাসী’ অর্চনা রানী মিস্ত্রি এখন কোথায় ? দিনকাল কেমন কাটছে তার ? নিরাপত্তার কারণে অজ্ঞাতস্থানে বসবাস করছেন অর্চনা। রয়েছে নজরদারিতে। পেটের বাচ্চার গর্ভপাত ঘটানো হয়েছে। ফরহাদ মজহারের সঙ্গে এখনও সম্পর্ক আছে কি? অর্চনা রানীর খোঁজ খবর করতে গিয়েই জানা গেল, চলতি মাসেই কবি-প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার অপহরণ ঘটনার মামলাটির চার্জশীট দেয়া হচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা চার্জশীট দেয়ার লক্ষ্যে তদন্ত প্রায় শেষ করে এনেছে। চার্জশীটে ফরহাদ মজহারের অপহরণের মামলাটি ‘সাজানো নাটকের’ ঘটনা বলেই অভিহিত করা হচ্ছে। অপহরণের সাজানো নাটকের ঘটনার সাক্ষ্য, প্রমাণ, আলামত হিসেবে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে আদালতে দেয়া জবানবন্দী, ফরহাদ মজহারের সঙ্গে তার স্ত্রী ফরিদা আখতার ও সেবাদাসী অর্চনার টেলিফোন কথোপোকথনের অডিও, ভিডিও ইত্যাদি। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে এ খবর জানা গেছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে চার্জশীটে যেসব তথ্যের উল্লেখ করা হচ্ছে, তার মধ্যে ফরহাদ মজহারের সেবাদাসী অর্চনা রানী (২৮) নামে ওই নারীর ফোনের পরই বাসা থেকে বের হয়েছিলেন তিনি। ওই নারীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই সম্পর্ক বজায় রাখছিলেন তিনি। নিখোঁজ হওয়ার আগে এবং নিখোঁজ থাকা সময়টাতে ওই নারীর সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন ফরহাদ মজহার। তাকে ‘গুরুবাবা’ সম্বোধন করতেন অর্চনা। অর্চনা রানী নিজেকে সেবাদাসী রূপে তার কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। এ বিষয়ে মহানগর হাকিম আদালতে ও গোয়েন্দা পুলিশের কাছে জবানবন্দী দিয়েছেন অর্চনা রানী। ফরহাদ মজহার তার বান্ধবী অর্চনার সঙ্গে ঘটনার আগে-পরে মোবাইল ফোনে যে ধরনের কথা বলেছেন, কথোপকথনের রেকর্ডও করেছে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ। উভয়ের মোবাইল থেকে যে মেসেজ আদান-প্রদান করেছেন এ রেকর্ডও রয়েছে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের হাতে। গত ৩ জুলাই ভোরে তিনি মোহাম্মদপুর স্যার সৈয়দ রোডের বাসা থেকে বের হন ফরহাদ মজহার। এরপর নিখোঁজ হন। তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয় তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। তার পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও পুলিশ সদর দফতরের সমন্বয়ে ফরহাদ মজহারের কথিত অপহরণের ঘটনার তদন্ত শুরু করেন। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় এ তদন্তে। তদন্তে শনাক্ত করার হয় এক নারীর মোবাইল ফোন। এ ফোনের সঙ্গে ফরহাদ মজহারের হয়েছে কথা বার্তা। এ মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে তদন্তকারী কর্মকর্তারা অর্চনা রানী নামের ওই নারীর খোঁজ পান। ওই নারী অর্চনা হলেন ফরহাদ মজাহারের “উবিনীগ” নামের এনজিও’র সাবেক কর্মী। তিনি সহজ সরল এক নারী। বাঁচার তাগিদে অনেক কাঠখড় পুড়িয়েছেন। ২০০৫ সালে উবিনীগ নামক এনজিওতে চাকরি নেন তিনি। অর্চনা রানী ভাবছেন এই বুঝি তার এক ঠাঁই হলো। কিন্তু কাজের ফাঁকে ফরহাদ মজহারের সঙ্গে তার হয়ে উঠে ঘনিষ্ঠতা। প্রথম লালন ফকিরের আদর্শে ফরহাদ মজহারকে গুরু মেনে ফকিরী বায়াত নেন। এর থেকে শুরু হয় তাদের ঘনিষ্ঠতা। পরবর্তীতে মন দেয়া নেয়া এবং দৈহিক সম্পর্ক। মন দেয়া সম্পর্কের জের ধরে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন হলে নিজেকে সেবাদাসী রূপ ফরহাদ মজহারের কাছে আত্মসমর্পণ করেন অর্চনা রানী। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের জয়েন্ট কমিশনার আবদুল বাতেন শনিবার দৈনিক জনকণ্ঠকে জানান, ফরহাদ মজহারকে মনেপ্রাণে ভালবাসেন ও ভক্তি করেন অর্চনা। প্রায়ই অর্চনা রানীর বাসায় যাতায়াত এবং দৈহিক মেলামেশা করতেন ফরহাদ মজহার। ফরহাদ মজহার তাকে আর্থিক সহযোগিতা করতেন। বাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে সংসারের অন্যান্য খরচ দিতেন তিনি। ফরহাদ মজহার অপহরণের সাজানো নাটকের মামলাটির তদন্ত প্রায় সম্পন্ন। চলতি আগস্ট মাসের মধ্যেই তদন্ত শেষে এই মামলার চার্জশীট দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এই মামলার সাক্ষ্য, প্রমাণ, আলামতের ভিত্তিই হচ্ছে, জবানবন্দী, মোবাইল ফোনের কথোপকথনের অডিও ইত্যাদি। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, অর্চনা তার গুরুবাবা ফরহাদ মজহারকে মনেপ্রাণে ভালবাসেন ও ভক্তি করে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের পরবর্তী ঘটনাবলীতে অর্চনার টাকার জন্যই অপহরণের নাটক সাজানোর ঘটনা তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। ফরহাদ মজহার প্রায়ই অর্চনা রানীর বাসায় যাতায়াত এবং দৈহিক মেলামেশা করতেন। ২০০৭ সালে অর্চনা রানী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। ওই সময় তার অবৈধ গর্ভপাত ঘটানো হয়। ঐ গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে ঐ সময় অর্চনা রানী শারীরিক ক্ষতিগ্রস্ত হন। সুস্থ হয়ে উঠতে তার অনেক সময় লাগে। ঐ সব ঘটনা ফরহাদ মজহারের পরিবারে জানাজানি হলে অর্চনা রানী উবিনীগ থেকে চাকরি হারান। চাকরি হারালেও ফরহাদ মজহারের আর্থিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকায় অর্চনা রানীর কোন সমস্যা হয়নি। সর্বশেষ তিনি আবার ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। অর্চনা রানী মোবাইল ফোনে ফরহাদ মজহারকে বলেন, ‘আপনার সম্পর্ক এখন আমার পেটে’। ফরহাদ মজহার অর্চনা রানীকে আশ্বস্ত করেন যে, এবার তোমাকে ভাল ডাক্তার দেখানো হবে। আগের মতো তোমার শারীরিক ক্ষতি যাতে না হয়। সে বিষয়টি ফরহাদ মজহার গুরুত্বসহকারে দেখছেন। এদিকে গ্রামের বাড়িতে অর্চনা রানীর বাবা অসুস্থ হয়েছেন। বাবার চিকিৎসার জন্য অর্চনা রানীর অনেক টাকার দরকার। ফরহাদ মজহারের কাছে সেই পরিমাণ অর্থ নেই। অবশেষে অর্থের নেপথ্যে ফরহাদ মজহারের অপহরণের নাটক। এ নাটক ছিল তার পরিবারের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা আদায় করার ফন্দি। অর্চনা রানীর দেয়া তথ্য, কথোপকথন রেকর্ড ও বিভিন্ন তথ্য প্রমাণ ও জবানবন্দীর ভিত্তিতে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হন যে ফরহাদ মজহারের অপহরণের ঘটনা ‘সাজানো নাটক।’ ঘটনার দিন সকাল ১১টার দিকে ফরহাদ মজহার স্ত্রীকে ফোন করে বলেন, ৩০ লাখ টাকা তোমার কাছে রেখে দিও এবং তোমার কাছে ঐ টাকা চাইলে বলবে ডেলিভার হয়ে গেছে। ফিরে এসে বাকিটা দেখব। খুলনা গিয়ে তিনি নিউমার্কেটে (খুলনা) গেছেন ও বের হয়েছেন। ওই দিন সন্ধ্যায় খুলনা থেকে অর্চনা রানীকে তার দুইটি নম্বরের প্রথম দফা ১৩ হাজার টাকা ও দ্বিতীয় দফায় দুই হাজার টাকা পাঠিয়েছেন ফরহাদ মজহার। সময় সন্ধ্যা ৭টা ১৮ মিনিট ও সন্ধ্যা সাতটা ১৯ মিনিট। বাসের টিকেট নিজে ক্রয় করেছেন। তারও প্রমাণ তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের হাতে। তার কথিত অপহরণের সময় মাইক্রোবাসের কথা বলা হলেও এখনও ওই মাইক্রোবাসের কোন হদিস পাননি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। ফরহাদ মজহার পুলিশের কাছে ১৬১ ধারা ও আদালতে ১৬৪ ধারার জবানবন্দীতে বলেন, চোখের ওষুধ কিনতে ঘটনার দিন ভোরে রাজধানীর শ্যামলীর রিং রোডের বাসা থেকে তিনি বের হন। এরপর শ্যামলীর কাছ থেকে তিনজন অপরিচিত লোক জোর করে তাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। তার চোখ বেঁধে গাড়ির সিটে বসানো হয়। তিনি নিজেই অপহরণকারীদের টাকা দিয়ে মুক্তি পেতে চান। এর কিছুক্ষণ পরই তিনি স্ত্রীর মোবাইলে ফোন দিয়ে নিজের অপহরণ হওয়ার কথা জানান। তাকে মেরে ফেলা হবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন। পরে তিনি কয়েক দফায় ফোন দিয়ে মুক্তি পেতে ৩৫ লাখ টাকা দেয়ার কথা বলেন। হানিফ কাউন্টারের ম্যানেজার ঢাকায় এসে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীতে বলেন, ‘গফুর’ পরিচয়ে এক ব্যক্তি বাসের টিকেট কাটেন। পরে টেলিভিশন দেখে জানতে পারেন, ওই গফুরই হচ্ছেন ফরহাদ মজহার। তিনি বাসা থেকে বের হবার সময় তার সঙ্গে থাকা ব্যাগে মোবাইল ফোনের চার্জার, একটি পোশাক ছিল। বাসা থেকে বের হবার সময় তার কাছে সাড়ে ১২ হাজার টাকা ছিল। এ থেকে অনুমান করা যায় তার বাসা থেকে বের হওয়ার পেছনে অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকতে পারে। সেটাই এখন পরিষ্কার হতে চলেছে তদন্তে ও চার্জশীটে। চার্জশীটে উল্লেখ করা হচ্ছে, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে ফরহাদ মজহার তার অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনকারী নারী অর্চনাকে টাকা দিতে অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, ফরহাদ মজহার তার প্রতিষ্ঠানের সাবেক এক নারী কর্মীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। যে সময় অপহরণ হয়েছেন, সে সময় থেকে উদ্ধার হওয়া পর্যন্ত ১৮/১৯ ঘণ্টায় ফরহাদ মজহার তার স্ত্রীর সঙ্গে অন্তত ১০ বার কথা বলেছেন। একই সময়ে ৬ বার কথা বলেছেন অন্য একটি নাম্বারে। সে নম্বরে তিনি একটি ক্ষুদেবার্তাও পাঠিয়েছেন। সেই মহিলার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী রয়েছে। কিন্তু জবানবন্দীর পর থেকে নিজেকে ফরহাদ মজহারের ‘সেবাদাসী’ বলে দাবি করা সেই নারী অর্চনার জবানবন্দী অনুযায়ী তার নাম অর্চনা রানী মিস্ত্রি। বাবার নাম শংকর কুমার মিস্ত্রি। গ্রামের বাড়ি পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া। জবানবন্দীতে ঢাকার ঠিকানা হিসেবে ভাটারা থানা এলাকার নতুন বাজারের নুরের চালার একটি বাড়ির ঠিকানা দিয়েছেন অর্চনা। আদালতে দেয়া জবানবন্দীতে অর্চনা বলেন, গত ১০ জুলাই ঢাকার আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীতে অর্চনা বলেন, বাবা শংকর কুমার মিস্ত্রির সঙ্গে ঝগড়ার কারণে ২০০৫ সালের শেষ দিকে মামার বাড়ি চলে যান। ২০০৬-০৭ সালের মাঝামাঝি ফরহাদ মজহারের এনজিও উবিনীগে যোগ দেন। উবিনীগের কক্সবাজার শাখায় থাকার সময় ফরহাদ মজহারের সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছিল। এরপর ফরহাদ মজহারের কাছে ‘ফকির ও বৈষ্ণব আদর্শে’ দীক্ষা নেয়ার পর তার ‘সেবাদাসী’ হন। জবানবন্দীতে অর্চনা দাবি করেন ঈশ্বরদীতে থাকার সময়ে ফরহাদ মজহারের সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। কিন্তু ২০০৯ সালে সেই সম্পর্ক ফরহাদ মজহারের স্ত্রী ফরিদা আখতার জেনে যাওয়ায় অর্চনা উবিনীগ থেকে চাকরিচ্যুত হন। তবে ফরহাদ মজহারের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক হওয়ার কথাও স্বীকার করেন। ফরহাদ মজহার সব সময় টাকা পয়সা দিয়েও সহায়তা করতেন বলে জানান তিনি। অর্চনা জানান, প্রায় দুই বছর আগে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হন। তখন মালিবাগের একটি ক্লিনিকে গর্ভপাত করিয়েছিলেন। ফরহাদ মজহার তখন টাকা পয়সা দিয়ে সেসব ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। দুই বছর পর আবার ‘গর্ভবতী’ হলে গত এপ্রিলে তিনি তা ফরহাদ মজহারকে জানান। কিন্তু ফরহাদ মজহারের কাছে টাকা না থাকায় তিনি চিন্তিত ছিলেন। জবানবন্দীতে অর্চনা আরও জানান, ‘গত ৩ জুলাই সকাল ৬টা ২০ মিনিটে গুরুবাবা ফোন করে আমাকে জানান, তোমার টাকা সংগ্রহের জন্য বাহির হয়েছি। চিন্তা করো না। পরে গুরুবাবা অপহৃত হয়েছেন জেনে ওইদিন সকাল ১১টায় আমি গুরুবাবাকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করি, আপনি অপহৃত হয়েছেন কি না ? তিনি আমাকে বলেন, কোন সমস্যা নাই। আমি ভাল আছি।’ একইদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে গুরুবাবা আমাকে ফোন করে একটি এ্যাকাউন্ট নম্বর চান। তখন আমি তাকে এ্যাকাউন্ট নম্বর পাঠাই। তিনি আমাকে দুটি নম্বর থেকে ১৫ হাজার টাকা পাঠান। পরে আমায় ফোন করে জিজ্ঞাসা করেন, টাকা পেয়েছি কিনা? আমি বাসায় এসে মোবাইল ফোন চেক করে টাকা পাওয়ার কথা জানাই। অর্চনার সঙ্গে ফরহাদ মজহারের নিখোঁজ হওয়ার দিন ৫-৬ বার এবং তার আগের দিন ২-৩ বার ফোনে কথা হয়েছিল বলে দাবি করেন। অর্চনা ঘটনার পরদিন ৪ জুলাই চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় পারুয়া ইউনিয়নের হাজারীহাট বাজারে তার এক আত্মীয়ের বাসায় চলে যান। কিন্তু ৯ জুলাই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাকে ঢাকা নিয়ে আসেন। পুলিশ তার বাসা থেকে মোবাইল ফোন ও একটি ডায়েরিও জব্দ করে। জবানবন্দীতে অর্চনা ভাটারা এলাকায় যে ঠিকানা দিয়েছেন সেখানে তিনি ভাত বিক্রি করেন বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু পুরো এলাকা ঘুরে এই নামে কোন ভাত বিক্রেতার খবর পাওয়া যায়নি। তবে দীপালি নামে এক ভাত বিক্রেতার খোঁজ পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, এই এলাকায় তিনি ছাড়া আর কোন হিন্দু নারী ভাত বিক্রি করেন না। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার আমরাগাছিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ সোনাখালী গ্রামেও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অর্চনা গ্রামের বাড়িতেও নেই। গত ১০ জুলাই ঢাকার আদালতে জবানবন্দী দেয়ার পর থেকে অর্চনা নিরুদ্দেশ। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, আদালতে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলে সাক্ষ্য হিসেবে ঠিকই হাজির হবেন অর্চনা। তদন্তকারী গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ভাষায়, নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে অজ্ঞাতস্থানে বসবাস করছেন অর্চনা। ফরহাদ মজহারের সঙ্গে অর্চনার যেই ধরনের সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে গেছে তাতে এই জীবনে দুজনের কেউ কাউকে কোনদিনই ভুলতে পারবে না।
×