ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঘুরে এলাম চীনা মাটির পাহাড়ে

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১৩ আগস্ট ২০১৭

ঘুরে এলাম চীনা মাটির পাহাড়ে

নেত্রকোনা জেলার উত্তর প্রান্তে গারো পাহাড়ের পাদদেশ। যেখানে বয়ে গেছে টলটলে জলের সোমেশ্বরী নদী আর দিগন্ত হারিয়েছে। এখানে রয়েছে অসংখ্য লাল, গোলাপী, বেগুনী চীনামাটির পাহাড়। ছোট্ট একটি জায়গার পরতে পরতে বেড়ানোর মতো অনেক জায়গা রয়েছে দুর্গাপুরে। দুর্গাপুরের বিরিশিরি ইউনিয়নে অবস্থিত আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমি। এ অঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর (গারো, হাজং, কোচ, ডালু, বানাই প্রভৃতি) জীবন যাত্রার নানা নিদর্শন। বেড়ানোর জন্য অপূর্ব একটি জায়গা। দিনটি ছিল শুক্রবার। আমরা প্লান করি ট্রেনে চড়ে যাব। তবে এর কারণও ছিল বটে। নেত্রকোনা জেলার সড়কের বেহাল দশার কারণেই আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হই। সকাল ৬টায় ট্রেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমরা যাত্রা করি। ক্যাম্পাস থেকে থেকে ময়মনসিংহ স্টেশনের দূরত্ব ৪ কিমি। স্টেশনে যেতে হলে ৫ টার আগেই ক্যাম্পাস থেকে বের হতে হবে। সারাদেশের বিভিন্ন রক্তদাতা সংগঠনের প্রায় দুই শতাধিক যাত্রী নিয়ে সকাল ৬টায় যাত্রা করে নেত্রকোনাগামী ট্রেন। সবাই মিলে সম্মিলিত গানে মেতে ছিল পুরো ট্রেনের বগী। এ যেন ছিল আনন্দের মিছিল। সঙ্গে ছিল দু’একজন কোমর দুলানো নাচ আর আনন্দের চিৎকারে মাতামাতি। ঈশ্বরগঞ্জ, জালশুকা, মোহনগঞ্জ, পূর্বধলাসহ ৭টি স্টেশন পার করে আমরা সাড়ে সাড়ে ৮টার দিকে ঝারিয়া স্টেশনে পৌঁছায়। স্টেশন থেকে এরপর হেঁটে রওনা দেই আমরা নৌকা ঘাটের দিকে। একসঙ্গে হাঁটছেন রক্ত যোদ্ধারা। আশপাশের তাকিয়ে থেকে দেখছেন সবাই। কারণ সবার পোশাকই লাল। ট্যুরের আগে ড্রেস কোড হিসেবে লাল পোশাকের কথা বলা হয়েছিল। রক্তের রং লাল বলে এমন রঙের পোশাক বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল। পাহাড়ে সবুজের নিচ দিয়ে আমাদের লঞ্চ চলছে। গল্প, গান আর চিৎকার সবাই প্রচুর পরিমাণে ব্যস্ত। এক পাশ থেকে একটি গান শেষ হওয়ার আগেই অন্যপাশ থেকে আরেকটি গান শুরু হয়। নতুন গানের সঙ্গে আবার সুর মেলানো। নদী পথের ড্রেজিং করে চুনামাটি, সাদা বালি উঠানো দেখলাম। নদীর মাঝে বালুচর দেখলাম। আমাদের লঞ্চ দুই বার আটকে যাওয়ার পরিস্থিতিও হয়েছিল। অল্পের জন্য রক্ষা পাই আমরা। দেখতে দেখতে বেলা ১২টার দিকে আমরা দুর্গাপুর বিজিবি ঘাটে পৌঁছে যাই। এখান থেকে একটু অদূরেই বিরিশিরি। কিন্তু আমরা প্রথমে ওদিকে না গিয়ে আমরা সবাই মিলে বিজয়পুরের সীমান্তের দিকে রওনা করি। আঁকাবাঁকা পাহাড়ী রাস্তা দিয়ে বিজয়পুরে যাই। ইন্ডিয়া সীমান্ত চোখের সামনে। পা বাড়ালেই ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্য। যা যা দেখবো সবই নদীর ওপারে। কিন্তু সীমান্ত অতিক্রম করা যাবে না। তারপর বিজিবি ক্যাম্পের পাশে ওয়াচ টাওয়ারের মতো ছোট পাহাড়। এর নাম কমলার পাহাড়। এই পাহাড়ে হাজংদের সঙ্গে কথা হলো। এরপর গেলাম পর রানী খং নামে এক জায়গায়। এখানে একটা স্কুল ও খ্রিস্টানদের উপাসনালয় আছে। নেত্রকোনায় কাঠ পাচারের এক মজার উপায় শুনলাম এখানে বসবাসরত এক বাঙালীর মুখে। সে জানাল, পাহাড় থেকে গাছ কেটে কাঠের গুঁড়ি পাহাড় থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। ঢাল বেয়ে সে গুঁড়ি এসে পড়ে। রাতে চোরাকারবারীরা এসে কাঠ নিয়ে যায়। এরপর দুপুরের খাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়ি গারো পাহাড়, চিনামাটির পাহাড়, রানী খং মিশন চীনামাটির পাহাড়ের দিকে। শ্বেত শুভ্র চিনামাটির পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে বয়ে গেছে অপরূপ নীলের উৎস সোমেশ্বরী নদী। এই নদীর নীল জলে সাদা চিনামাটির পাহাড়ের প্রতিবিম্ব যেন এক অলৌকিক সৌন্দর্যের প্রতীক। এক কাথায় অসাধারণ। ঘুরে দেখতে দেখতে প্রায় বিকাল সাড়ে ৫টা বেজে গেছে। নিস্তেজ সূর্যও হেলে পড়ছিল ধীরে ধীরে। আমাদের হাতেও সময় কম। রাত সাড়ে ১০ টার টার আগেই আবার ঝারিয়া স্টেশনে ফিরতে হবে। কারণ সাড়ে ১০টায় আমাদের ফিরতি ট্রেন। সময় স্বল্পতার কারণে সাগর দীঘি দেখা হয়নি। মন খারাপ করেই ফেরত চলে আসলাম, তবে যা দেখেছি তা স্মৃতিময় হয়ে থাকবে আজীবন। আবুল বাশার মিরাজ
×