ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী

শোকাবহ আগস্ট ॥ বিনম্র শ্রদ্ধার কাব্য পাঠ

প্রকাশিত: ০৩:১৮, ১৩ আগস্ট ২০১৭

শোকাবহ আগস্ট ॥ বিনম্র শ্রদ্ধার কাব্য পাঠ

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্ব ইতিহাসের এক কলঙ্কময়, নৃশংস ও কঠিন শোকের দিন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের প্রায় সকল সদস্যের শাহাদাতবরণের দিন। জুন ২০১২ সালে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থের ১২৬ পৃষ্ঠা থেকে বঙ্গবন্ধুর কিছু বক্তব্য ও বক্তৃতার উদ্ধৃতি দিয়েই এই ক্ষুদ্র নিবন্ধের সূচনা। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর জনগণ যখন বঙ্গবন্ধুদের মতো তরুণ নেতাদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত করত যে, দেশ স্বাধীন হয়েছে তবু মানুষের দুঃখ-কষ্ট দূর হবে না কেন? দুর্নীতি বেড়ে গেছে। খাদ্যভাব দেখা দিয়েছে। বিনা বিচারে রাজনৈতিক কর্মীদের জেলে বন্দী করা হচ্ছে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মুসলিম লীগ নেতারা মানবে না। পশ্চিম পাকিস্তানে শিল্প কারখানা গড়া শুরু হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের দিকে নজর দেয়া হচ্ছে না। রাজধানী করাচী। সব কিছুই পশ্চিম পাকিস্তানে। পূর্ব বাংলায় কিছু নেই। এসব বিষয় বঙ্গবন্ধু যখন তাঁর শ্রদ্ধাভাজন পিতাকে বলতেন পিতার জবাব ছিল ‘আমাদের জন্য কিছু করতে হবে না। তুমি বিবাহ করেছ, তোমার মেয়ে হয়েছে, তাদের জন্য তো কিছু একটা করা দরকার।’ বঙ্গবন্ধু বাবাকে বলতেন ‘আপনি তো আমাদের জন্য জমিজমা যথেষ্ট করেছেন, যদি কিছু না করতে পারি বাড়ি চলে আসব। তবে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া চলতে পারে না।’ দেশের মাটি ও মানুষকে হৃদয়ের গভীরে ধারণের মহান নেতার এমন দৃষ্টান্ত বিশ্ব ইতিহাসে প্রকৃত অর্থেই বিরল। জীবনে বুদ্ধিমত্তা ও প্রজ্ঞার উৎকর্ষতা অর্জন-লগ্ন থেকে আত্মত্যাগের মহিমান্বিত যে ধারাবাহিক পরিক্রমায় বঙ্গবন্ধু নিজেকে ঋদ্ধ করেছিলেন, জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে তার যথার্থ স্বাক্ষর বঙ্গবন্ধুকে আজ বিশ্বদরবারে ‘চিরঞ্জীব’ মর্যদায় সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। কবি অন্নদাশংকর রায়ের সেই বিখ্যাত এবং বহুল প্রচারিত ও উচ্চারিত কবিতা- ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান/ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।/দিকে দিকে আজ অশ্রুগঙ্গা রক্তগঙ্গা বহমান/তবু নাহি ভয়, হবে হবে জয়, জয় মুজিবুর রহমান’ আজ যেন নতুন মাত্রিকতায় নির্ভীক ত্যাগের চেতনা অব্যাহত সঞ্চারণ করে চলেছে। স্বাধীনতা অর্জন যেমন কঠিন এবং বিশাল রক্তক্ষয়ী ফসল, তেমনি স্বাধীনতা রক্ষা ও একে অর্থবহ করে তোলা অধিকতর কষ্টকর। বঙ্গবন্ধুর জীবন, দর্শন এবং রাজনৈতিক জীবন প্রবাহের মূলেই ছিল লোভ, হিংসা ও অহঙ্কারকে নিধন করে সততা, মানবিকতা, অসাম্প্রদায়িকতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রজ্বলন ঘটিয়ে মেহনতী মানুষের হৃদয় জয় করা এবং সামগ্রিক অর্থে একটি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সকলের জন্য সুখী ও কল্যাণকর জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। ‘একদিন সকালে আমি ও রেণু বিছানায় বসে গল্প করছিলাম। হাচু ও কামাল নিচে খেলছিল। হাচু মাঝে মাঝে খেলা ফেলে আমার কাছে আসে আর ‘আব্বা’ ‘আব্বা’ বলে ডাকে। কামাল চেয়ে থাকে। এক সময় কামাল হাচিনাকে বলছে, ‘হাচু আপা, হাচু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি।’ আমি আর রেণু দু’জনই শুনলাম। আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে যেয়ে ওকে কোলে নিয়ে বললাম, ‘আমি তো তোমারও আব্বা।’ কামাল আমার কাছে আসতে চাইত না। আজ গলা ধরে পড়ে রইল। বুঝতে পারলাম, এখন আর ও সহ্য করতে পারছে না। নিজের ছেলেও অনেকদিন না দেখলে ভুলে যায়! আমি যখন জেলে যাই তখন ওর বয়স মাত্র কয়েক মাস। রাজনৈতিক কারণে একজনকে বিনাবিচারে বন্দী করে রাখা আর তার আত্মীয়স্বজন ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে দূরে রাখা যে কত বড় জঘন্য কাজ তা কে বুঝবে? মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থের উল্লেখিত পঙ্ক্তিটি পাঠ করলে এক যুগেরও দীর্ঘসময় বঙ্গবন্ধুর বন্দী জীবনের যে যন্ত্রণাগাথা, তা পাঠ বা শ্রবণ করে যে কোন বিবেকবান মানুষ আবেগতাড়িত হবেন। অশ্রুসজল নয়নে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির কর্মযজ্ঞের বিশাল প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগের ক্যানভাস বিশ্লেষণে নিজেকে নিবেদন করবেন- এটিই স্বাভাবিক। বঙ্গবন্ধু রচিত অসমাপ্ত আত্মজীবনীর প্রতিটি পৃষ্ঠায় বাঙালী জাতির আত্মপ্রত্যয়, অধিকার আদায় এবং সকল ক্ষেত্রে বঞ্চনার বিরুদ্ধে সোচ্চার আন্দোলন সংগ্রাম ও বাঙালীর বিরুদ্ধে সামরিক, বেসামরিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক নানাবিধ ষড়যন্ত্রের করুণ পটভূমি এবং প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর উপলব্ধি, উর্বর চিন্তা চেতনা, নিখাদ দেশপ্রেম ও বাংলার মাটি এবং মানুষের প্রতি মমত্ববোধ তাঁর মহান আত্মত্যাগে ভাস্বর হয়ে ওঠে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণে ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ এর মাধ্যমে মহান মুক্তি যুদ্ধের রোডম্যাপ রচনা করেন। ১৯৭১ সালে ৫ এপ্রিল নিউজ উইক ম্যাগাজিন বঙ্গবন্ধুকে ‘রাজনীতির কবি’ (চড়বঃ ড়ভ চড়ষরঃরপং) হিসেবে আখ্যায়িত করে মন্তব্য করেছে, ‘মুজিব মৌলিক চিন্তার অধিকারী বলে ভান করেন না। তিনি একজন রাজনীতির কবি, প্রকৌশলী নন।’ ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিয়েছিলেন- ‘ভাইয়েরা আমার, আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, মানুষের অধিকার চাই। প্রধানমন্ত্রিত্বের লোভ দেখিয়ে আমাকে নিতে পারেনি। ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে দিতে পারেনি। আপনারা রক্ত দিয়ে আমাকে ষড়যন্ত্র-মামলা থেকে মুক্ত করে এনেছিলেন। সেদিন এ রেসকোর্সে আমি বলেছিলাম, রক্তের ঋণ আমি রক্ত দিয়ে শোধ করব। আজও আমি রক্ত দিয়েই রক্তের ঋণ শোধ করতে প্রস্তুত।’ বঙ্গবন্ধু তাঁর এই ঐতিহাসিক বক্তব্যকে আবারও প্রতিষ্ঠিত করলেন ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট জীবনের শেষ রক্তবিন্দু বিসর্জন দিয়ে। আমরা জানি, ইউরোপের নাট্যজগতে শেক্সপিয়ারের পর যিনি সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি হলেনÑ হেনরিক ইবসেন। সমাজের তথাকথিত উঁচুতলার ক্ষমতাবান মানুষের শোষণ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে শোষিতের যন্ত্রণার উচ্চারণকে বিকশিত করার লক্ষ্যে তিনি ‘অহ ঊহবসু ড়ভ ঃযব চবড়ঢ়ষব’ নাটকটি রচনা করে নির্যাতিত সমাজকে যে বার্তাটি পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিলেন তা ছিল ‘ঞযব ংঃৎড়হমবংঃ সধহ রহ ঃযব ড়িৎষফ রং ঃযব সধহ যিড় ংঃধহফং সড়ংঃ ধষড়হব.’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পাঠসমাপ্তে ইবসেনের নাটকের বার্তাটি সবচেয়ে প্রণিধানযোগ্য বিষয়ে বিবেচিত হয়। অসামান্য সাহসী মহাপুরুষ হিসেবে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা এবং বাঙালী জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর মতো এত ত্যাগের ইতিহাস সৃষ্টি অন্য কারও পক্ষে সম্ভব হয়নি। এজন্য বঙ্গবন্ধু বাঙালী জাতির মহান কিংবদন্তি নেতা ও বাঙালী জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারবর্গের ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকা-ের পর প্যারিসের বিখ্যাত সংবাদপত্র ‘লা মঁদে’ (খব গড়হফব) রবার্ট এসকারপি নামে এক লেখকের মন্তব্য ছিল- ‘বড় নেতা সেই যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও বড় হতে থাকে। তাঁকে খুন করে সমাজ থেকে নির্বাসিত করা যায় না। সে বারংবার ফিরে আসে। প্রয়াত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই মাপের নেতা।’ ইতিহাসের স্রোত যে বিকল্প কোন অপকৌশলে শাসক-শক্তির ইচ্ছের অনুকূলে প্রবাহিত করা যায় না অথবা ইতিহাস যে কারও ক্রীতদাস নয়, সমাজ-সভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারায় ইতিহাসে বারবারই সেই অমোঘ সত্যই প্রতিষ্ঠিত। দুঃখজনক হলেও সত্যÑ ‘ইতিহাসের শিক্ষাই হচ্ছে এই যে কেউ ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে না।’ বস্তুতপক্ষে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘকাল ইতিহাস বিকৃতির নগ্ন দাপটে সামরিক শাসকগোষ্ঠীর ধর্মান্ধ ও পাকিস্তান প্রীতির প্রতি তাদের আগ্রহ ও আনুগত্যের বিপরীতে জাতিকে বিশেষ করে জাতির তরুণপ্রজন্ম ও শিশু-কিশোরদের অবগত করার লক্ষ্যেই স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশাল এবং বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অসাধারণ সফল চিত্রের বিষয়সমূহ বার বার উচ্চারণ এবং উপস্থাপন করা অতীব প্রয়োজন বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এটি সর্বজনবিদিত যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে যে কলঙ্ককজনক কালো অধ্যায় সূচনা, তারই ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত বাহিনীর কূট প্ররোচনায় তৎকালীন সামরিক রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৭৮ সালের দ্বিতীয় ঘোষণাপত্র আদেশ নং-৪-এর দ্বিতীয় তফসিল বলে সন্নিবেশিত সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানে অতি জঘন্য ও ন্যক্কারজনকভাবে ইতিহাসের সাবলীল ও শাশ্বত ধারাকে পাল্টানোর অশুভ প্রয়াস চালানো হয়েছে। পবিত্র সংবিধানের শুরুতেই যে প্রস্তাবনা লিপিবদ্ধ ছিল, তার দ্বিতীয় লাইনে ‘জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রাম ( ধ যরংঃড়ৎরপ ংঃৎঁমমষব ভড়ৎ হধঃরড়হ ষরনধৎধঃরড়হ)’ উল্লেখের মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে সকল আন্দোলন সংগ্রামকে স্বীকৃতি দেয়ার অভূতপূর্ব যুক্তি ও চেতনা সক্রিয় ছিল। ১৯৭৮ সালে সংবিধানে সন্নিবেশিত করা হয়- ‘জাতীয় স্বাধীনতার জন্য ঐতিহাসিক যুদ্ধ’ (ধ যরংঃড়ৎরপ ধিৎ ভড়ৎ হধঃরড়হধষ রহফবঢ়বহফবহপব) এবং এর মাধ্যমে ১৯৭১ সালে চূড়ান্তভাবে সংঘটিত মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামকে শুধু নয় মাসের একটি নির্দিষ্ট সময়ের ফ্রেমে বন্দী করার ঘৃণ্য কূটকৌশলের আশ্রয় নেয়া হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ সংগ্রামী জীবন, জেল-জুলুম, নির্যাতন-নিপিড়ন এবং ত্যাগ তিতিক্ষার যে গৌরবগাথা, তাকে ম্লান ও আড়াল করার লক্ষ্যে ইতিহাস বিকৃতির এক অনাকাক্সিক্ষত, অনভিপ্রেত ও অশুভ ষড়যন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। বঙ্গবন্ধুর শ্রেষ্ঠত্ব, তিনি শুধু বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের একজন স্বপ্নদ্রষ্টাই ছিলেন নাÑ অনন্যসাধারণ এক ঐক্যের বন্ধনে বাঙালী জাতিকে একতাবদ্ধ করে বাঙালী জাতির স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদান করতে সক্ষম হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আগে ও পরে বহু খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ এসেছেন কিন্তু এমন করে কেউ বাঙালীকে জাগাতে পারেননি। তাই বঙ্গবন্ধুকে প্রতিষ্ঠার জন্য শক্তি প্রয়োগের প্রয়োজন পড়ে না, তেমনি তাঁকে ইতিহাস থেকে নির্বাসিত করাও অসম্ভব। ভারতের মহাত্মা গান্ধী, যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন, চীনের মাও সেতুং, ভিয়েতনামের হো চি মিন, কিউবার ফিদেল ক্যাস্ট্রো, ঘানার পেট্রিস লুমাম্বা ও কওমী নক্রুমা, দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা, সোভিয়েত ইউনিয়নের লেনিন, যুগোস্লাভিয়ার মার্শাল টিটোর মতো বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও তাঁর অবদানের জন্য বিশ্ব-ইতিহাসের এক অনিবার্য স্থান যথার্থই দখল করে আছেন। এটিও সত্য যে, ইন্দোনেশিয়ায় স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য ড. আদম মালিক নয়, মহান স্বাধীনতা আন্দোলন সংগঠনের জন্য জাতির পিতা হিসেবে সুকর্ণই প্রতিষ্ঠিত। বঙ্গবন্ধুকে স্বীকৃতি দিতে গিয়ে ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট লন্ডনের ‘দি ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস’ উচ্চারণ করেছিল, ‘এই করুণ মৃত্যুই যদি মুজিবের ভাগ্যে অবধারিত ছিল তাহলে বাংলাদেশের জন্মের মোটেই প্রয়োজন ছিল না।’ ১৯৭৫-এর ২৮ আগস্ট লন্ডনের ‘দি লিসনার’ পত্রিকায় বিবিসির সংবাদদাতা ব্রয়ান ব্যারনের ভবিষ্যতবাণী-’ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের হৃদয়ে উচ্চতর আসনেই অবস্থান করবেন। তাঁর বুলেট-বিক্ষত বাসগৃহটি গুরুত্বপূর্ণ ‘স্মারক-চিহ্ন এবং কবরস্থানটি পুণ্যতীর্থে’ পরিণত হবে আজ সত্যবাণীতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রগতিশীল সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবী আবুল ফজলের ভাষায়, বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ও সর্বাধিক উচ্চারিত নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের ইতিহাসের তিনি শুধু নির্মাতা নন, তাঁর প্রধান নায়কও। ঘটনাপ্রবাহ ও নিয়তি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বারবার নায়কের আসনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। বলা যায়, যেন হাত ধরে টেনে নিয়ে গেছে। শত চেষ্টা করেও তাঁর নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা যাবে না। শেখ মুজিব ইতিহাসের এক অচ্ছেদ্য অঙ্গ। বাংলাদেশের শুধু নয়, বিশ্ব-ইতিহাসেরও। আজকের এই শোকের মাসে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ এবং তাঁর ত্যাগের মহিমাকে সমগ্র বিশ্ব কিভাবে মূল্যায়ন করেছে তার সামান্য কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মাত্র। লেখক : শিক্ষাবিদ, উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
×