ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হবিগঞ্জের খোয়াই নদীর পানি আবারও ফুঁসে উঠছে

প্রকাশিত: ২২:৩২, ১২ আগস্ট ২০১৭

হবিগঞ্জের খোয়াই নদীর পানি আবারও ফুঁসে উঠছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, হবিগঞ্জ ॥ সম্ভাব্য একটি বড় ধরনের দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাবার পর ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে হবিগঞ্জের খোয়াই নদী আবারও ফুঁসে উঠেছে। স্থানীয় পাউবো’র উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এল,এম সৈকত জনকন্ঠকে জানান, আগের দিন শুক্রবার রাত থেকে খোয়াই নদীর পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় আজ শনিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত ভারত-বাল্লা সীমান্তবর্তী পয়েন্ট এবং হবিগঞ্জ শহরতলীর মাছুলিয়া পয়েন্ট থেকে প্রাপ্ত পরিমাপ অনুযায়ী সংশ্লিস্ট নদীর পানি এখন বিপদ সীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি জানান, ভারতের ত্রিপুরা সহ অঅরও কয়েকটি স্থানে গতকাল ভারী বৃষ্টিপাত হলেও শনিবার সকাল থেকে বৃষ্টির আগ্রাসন অনেকটা কমে আসায় এবং হবিগঞ্জেও গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হওয়ায় পানি কমতে পারে। তবে আবারও ভারী বৃষ্টি হলে খোয়াইতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিপদেও ঝুকি থাকতেই পারে। এদিকে এই পরিস্থিতিতে যে কোন সময় হবিগঞ্জ শহর প্রতিরক্ষা ও শহরতলী সংলগ্ন বাঁধের একাধিক স্থানে ভাঙ্গনের আশংকায় জনসাধারনকে সর্তকবানী দিয়ে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শনিবার সকাল থেকে হবিগঞ্জ শহরে মাইকিং অব্যাহত রয়েছে। সাধারন মানুষও রয়েছে সতর্কাবস্থায়। নবাগত জেলা প্রশাসক মনীষ চাকমা জনকন্ঠকে জানিয়েছেন, হবিগঞ্জ শহর ও আশপাশ এলাকার সাধারন মানুষ এবং জানমাল রক্ষায় প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তিনি আরও জানান, তার নের্তৃত্বে সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ খোয়াই বাঁেধর সম্ভাব্য ঝঁকিপূর্ণ স্থানগুলো সার্বক্ষনিক তদারকি করছেন। ইতিমধ্যে শনিবার সকালে হবিগঞ্জ শহরের রামপুর কিবরিয়া ব্রীজ সংলগ্ন খোয়াই বাঁধের একটি অংশ ভাঙ্গনের সম্ভাবনা থাকায় জেলঅ প্রশাসক মনীষ চাকমার উপস্থিতিতে স্থনীয় লোকজনের সহায়তায় পাউবো’র কর্মকর্তারা বালুর বস্তা ফেলে আপাতত বিপদ মুক্ত করেছেন। এছাড়া একই বাঁধে আরওকয়েকটি সম্ভাব্য ভাঙ্গন দেখা দিতে পাওে,এমন শংকায় বালুর বস্থা সহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী ফেলা অব্যাহত আছে। বলাবাহুল্য, গতকাল শুক্রবার রাত ১০টা পর্যন্ত এই নদীর পানি শহরতলীর মাছুলিয়া নামক স্থানের পয়েন্টে অকসাৎ বিপদ সীমার ৯০ সেন্টি মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তৎসংলগ্ন বাঁধ এলাকাস্থ বসতি বাড়ী-ঘরের মানুষগুলোর মাঝে ছড়িয়ে পড়ে আতংক। তবে হবিগঞ্জের নবাগত চৌকস জেলা প্রশাসক মনিষ চাকমা এই রাতেই তার অধীনস্থ কর্মকর্তা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক উপসচিব মোঃ শফিউল আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ এমরান হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ,টি,এম আজহারুল ইসলাম, ও পাউবো’ কর্মকর্তা মোঃ সৈকত সহ দৈনিক হবিগঞ্জ সমাচার পত্রিকার সম্পাদক গোলাম গোলাম মোস্তফা রফিক, চ্যানেল আই প্রতিনিধি চৌধুরী মোঃ ফরিয়াদ, হবিগঞ্জ অনলাইন প্রেসক্লাব সভাপতি ও দৈনিক জনকন্ঠের হবিগঞ্জ প্রতিনিধি রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিনকে নিয়ে হবিগঞ্জ শহরতলীর তেতৈয়া এলাকাস্থ সহ বেশ কয়েকটি খোয়াই নদীর সম্ভাব্য ভাঙ্গনের আশংকা রয়েছে এমন দুর্বল স্থানগুলো পরিদর্শন করেন। নিঝুম অন্ধকার আর পিচ্ছিল পথ ও বাঁধের ওপর দিয়ে তিনি নিজেই হেঁটে হেঁটে এই সব দুর্বল স্থানগুলো পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের নিয়ে দেখতে পান দ্রুত পানি শুধু বাড়ছেই না বরং ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের সৃষ্ট এই পানিতে বিদ্যুতের অসম্ভব গতিও তার দৃষ্টি কাঁড়ে। সময়ে সময়ে কয়েকটি স্থানে বাঁধের মাটিও ভেঙ্গে পড়ছে। এতে তিনি কিঃকর্তব্য বিমুঢ় হয়ে পড়েন। এসময় জেলা প্রশাসক মনিষ চাকমা তাৎক্ষনিক সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মাজনারানা খাতুন এর সাথে কথা বলে পাউবো’র কর্মকর্তাদেরকে সব ধরনের প্রস্তুতি রাখার নির্দেশ দেন। শুধু তাই নয়, এই বাঁধে সম্ভাব্য ভাঙ্গন হতে পারে এমন সুনিদিষ্ট কয়েকটি স্থানে বালুর বস্তা মজুদ রাখার জন্য পাউবো কর্মকর্তা সহ যে কোন কুচক্রী মহলের কবল থেকে অপ্রত্যাশিত যে কোন অঘটন রোধে পুলিশ মোতায়েনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এসপি বিধান ত্রিপুরাকেও অনুরোধ করেন। এদিকে জেলা প্রশাসক মনীষ চাকমা এই সব স্থান পরিদর্শন শেষে রাত সাড়ে ১০টার দিকে খোয়াই নদীর বর্তমান অবস্থা নিয়ে হবিগঞ্জ সার্কিট হাউজ ওয়েটিং কক্ষে এক জরুরী বৈঠক করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, ওই তিনজন সাংবাদিক নেতা এবং আওয়ামীলীগ নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী ছাড়াও জেলা প্রশাসন ও পাউবো’র কর্মকর্তাগণ। এসময় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় খোয়াইতে সৃষ্ট ফুঁেস উঠা পানির অবস্থা আরও কয়েক ঘন্টা পর্যবেক্ষণ করা এবং সেই সাথে প্রয়োজনে শহরবাসীকে সতর্ক করার জন্যও জেলা তথ্য অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে তলব করে আনা হয়। জেলা প্রশাসক মনীষ চাকমা এই প্রতিনিধিকে বলেন, মহাল সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসা রেখেই হবিগঞ্জ শহর ও সাধারন মানুষের জানমাল রক্ষায় তিনি ও তার প্রশাসন বদ্ধ পরিকর। আর এ কারনেই সম্ভাব্য বিপদের আশংকায় জনসাধারনের জ্ঞাতার্থে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শহরে মাইকিং করা হচ্ছে।
×