ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ক্রেডিট কার্ড চুরির ট্রেনিং ক্লাস

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ১২ আগস্ট ২০১৭

ক্রেডিট কার্ড চুরির ট্রেনিং ক্লাস

সেলিনা লারসন, সিএনএন টেক ছয় সপ্তাহের একটা প্রোগ্রাম আছে। রুশ ভাষায় শেখানো হয়। তাতে বিক্রির জন্য বৈধ ক্রেডিট কার্ডের ড্যাটা খুঁজে বের করা এবং হ্যাক করে পেপল এ্যাকাউন্টে ঢুকে পড়ার কৌশলের ওপর লেকচার দেয়া হয়। সিকিউরিটি ফার্ম ডিজিটাল ম্যাডোজ পাঁচজন ইনস্ট্রাক্টরের শেখানো এবং সুগভীর ওয়েব ফোরামে বিক্রি করে দেয়া এমন সাইবার ক্রাইম ক্লাসের সন্ধান পেয়েছে। ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি, ‘কার্ডিং’ বলে অভিহিত এক অপরাধমূলক ক্রিয়াকলাপ, কিংবা পেমেন্ট কার্ড ড্যাটা চুরি করে ব্যবহার করার মতো ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে এক গবেষণায় ব্যাপারটা বেরিয়ে এসেছে। ডিজিটাল শ্যাডোজের স্ট্র্যাটেজি বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট রিক হল্যান্ড জানান, ক্লাসের পাঠক্রম এ জাতীয় বেশিরভাগ ট্রেনিং উপকরণের মতো নয়। পিডিএফের মতো অন্যান্য ট্রেনিং যা অপরাধীরা অনেক সস্তায় কিনতে পারে সেগুলোর তুলনায় এই ট্রেনিং অধিকতর গভীর, অনুপুঙ্খও ব্যাপক। উপকরণসহ এই ক্লাসের খরচ প্রায় ৯৪৫ ডলার। এতে ২০টি ভিন্ন ভিন্ন লেকচার থাকে এবং ইন্সট্রাক্টরদের সঙ্গে ছাত্রদের চ্যাট করার সুযোগ আছে। কার্ডিং হলো এক অতি প্রচলিত ধরনের সাইবার অপরাধ। চোরেরা কোম্পানিগুলোর কম্পিউটার হ্যাক করে অরক্ষিত ড্যাটাবেস থেকে ক্রেডিট কার্ড ড্যাটা চুরি করে কিংবা গুগল সার্চ দিয়ে খুঁজে বের করা যাবে না এমন লুকানো সাইটের ডার্ক ওয়েব থেকে স্রেফ কিনে নিতে পারে। ডিজিটাল শ্যাডোসের হিসাবে আগামী বছর ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতিতে ২৪০০ কোটি ডলার খোয়া যাবে। অপরাধীরা অন্যান্য ড্যাটা ভেদ করে ই-মেইল ও পাসওয়ার্ডও হাতিয়ে নিতে এবং সেগুলো ব্যাংকিং ওয়েবসাইটে যাচাই করে নিতে পারে। দৃষ্টান্ত দিয়ে বলা যায় যে লিংকডইন, ড্রপকন্স ও এডোব থেকে বিভিন্ন পরিচয় এর আগে অনলাইনে ফাঁস হয়েছে। ডিজিটাল শ্যাডোস জানায় যে, ক্রেডিট কার্ড চুরির যে ট্রেনিং কোর্স আছে তাতে ক্রেডিট কার্ড ড্যাটা পেতে ছয়টি আলাদা আলাদা সাইটের একটিতে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এগুলোর দুটিতে ১২ লাখেরও বেশি কার্ড নম্বর বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। সেগুলোর অর্ধেকই যুক্তরাষ্ট্রের। চুরি করা কার্ডের সাহায্যে হ্যাকাররা অনেক সময় ভ্যাকেশন প্যাকেজ, প্লেনের টিকেট, হোটেল রিজার্ভেশন বা গিফট কার্ড কেনে। ডিজিটাল শ্যাডোস এই স্কিমটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছে প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের একজন সহকারী এ্যাটর্নি নরম্যান বারবোসার মতে, জনসাধারণের নেটওয়ার্কের সাহায্যে কাজ করা ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতদের এক সাধারণ ঘটনা। বারবোসা বিশ্বের অন্যতম কুখ্যাত ক্রেডিট কার্ড জালিয়াত রোমান ভ্যালেরেভিচ সেলেজনেভের বিচারে সাহায্য করেছিলেন। সেলেজনেভ লাখ লাখ ক্রেডিট কার্ড নম্বর চুরি করে অন্য অপরাধীদের কাছে বিক্রি করেছিলেন। তার এই চৌর্যবৃত্তির কারণে সংঘটিত জ্ঞাত লোকসানের পরিমাণ ১৭ কোটি ডলার। গত এপ্রিল মাসে তার ২৭ বছর জেল হয়ে যায়। সেলেজনেভ তার চুরি করা প্রোডাক্টের চাহিদা বৃদ্ধির জন্য চোরাই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ওপর প্রশিক্ষণ দিতেন। প্রশিক্ষণটা অবশ্য নিতান্তই সাদামাটা। তবে ওটা তার ব্যবসার প্রসারে সাহায্য করেছিল। তিনি হ্যাকারদের বিভিন্ন ফোরামে তার প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন দিতেন। বারবোসা বলেন, এই শ্রেণীর কার্ড হ্যাকারদের চিহ্নিত করতে পারা অপেক্ষাকৃত সহজ। কার্ড হ্যাকার ও বিক্রেতারা রাশিয়া এবং পূর্ব ইউরোপের লোক আর ক্রেতারা প্রায়শই থাকে যুক্তরাষ্ট্রে। এরা তাদের চৌর্যবৃত্তিতে ক্রমশ চতুর হচ্ছে এবং খুব কমই ভুল করছে।
×