ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্লাস্টিকের তৈরি মাদুরের কদর বেড়েছে

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ১২ আগস্ট ২০১৭

প্লাস্টিকের তৈরি মাদুরের কদর বেড়েছে

গ্রাম-গঞ্জে, শহর-বন্দরে প্লাস্টিকের তৈরি মাদুরের কদর বেড়েছে। মাদুরকে বাহারি রঙে, ডিজাইনে, ফুলের আদলে আরও আকর্ষণীয় করা হচ্ছে। প্লাস্টিকের মাদুর মেশিনের সাহায্যে নিখোঁতভাবে তৈরি হচ্ছে। ছড়িয়ে পড়ছে সমগ্র দেশে। নি¤œবিত্ত থেকে শুরু করে ধনী শ্রেণী লোকজনও এ মাদুরের ক্রেতা। সাধারণত মাদুর দিয়ে নামাজ পড়া, মেঝেতে বিছিয়ে আরাম-আয়েশে খাবার খাওয়া, বিশ্রাম নেয়া, খাটে বিছানোসহ নানা কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। দুই হাজার সালের পর থেকে এ দেশে প্লাস্টিকের মাদুরের ব্যবহার বাড়তে থাকে। প্লাস্টিকের মাদুর সর্ব প্রথম ভিনদেশে ব্যবহার শুরু হয়। ধীরে ধীরে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ছে মাদুর তৈরির কারখানা। রাজধানীসহ আশপাশেও প্রতিদিন কারখানাগুলোতে হাজার হাজার পিস মাদুর তৈরি হচ্ছে। যা বিক্রেতারা ছড়িয়ে দিচ্ছে সমগ্র দেশে। এ মাদুরটি চাষ করা ‘পাতি’ দিয়ে তৈরি, না প্লাস্টিকের লাইন জাতীয় সুতা দিয়ে তৈরি, স্পর্শ না করলে বোঝা মুশকিল। হলুদ, লাল, নীল, বেগুনি, সবুজ ও গোলাপীসহ নানা রং দিয়ে তৈরি হচ্ছে এ মাদুর। শোভা পাচ্ছে নানা ধরনের ফুল, মসজিদ ও মিনারসহ নানা ধরনের ছাপ। নানা শিল্প ও কারুকাজেও ভরপুর থাকছে মাদুরে। মমিন আলী প্লাস্টিকের তৈরি মাদুর রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে জীবন ধারণ করছেন। শুধু তিনিই নন তার মতো অসংখ্য মাদুরে বিক্রেতা এ মাদুরের ছড়িয়ে দিচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। দিন দিন এ মাদুরের কদর সব বয়সী মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে উঠছে। মমিন আলী (৫২) চাঁদপুর জেলার সদর থানার মনোহরখালীর সাইজউদ্দিনের পুত্র। তিনি দীর্ঘ ৫ বছর ধরে প্লাস্টিকের মাদুর বিক্রি করে আসছেন। তিনি যাত্রাবাড়ীর কারখানা থেকে তৈরি মাদুর নিয়ে ছুটে পড়েন গ্রাম-গঞ্জে, হাট-বাজারে ও রাস্তাঘাটে। তিনি জানান, মাদুর তৈরির একটি কারখানার পুঁজি এক কোটি টাকা। মেশিন দিয়ে প্রতিদিন নিখুঁতভাবে হাজার হাজার পিস মাদুর তৈরি হচ্ছে। যা ছড়িয়ে পড়ছে সমগ্র দেশে। ইদানীং চাষ করা পাতি মাদুরের জায়গা দখল করে নিচ্ছে প্লাস্টিকের তৈরি মাদুর। দেখতে খুব সুন্দর। নানা ডিজাইন। বাহারি রং। প্লাস্টিকের তৈরি মাদুরগুলো শাড়ি কাপড় অথবা বিছানার ছাদরের মধ্যে অনেক সময় ভাঁজ করেও রাখা যায়। তিনি জানান, প্রতিদিন ঘুরে ঘুরে ১০-১৫টি মাদুর বিক্রি করতে পারেন। এতে তার প্রতিদিন এক হাজার টাকার মতো আয় হয়। এ আয় দিয়েই চলছে তার সংসার। তার মতে ৪ হাত বাই ৫ আয়তনের একটি ভাল ডিজাইনের মাদুর বিক্রি করা হয় ১০০০ টাকায়, আবার ৪ হাত বাই ৫ আয়তনের মাদুর ৫০০ টাকাও বিক্রি হয়। এ ছাড়াও ৩ হাত বাই ৫ হাত আয়তনের মাদুর ৩৫০ টাকায়, ৩ হাত বাই ৪ আয়তনের মাদুর ২২০ টাকায় বিক্রি হয়। নামাজের জন্য একটি মাদুর ১২০ টাকাও পাওয়া যায়। নামাজের মাদুরে বিভিন্ন মসজিদও মিনারের ছবি আকৃতি দেয়া হয়। বাসাবাড়ি ও অফিসে ব্যবহারের তৈরি মাদুরে বিভিন্ন ফুলসহ নানা বস্তুর ছবি দেয়া হয়। তবে গোলাপ, বেলি ও মটের ছবির আকৃতি মাদুর তৈরি হয় বেশি। ১০ ধরনের ডিজাইনে তৈরি হয় প্লাস্টিকের মাদুর। তবে এ মাদুর আগুন থেকে সাবধানে রাখতে হয়। লাইন জাতীয় প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হয় এ মাদুর। বিভিন্ন রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, শহর-বন্দর ও গ্রাম-গঞ্জে বিক্রি হয় মাদুর। তবে বিভিন্ন মেলাও এ মাদুর পাওয়া যায়। এ মাদুরকে প্লাস্টিকের শীতল মাদুরও বলা হয়। তিনি জানান, টাঙ্গাইল জেলায় এ মাদুরের বেশি চাহিদা। তবে সারা দেশেই দিন দিন এ মাদুরের চাহিদা বেড়েই চলেছে। প্লাস্টিকের মাদুর বিক্রেতা মমিন আলী এখন ঢাকার শনির আখড়া বসবাস করছেন। তিনি মাদুর বিক্রির আয় দিয়ে এখন পুরো সংসার চালাচ্ছেন। তিনি তিন মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়েই মাদুর বিক্রির করেই জীবন ধারণ করে সুখ-শান্তিইে আছেন। তিনি এ মাদুর বিক্রির পেশাই ডুবে থাকতে চান। মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে
×