ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মালয়েশিয়ায় আবার ধরপাকড় শুরু, আটক ১১৩ বাংলাদেশী

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২৮ জুলাই ২০১৭

মালয়েশিয়ায় আবার ধরপাকড় শুরু, আটক ১১৩ বাংলাদেশী

ফিরোজ মান্না ॥ আবার মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশ অবৈধ বিদেশী কর্মীদের ধরপাকড় চালিয়েছে। দুই সপ্তাহের বেশি সময় বিরতি দিয়ে নতুন করে বাংলাদেশের আরও ১১৩ কর্মীকে আটক করা হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে বাংলাদেশের মোট এক হাজার ৩৩৩ কর্মীকে আটক করা হলো। দেশটির কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ হাইকমিশনকে ১১৩ কর্মী আটকের বিষয়টি বুধবার নিশ্চিত করেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ হাইকমিশনের সঙ্গে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশনের বৈঠকের পর বলা হয়েছিল আর কোন কর্মী আটক না করার কথা জানানো হয়েছিল। পুলিশ হঠাৎ করেই বুধ ও বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের কয়েক শ’ কর্মীকে আটক করে। বাংলাদেশ হাইকমিশনের সঙ্গে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগের বৈঠকে সময় জানিয়ে দেয়া হয় কর্মীদের ই-কার্ড দেয়ার আর কোন সময় বাড়াবে না। তবে রি-হায়ারিংয়ে নিবন্ধন চলবে এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। বুধবার মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনকে এ কথা তথ্য জানিয়েছে। ওই চিঠিতে বাংলাদেশের অবৈধ এক হাজার ৩৩৩ জন কর্মীকে আটক করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের অল্প দিনের মধ্যে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। কর্মীদের ৪শ’ রিংগিত জরিমানা দিয়ে নিজ খরচে দেশে ফেরার সুযোগ দিয়েছে ইমিগ্রেশন বিভাগ। মালয়েশিয়ার বিষয়ে বিএমইটির জানিয়েছে, মালয়েশিয়া অবৈধ কর্মীদের বৈধতা দেয়ার জন্য এনফোর্সমেন্ট কার্ড (ই-কার্ড) সময় বাড়ানো চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। কর্তৃপক্ষ ই-কার্ডের জন্য আর কোন সুযোগ দেবে না। তবে আশার কথা হচ্ছে তারা রি-হায়ারিংয়ে নিবন্ধন কর্মসূচী বহাল রেখেছে। এই কর্মসূচী এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। রি-হায়ারিং কর্মসূচীর আওতায় এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ২ লাখ ৯৩ হাজার কর্মী নিবন্ধন করেছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও ৩ লাখের মতো কর্মী নিবন্ধিত হতে পারবেন। ই-কার্ডের বিষয়ে হাইকমিশনের পক্ষ থেকে দু’দফা বৈঠকের পরও মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, এ কর্মসূচীর আর সময় বাড়ানো হবে না। যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। এ বিষয়ে আর কোন আলোচনার সুযোগ তারা দেয়নি। এখন আমরা জোর দিয়েছি রি-হায়ারিং কর্মসূচীর ওপর। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক প্রচার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মালয়েশিয়ার মালিক পক্ষ এ কর্মসূচীতে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে। তারাও কোন অবৈধ কর্মী দিয়ে কাজ করাতে চান না। কারণ ইমিগ্রেশন বিভাগ অবৈধ কর্মী দিয়ে কাজ করানোর দায়ে ৫৯ জন মালিককেও আটক করা হয়েছে। দফায় দফায় সময় দেয়ার পরও বহু অবৈধ কর্মী ই-কার্ড নেয়নি। যারা ই-কার্ডের আওতায় আসেনি তাদের নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন প্রধান মুস্তাফার আলী বাংলাদেশের কর্মীদের বিষয়ে বলেন, খুব কম কর্মী ই-কার্ডের সুবিধা নিয়েছে। বাকি বেশিরভাগ কর্মীই ই-কার্ডের সুযোগ নেয়নি। এ অবস্থায় আরেক দফা সময় বাড়ানোর কোন কারণ নেই। আরও কয়েক দফা সময় বাড়ানো হলেও অবৈধরা অবৈধই থেকে যাবে। তাদের স্ব স্ব দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তবে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্র জানিয়েছে, ই-কার্ড কর্মসূচীতে নিবন্ধিতদের মধ্যে ৫৭ শতাংশই বাংলাদেশের। অন্য সোর্স কান্ট্রি থেকে বাংলাদেশের কর্মীরা বেশি সংখ্যক কর্মী ই-কার্ডের আওতায় এসেছে। কিছু কর্মী দালাল ও মালিকদের কারণে ই-কার্ড পাননি। তাদেরই পুলিশ আটক করছে। যারা রি-হায়ারিং কর্মসূচীতে নিবন্ধিতদের সংখ্যা ২ লাখ ৯৩ হাজার জন। যেহেতু বাংলাদেশীরা নিবন্ধনের সুযোগ নিচ্ছেন, তাই তাঁরা যেন ভয়ভীতি ছাড়াই এই কর্মসূচীর সুযোগ নিতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে মালয়েশিয়ার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে হাইকমিশন। হাইকমিশনের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানোর পর মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ মালিকদের প্রতি নির্দেশ জারি করেছে, যারা রি-হায়ারিং কর্মসূচীর সুযোগ নিতে চান তাদের যেন অনুমতিপত্র দেয়া হয়। এই অনুমতিপত্র হাতে থাকলে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করবে না। মালয়েশিয়ার অভিবাসন দফতরের মহাপরিচালক মুস্তাফার আলী রি-হায়ারিং কর্মসূচী বিষয়ে এ কথা জানান। ইমিগ্রেশন বিভাগের প্রধান মুস্তাফার আলী বাংলাদেশ হাইকমিশনের কূটনীতিকদের বলেন, অবৈধ বিদেশি কর্মী বিরোধী অভিযানে আড়াই সপ্তাহে প্রায় পাঁচ হাজার লোককে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এক হাজার ৩৩৩ জন বাংলাদেশের নাগরিক রয়েছে। ই-কার্ডে নিবন্ধিত অবৈধ বিদেশী কর্মীর ৫৭ শতাংশ বাংলাদেশের। এছাড়া রি-হায়ারিং কর্মসূচীতে নিবন্ধিত হয়েছেন ২ লাখ ৯৩ হাজার বাংলাদেশী কর্মী। ওই আলোচনায় মালয়েশিয়ায় ই-কার্ডে নিবন্ধনের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশীদের ধরপাকড় বন্ধ এবং বৈধ প্রক্রিয়ায় বিমানবন্দর দিয়ে যাওয়ার পর অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশী কর্মীদের বৈধতা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানায় বাংলাদেশ। এদিকে, জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) নেতৃবৃন্দ বলেন, মালয়েশিয়ায় যখন বৈধ পথে লোকজনের কাজের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। কিন্তু কিছু মানুষের জন্য বাজারটিতে নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ছাত্র ও ট্যুরিস্ট ভিসায় কর্মী পাঠানো, সাগর পথে হাজার কর্মী পাচার না হলে আজ মালয়েশিয়াতে এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হতো না। দেশটিতে কর্মীদের এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা খুবই দুঃখজনক। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের প্রতি অভিযোগ তুলে তারা বলেন, আজকের যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার জন্য বড় ভূমিকা পালন করতে পারত। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এমন কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। একইভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিও তারা অভিযোগ তুলেছে।
×