ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রথম সন্তান জন্মের স্মৃতিচারণ করলেন প্রধানমন্ত্রী

মা নাম রাখলেন সজীব

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৮ জুলাই ২০১৭

মা নাম রাখলেন সজীব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার গর্ভে প্রথম সন্তানের জন্মের স্মৃতিচারণ, পঁচাত্তরের নানা দুঃসহ স্মৃতির কথা উঠে এলো সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ধানমন্ডির একটি বাড়িতে বন্দী থাকাবস্থায় গর্ভে প্রথম সন্তানের জন্মের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ওকে পেয়ে আমরা বন্দীখানার মধ্যে সজীবতা পেয়েছিলাম। তাই মা নাম রেখেছিলেন সজীব। আর তার নানা (বঙ্গবন্ধু) রেখেছিলেন ‘জয়’। আর নিজের জন্মদিনে জয় পঁচাত্তরের দুঃসহ স্মৃতি তুলে ধরে বলেছেন, নানার হত্যাকা-ের পর পারিবারিকভাবে অনেক দুঃসময় গেছে। বৃহস্পতিবার ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিন। সকালে গণভবনে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভা এবং পুনর্মিলনীতেই ওঠে আসে জয়ের জন্মদিনের কথা। ১৯৯৪ সালের ২৭ জুলাই স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের এই দিনটিতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতি তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সজীব ওয়াজেদ জয়েরও জন্ম হয়। ছেলের জন্মদিনে তার জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, আজকের দিনটা জয়ের জন্মদিন। দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। জয়ের জন্য দোয়া করবেন। প্রথম সন্তান জন্মের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি তখন কয়েক মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ওই অবস্থায় বন্দী ছিলাম। জয়ের জন্মের সময় হাসপাতালে মাকে পাশে পাননি জানিয়ে আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার মাকে যেতে দেয়া হয়নি। আমার মাকে তার মেয়ের পাশে থাকতে দেয়নি। জয়ের নামকরণের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওকে পেয়ে আমরা বন্দীখানার মধ্যে সজীবতা পেয়েছিলাম। তাই মা নাম রেখেছিলেন সজীব। আর তার নানা (বঙ্গবন্ধু) রেখেছিলেন ‘জয়’। ২৩ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল। সেদিন আব্বা বলেছিলেন, আমি থাকব কিনা জানি না, দেখতে পারব কিনা জানি না। তোর ছেলে হবে। সে স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হবে। ছেলের নাম ‘জয়’ রাখবি।’ মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুতুল অটিস্টিক শিশুদের জন্য কাজ করে। ছোট বোন শেখ রেহানার পুত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ববি আমাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ও নীরবে থাকে। চোখের সামনে আসে না। ববি ইউএনডিপিতে কর্মরত রয়েছে।’ ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি ভাগ্নি টিউলিপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওখানে দুবছরের মধ্যে নির্বাচন হয়েছে। টিউলিপ ওর নির্বাচনী এলাকার জনগণের এত আস্থা অর্জন করেছে যে, এবার সে ১৬ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছে। আমাদের দুই বোনের সন্তানরা মানুষের মতো মানুষ হয়েছে।’ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মোহাম্মদ আবু কায়সারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ এমপি বক্তব্য রাখেন। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মকবুল হোসেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদিন নাসিম মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। এদিকে সিআরআই আয়োজিত ‘লেটস টক উইথ সজীব ওয়াজেদ জয়’ অনুষ্ঠানে তরুণদের প্রেরণা যোগাতে নানা কথা বলার পরে পঁচাত্তরের নানা স্মৃতির কথা ওঠে এলো সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্যে। নানার হত্যাকা-ের পর পারিবারিকভাবে অনেক দুঃসময় গেছে উল্লেখ করে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে আমাদের পরিবারকে বিদেশে থেকে যেতে হয়। এ সময় শুধু একটি ব্রিফকেস ভর্তি কাপড় এবং ২০০-৩০০ ডলার ছাড়া আমাদের কাছে আর কিছুই ছিল না। এমন অবস্থায় একদেশ থেকে অন্যদেশে ছুটে বেড়াতে হয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারকে। পারিবারিকভাবে এমন সব প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে থেকেও শেষ পর্যন্ত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক প্রশাসন বিষয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করেন সজীব ওয়াজেদ জয়। জয় বলছিলেন, কষ্টের সময়গুলো পার করে বর্তমান সজীব ওয়াজেদ জয় হয়ে ওঠা আত্মবিশ্বাসের ফসল। ১৯৭৫ সালের পরবর্তীতে সজীব ওয়াজেদ জয় তার বাবা ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া এবং মা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিদেশে থেকে যেতে বাধ্য হন। এ সময় তার বোন সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও ছিলেন তাদের সঙ্গে। মাত্র ২শ’ থেকে ৩শ’ ডলার হাতে নিয়ে সে সময় তার পরিবার জার্মানি থেকে লন্ডন হয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। সেখানেই নিজের কিশোর বয়স পার করেন সজীব ওয়াজেদ জয়। পরবর্তীতে স্নাতক পর্ব শেষ করেন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ‘দ্য ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস এ্যাট আর্লিংটন থেকে। তার বিষয় ছিল কম্পিউটার বিজ্ঞান। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পর্ব শেষ করার পর তিনি বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা। এরই মধ্যে বিশ্বের বুকে তিনি বাংলাদেশকে আরও পরিচিত করে তুলেছেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কারের মাধ্যমে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সজীব ওয়াজেদ জয় প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে অর্জন করেন ‘ইয়াং গ্লোবাল লিডার‘ এ্যাওয়ার্ড। আইসিটি খাতে বিশেষ দক্ষতার জন্য ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরাম তাকে এই এ্যাওয়ার্ড প্রদান করে। প্রতিবছর বিশ্বে ২৫০ জন তরুণ নেতৃত্বকে এই এ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়। যা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। এ ছাড়াও ২০১৬ সালে তিনি অর্জন করেন ‘আইসিটি ফর ডেভলপমেন্ট এ্যাওয়ার্ড’। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে দেশে আইসিটি খাতের উন্নয়ন এবং টেকসই উন্নয়নের নিমিত্তে আইসিটি খাতের সর্বোচ্চ ব্যবহারের স্বীকৃতিস্বরূপ ত্রিদেশীয় সংস্থা ‘প্লান ট্রিফিনি’ আন্তর্জাতিক এনজিও ‘গ্লোবাল ফ্যাশন ফর ডেভলপমেন্ট’ এবং নিউ হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্কুলের সঙ্গে একত্রে এই এ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের এক বছর পূর্তিতে এই এ্যাওয়ার্ড প্রদান করে ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অব গবর্নেন্স এ্যান্ড কম্পিটিটিভনেস।
×