ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মৃধা মোহাম্মাদ বেলাল

আধুনিক গৃহদাস প্রথা!

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ২৭ জুলাই ২০১৭

আধুনিক গৃহদাস প্রথা!

সাম্প্রতিক সময়ে নির্যাতন-নিপীড়নের অন্যতম উদাহরণ গৃহকর্মী কিংবা গৃহপরিচারিকা নির্যাতন। বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল আর দৈনিক পত্রিকাগুলো খুললেই দেখা যায় অহরহ গৃহকর্মী নির্যাতনের চিত্র। তাছাড়া বিত্ত আর প্রভাবশালীর দরজা টপকিয়ে কয়টা ঘটনাইবা গণমাধ্যম কিংবা জনসম্মুখে আসতে পারে! বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশই দারিদ্র্য প্রাচীরে আবদ্ধ। দরিদ্র পরিবারের বাবা-মা একটু ভাল থাকার আশায় মৌলিক চাহিদা বঞ্চিত নিজ সন্তানকে তুলে দেন শিক্ষিত-উচ্চবিত্ত কোন পরিবারে গৃহকর্মী হিসেবে। থেকে-খেয়ে সন্তানের প্রচুর পরিশ্রমের বিনিময়ে দরিদ্র পরিবারটি মাসান্তে এক-দুই হাজার টাকা হাতে পেলেই খুশি থাকে! কিন্তু আদৌ কি সেই খুশি তাদের মনে জায়গা করে নিতে পারে? সাধারণত শিশু-কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্ক নারীরাই গৃহকর্মী হিসেবে শহরের বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে কাজ করে থাকে। তন্মধ্যে ৭-১২ বছরের ছেলে-মেয়ে শিশুদের নির্যাতনের ঘটনা বেশি। দরিদ্রতার সুযোগে গৃহকর্তা-কর্ত্রী, এমনকি তাদের সন্তানদের দ্বারাও অসহায় গৃহকর্মীরা নির্যাতিত হয়ে থাকে। সামান্য ভুল-বিচ্যুতির অজুহাতে অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুদের উপর নেমে আসে অকথ্য বর্বরোচিত নির্যাতন। কিঞ্চিত সহানুভূতি না দেখিয়ে গায়ে গরম পানি ঢেলে দেওয়া, উত্তপ্ত খুন্তি-ইস্ত্রি দিয়ে চেপে ধরা, লাঠিপেটা করা এমনকি ছুরি-চাকু দিয়ে কচি শরীর রক্তাক্ত করতেও নরপিশাচদের বিবেকে বাঁধে না। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্যমতে, ২০১৬ সালে এদেশে গৃহকর্মী হত্যা হয়েছে ২২ জন; যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ ও বিয়ের প্রলোভনে অন্তঃসত্ত্বা আত্মহত্যা করেছে ৫ জন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) এর অনুসন্ধান মতে, বিগত সাত বছরে গৃহকর্মীদের উপর শারীরিক, মানসিক ও যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে ৬৪০ টি। এই অনুসন্ধানে আরও উঠে এসেছে বর্তমানে বাংলাদেশে এরকম গৃহকর্মীর সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। শুধুমাত্র ঢাকাতেই রয়েছে প্রায় দেড় লাখ গৃহকর্মী। অন্যদিকে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসেব মতে, গত দশ বছরে গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৭০ টি, নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করেছে ৫৬৫ জন, অথচ মামলা হয়েছে মাত্র ৫ শত। দিনে দিনে নির্যাতনের মাত্রা বেড়েই চলছে। অবাক বিষয়, গৃহকর্মী নির্যাতনের গৃহকর্তা-কর্ত্রী প্রায় প্রতিজনই শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত! ক্রিকেটার, সরকারী কর্মকর্তা, পুলিশ-প্রশাসন, চিকিৎসকসহ সকল পেশার মানুষের বাসা-বাড়িতেই ঘটে থাকে এমন অমানুষিক নির্যাতন। শিক্ষিত মানুষ দ্বারা যদি সুবিধাবঞ্চিত অসহায় মানুষ এমন বর্বরোচিত ঘটনায় দিনাতিপাত করে তবে মূল্যবোধ-মনুষ্যত্বের বিকাশ কোথায়? গণতান্ত্রিক আধুনিক যুগের এমন ঘটনা প্রাচীনযুগের দাসপ্রথাকেই মনে করিয়ে দেয়। গৃহকর্মী নির্যাতনের বিচার যদি বিশেষ ব্যবস্থাপনায় অল্প সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করা যায় তবে নির্যাতনের মাত্রা অনেকাংশে কমে যাবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যাল থেকে
×