ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খন্দকার মাহ্বুবুল আলম

চাই সমাজ সংস্কার

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ২৭ জুলাই ২০১৭

চাই সমাজ সংস্কার

‘মানুষ মানুষের জন্য/জীবন জীবনের জন্য/একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না’ গানটির এ পঙ্ক্তি দিয়েই গৃহকর্মী নির্যাতনের কথাটি বলতে হচ্ছে। ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ভূপেন হাজারিকার গানের এ বাক্যটি সুর আর কথার মধ্যে আটকে পড়ে আছে। বাস্তুবে এ কথার উপলব্ধী কোথায়? বাস্তবতা হচ্ছে গৃহকর্মী নির্যাতনের মতো ঘটনাগুলো আহরহ ঘটছে। গৃহকর্মী নির্যাতনের কথা বলতে গেলে আদুরীর কথা তো অবশ্যই বলতে হয়। মানুষের মন কত নির্মম এবং নিষ্ঠুর হলে গরিব-অসহায় গৃহকর্মী আদুরীরা নওরীন জাহান নদীর মতো মহিলাদের হাতে অমানুষিক এবং ভয়ঙ্কর নির্যাতনের শিকার হয়ে আবার ডাস্টবিনেও নিক্ষেপিত হয়ে থাকে। এসব গৃহকর্মী নির্যাতনের পেছনে গৃহকর্তার চেয়ে যেন গৃহকর্ত্রীরাই এগিয়ে। বিশেষত গৃহকর্ত্রী কর্তৃক এসব ঘটনা যেমন ঘটছে তেমনি সব গৃহকর্মী নির্যাতনের ধরনগুলোও যেন একইরকম। যেমন গৃহকর্মীর শরীরের বিভিন্ন অংশে গরম খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা দেয়া, সরাসরি আগুন দিয়ে পুড়ে দেয়া, শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে ক্ষত-বিক্ষত করা। গৃহকর্মী নির্যাতন এবং এর ধরন যেন সংক্রমিত একটি ব্যাপারের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি ঘটনায় অপরাধীর শাস্তি হওয়া সত্ত্বেও দেখা যায় একই ঘটনা অন্যখানে ঘটছে। এমনটি হওয়ার অন্তর্নিহিত রহস্য কি? হয়ত মনোবিজ্ঞানীরাই ভাল বুঝবেন। ‘গৃহকর্মী’ মানে ভিনগ্রহের কেউ নয়। ওরাও মানুষ এবং আমাদের মতোই। ওরা আমাদের উপকারে আসে। আমাদের ঘর-গৃহস্থালির নানা কাজ করে দেয়। ওরা গরিব বলে সামান্য ক’টাকা উপার্জন বা দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের আশায় অন্যের (সচ্ছল পরিবারে) ঘরে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে থাকে। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যমূলক এ সমাজব্যবস্থায় দারিদ্র্যের কষাঘাতে ওরা গৃহকর্মীর শ্রম দিতে গিয়ে আরেক নির্মমতার শিকার হয়। এমন পরিস্থিতির শিকার অধিকাংশই মেয়েশিশু। গৃহকর্মীদের প্রতি গা শিউরে ওঠার মতো নির্যাতন-নানা অকথ্য দুর্ব্যবহার প্রমাণ করে আমরা শিক্ষা ধনেমানে উন্নীত হলেও প্রকৃত মানবিক মানুষের পর্যায়ে এখনও উন্নীত হতে পারেনি। আমরা একই মানব জাত হয়েও মানুষে-মানুষে নানা শ্রেণী-ভেদের বৈষম্যমূলক দেয়াল তুলে রেখেছি। সেই দেয়ালের অভ্যন্তরে আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থপর বলয়ে বসবাস করতে গিয়েই এমন দশা। মূলত সাম্প্রদায়িক সমাজব্যবস্থার মনস্তাত্ত্বিক কারণ থেকেই সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রে এমন বৈষম্য, হিংসা-বিদ্ধেষ, দলন-পীড়ন, নির্যাতন নিপীড়ন ইত্যাদির জন্ম। এ জন্য নির্যাতকদের কঠিন ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি সামাজিক সংস্কারও দরকার। কারণ সামাজিক সংস্কৃতির পরিবর্তনে মানবিক মূল্যবোধের মানবিক সমাজ গঠিত না হলে এসব নির্যাতন নিপীড়ন বন্ধ হবে না। ভুলে গেলে চলবে না- কবির ভাষায় ‘সবার উপরে মানুষ সত্য।’ এ সত্যকে মননে মগজে ধারণপূর্বক সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে মানুষ মানুষের জন্য- জীবন জীবনের জন্য কখনও বাস্তব হয়ে দেখা দিবে না। আনন্দবাজার, চট্টগ্রাম থেকে
×