ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাস্তবে সবাই পাগল হয়ে যায়নি -স্বদেশ রায়

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ২৭ জুলাই ২০১৭

বাস্তবে সবাই পাগল হয়ে যায়নি -স্বদেশ রায়

ড. কামাল হোসেন নিজেই নিজেকে অনেক গুণে গুণান্বিত মনে করেন। যে কারণে তিনি তাঁর কল্পিত অনেক উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় বসে সকলকে ছোট দেখেন। তিনি নিজেই নিজের জন্য একটি লাইসেন্স তৈরি করে নিয়েছেন, ইচ্ছেমতো যে কাউকে অযোগ্য, অপদার্থ, বাস্টার্ড যা খুশি বলবেন। ২৩.০৭.১৭ বাংলাদেশ প্রতিদিনে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, ‘রায় নিয়ে সংসদে যেভাবে কথা বলা হয়েছে তা দুঃখজনক। এ নিয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে সংসদ সদস্যরা নিজে থেকেই প্রমাণ করেছেন, তারা কতটা অযোগ্য।’ নিজেকে অনেক যোগ্য মনে করলেও কি কেউ এইভাবে একটা সংসদের প্রবীণ সদস্যদের ‘অযোগ্য’ বলতে পারেন? সাধারণত ন্যূনতম সিভিক সেন্স যাদের আছে তাঁরা সরাসরি কাউকে অযোগ্য বলেন না। দেশের প্রবীণতম ও স্বাধীনতা সংগ্রামী রাজনীতিবিদের তো কেউই বলেনই না। অবশ্য ড. কামাল হোসেনের আগে একজন বিচারপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছিলেন, আমাদের সংসদ সদস্যরা সকলেই অজ্ঞ। ওই বিচারপতিকে ভালভাবে চেনেন এমন একজন প্রাজ্ঞ ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ওই উঁচু পদে বসে তিনি সব সংসদ সদস্যকে অজ্ঞ বললেন? এটা কেমন করে সম্ভব? তিনি উত্তরে বলেছিলেন, বাস্তবে তাঁকে একজন ভাল অঙ্কোলজিস্ট দেখানো উচিত। কারণ তাঁর ক্যান্সার যে পর্যায়ে এ অবস্থায় সাধারণত মস্তিষ্ক ঠিক থাকে না। এ উত্তর পাবার পর ব্রিটিশ রয়েল কলেজের ফেলো একজন মনোবিজ্ঞানীকে জিজ্ঞেস করি, বাস্তবে ক্যান্সারের রোগীদের এমন মস্তিষ্ক বিকৃতি হয় কিনা? তিনি উত্তরে বলেন, একটা পর্যায়ে গিয়ে ঘটে, তাছাড়া বিচার কাজের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও মানসিক চাপের কাজে জড়িত থাকলে এটা ঘটতে পারে। যে কারণে ব্রিটেনে বিচারক নিয়োগের আগে প্রার্থীদের সাইকোলজিস্টদের নিয়ে গঠিত একটি জুরি বোর্ডের সামনাসামনি হতে হয়। এবার সংসদ সদস্য যারা ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে সংসদে আলোচনা করেছেন তাদের অযোগ্য বললেন ড. কামাল হোসেন। ওই দিন সংসদে যারা আলোচনা করেন, তাদের ভেতর ছিলেন- তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, মঈনুদ্দিন খান বাদল, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু প্রমুখ। এদের কারোর বাংলাদেশের ইতিহাসে পরিচয় দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এরা সকলেই এ দেশের প্রতিষ্ঠাতা। তাই ড. কামাল হোসেন যখন তাদের অযোগ্য বলেছেন তার পরেও নতুন প্রজন্মকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য বলতে হয়, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের মহানায়ক তোফায়েল আহমেদ। বঙ্গবন্ধুকে জাতির পক্ষ থেকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেয়ার সৌভাগ্য তাঁরই হয়েছিল। আর ওই দিন বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, ‘আপনারা তোফায়েলের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থান করেছেন।’ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ যদি দীর্ঘায়িত হতো সে জন্য সর্বোচ্চ নিবেদিত ছাত্র তরুণদের নিয়ে যে মুজিব বাহিনী করা হয় সেই মুজিব বাহিনীর চারজন অধিনায়কের একজন তোফায়েল আহমেদ। মতিয়া চৌধুরী সম্পর্কে নতুন করে এ জাতির কাছে কী বলার আছে? বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে, বাংলাদেশ হাজার বছর ধরে বিশ্ব মানচিত্রে থাকবে। সেখানে অগ্নিকন্যা মতিয়া চৌধুরী বাংলাদেশে একজনই। তাঁর যোগ্যতার প্রমাণ তিনি ষাটের দশক থেকে দিয়ে আসছেন যা বাঙালীর ইতিহাসের অংশ। আর সততা ও সাহসের প্রমাণ তাও এ জাতির কাছে অজানা কিছু নয়। আজ যখন বিচারকের নামে মানিলন্ডারিংয়ের তদন্ত চলছে, মিডিয়ায় সিঙ্গাপুর-আমেরিকার কথা ওঠে সে সময়ে রাজনীতিবিদ মতিয়া চৌধুরীর সততা সারা পৃথিবীর জন্য একটি উদাহরণ। মঈনুদ্দিন খান বাদল, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন সকলেই ষাটের দশক থেকে এ দেশ সৃষ্টির জন্য যা অবদান রেখেছেন বাংলাদেশের ইতিহাস লিখতে গেলে তাদের কথা লিখতে হবে। তার বিপরীতে ড. কামাল হোসেনের জন্য ইতিহাসে কী লেখা থাকবে? বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে শেষ দেখা করে তাজউদ্দীন আহমদ যখন ২৫ মার্চ রাতে বের হয়ে যান সে সময়ে তাঁর সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম ও ড. কামাল হোসেন। তাজউদ্দীন আহমদ তাঁদের নিয়ে একটি গাড়িতে রওনা দেন। রায়ের বাজার গিয়ে কোন কিছু না বলে গাড়ি থামাতে বলে ড. কামাল নেমে যান গাড়ি থেকে। যা ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামের লেখায় বিস্তারিত আছে। ২৫ মার্চ ওই গাড়ি থেকে নেমে যাওয়ার পরে এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে ফোন করে তাঁর নিরাপত্তা চান ও পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যান। মিট্টা খানের বইয়ে বিস্তারিত আছে ড. কামালের এই পাকিস্তান যাওয়ার বিষয়। একাত্তরের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ড. কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে চরমপত্র পাঠ করেন এম আর আখতার মুকুল। কোন্ পর্যায়ে গেলে চরমপত্র পাঠ করতে হয়েছিল তা মনে হয় বলার প্রশ্ন ওঠে না। বঙ্গবন্ধুর উদারতায় তিনি দেশে ফিরতে পারেন, বঙ্গবন্ধু তাকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। তবে ১০ জানুয়ারি ওই মাঠে বঙ্গবন্ধু যখন তাঁর নাম বলেন তখন জনতার প্রতিক্রিয়া কী ছিল তা আজও অনেকে স্মরণ করেন। তাঁরা বলেন, মুহূর্তে যেন একটা শীতলতা নেমে আসে ওই জনসভায়। এর পরেও বঙ্গবন্ধু তাঁকে সম্মান দেন ঠিকইÑ তিনি কি তার মর্যাদা রেখেছিলেন? বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পরেÑ তিনি তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দেশের বাইরেÑ ওই সময়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন রেহানা ড. কামাল হোসেনকে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড নিন্দা করে একটি বিবৃতি দিতে বলেছিলেন মোশতাক সরকারের বিরুদ্ধে। তিনি কি দিয়েছিলেন? দেননি। বঙ্গবন্ধুর বাকশালের মন্ত্রিসভায় শপথ না নিয়ে কেন তিনি বিদেশে অবস্থান করছিলেন? কেন তাকে ধমক দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনতে হয় বঙ্গবন্ধুকে। ইতিহাসের এ সব অধ্যায় এ দেশের মানুষের অজানা নয়। তার পরেও আন্তর্জাতিক রাজনীতির মারপ্যাঁচের কারণে তরুণী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পরে তৎকালীন বাস্তবতায় ড. কামালকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী করেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ফেল করানো হবে এটা নির্ধারিত ছিল। তাই নির্বাচন-উত্তর জনসভাটি ছিলো গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন উত্তর পল্টনের ওই জনসভায় কেন তিনি বিনা নোটিসে অনুপস্থিত থাকলেন? এই সবই মনে হয় আসলে এ সমাজে যোগ্যতার মাপকাঠি। আর তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, মঈনুদ্দিন খান বাদল, যারা জীবন বাজি রেখে এই দেশ সৃষ্টি করেছেন, গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছেন তারা অযোগ্য। ড. কামাল হোসেনসহ অন্য অনেক পেশার কিছু লোকের ভেতর একটা বিষয় কাজ করতে দেখি, তাদের নামের আগে ড. বা অধ্যাপক বা বিচারপতি লেখা আছে বলে তারা এই রাজনীতিবিদদের সব সময়ে মূর্খ, অশিক্ষিত মনে করেন। এ জন্য তাদের হেয়ও করেন। একবারও ভেবে দেখেন না, তারা অসাধারণ বা নিজের থেকে মানুষকে বেশি ভালোবাসেন বলেই একটি সংগ্রামমুখর জীবন বেছে নিয়েছিলেন। দু-চারজন ব্যতিক্রম থাকেন। স্বার্থান্বেষী বা ভাগ্যান্বেষী থাকেন না তা নয়। এর বিপরীতে এরা সাধারণ বলেই শুধু নিজের ক্যারিয়ার গড়েছেন। দেশ সৃষ্টিতে তাদের অবদান কম। দেশের মানুষকেও কিছুই দেননি। অবশ্য ওই সাক্ষাতকারে ড. কামাল হোসেন নিজেকে সঠিক প্রমাণ করার জন্য সাতজনকে সঙ্গে নিয়েছেন। ড. কামাল সেটা করতে পারেন তবে বাংলাদেশের ইতিহাসে ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম ও ড. কামাল হোসেনকে এক পাল্লায় মাপা হবে না। ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতা সংগ্রামী। ড. কামালের একাত্তরের ভূমিকা তো এম আর আখতার মুকুলের চরম পত্রই বলে দিয়েছে। নতুন করে আর কী বলার আছে! ড. কামাল হোসেন এসব সংগ্রামী রাজনীতিবিদকে কতটা হেয় করেন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তার উদাহরণ উল্লেখ করছি। ৯১ সালে শেখ হাসিনা সে সময়ে সংসদে বিরোধী দলের নেতা। ২৯ মিন্টো রোডে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং হয় লনে। ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংয়ে সাংবাদিক প্রবেশের কোন উপায় থাকে না। ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও অন্যান্য কারণে তুখোড় সাংবাদিক হিসেবে ইত্তেফাকের শফিকুর রহমান ভাই ও ছোটখাটোর ভেতর আমি ওই মিটিং চলাকালে পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ করে নেই। আমাদের বের করে দেয়া হয় না। মিটিংয়ের মূল বিষয় ছিল মোস্তফা মহসিন মন্টুকে দল থেকে বহিষ্কার করা। কারণ মোস্তফা মহসিন মন্টুর সশস্ত্র ক্যাডাররা তার মাত্র কয়েকদিন আগে ছাত্রলীগের ওই সময়ের অন্যতম সৎ ও প্রতিশ্রুতিশীল নেতা মনিরুজ্জামান বাদলকে শেখ হাসিনার মিটিং চলাকালে হত্যা করেছে বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়। এই সময়ে একমাত্র ড. কামাল হোসেনই মোস্তফা মহসিন মন্টুর ওই সন্ত্রাসী কর্মকা-কে সমর্থন করেন। তাঁকে বহিষ্কার করা অগণতান্ত্রিক বলে এক তত্ত্ব খাড়া করে ড. কামাল হোসেন বক্তব্য রাখতে থাকেন। ড. কামাল হোসেন কিছু অপ্রাসঙ্গিক কথা বললে তাঁর জবাব দেবার জন্য দাঁড়ান আব্দুল জলিল। তিনি কথা বলা শুরু করতেই কামাল হোসেন সকল ভদ্রতা ছুড়ে ফেলে, চিৎকার করে বলেন- সাট আপ, সিট ডাউন। আব্দুল জলিল, খুব শান্ত মাথায় বলেন, বাংলায় বলুন। আপনি যে লন্ডনে পড়াশোনা করেছেন আমিও সেখানে পড়াশোনা করেছি। তাই ইংরেজী নয়, ওয়ার্র্কিং কমিটিতে শোভা পায় এমন কথা বাংলা ভাষায় বলুন। সেদিন আব্দুল জলিল ও মতিয়া চৌধুরীর বক্তব্যের পরে ওয়ার্কিং কমিটির কয়েক সদস্য ছাড়া বাদবাকির সিদ্ধান্তে বাদল হত্যা ও সন্ত্রাসী কর্মকা- করার দায়ে মোস্তফা মহসিন মন্টুকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এর কিছুদিন আগে থেকেই ড. কামাল হোসেন অবশ্য দলে যৌথ নেতৃত্ব, পর্যায়ক্রমে শীর্ষ পদে নেতৃত্ব বদলসহ বেশকিছু মুখরোচক দাবির কথা বলে আসছিলেন। বোঝা যাচ্ছিল তিনি আওয়ামী লীগ ভাঙবেন। শেষ পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগ ভাঙেন, গণফোরাম করেন। আর সেই বাদল হত্যায় অভিযুক্ত মোস্তফা মহসিন মন্টুকে পাশে বসিয়ে, তাঁকে দলের সেক্রেটারি বানিয়ে এখন তিনি সন্ত্রাস ও কালো টাকার বিরুদ্ধে কথা বলেন। ড. কামাল হোসেন ওই সাক্ষাতকারে ষোড়শ সংশোধনীর রায় সম্পর্কে বলেছেন, তিনিসহ সাতজন আইনজীবী ও সাতজন বিচারকের মত এক। অতএব তারা সবাই পাগল হয়ে যাননি। তাছাড়া তিনি এই সংবিধানের মা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে চেয়েছেন। বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর তৈরি এই সংবিধান ছুড়ে ফেলার ক্ষমতা তাঁর মেয়ের নেই। ...মায়ের থেকে মাসীর দরদ বেশি।’ এরপরে তিনি জিয়াউর রহমানের তৈরি সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে চেক এ্যান্ড ব্যালান্স বলেছেন। এটাও তাঁর রাজনৈতিক চরিত্রের মতোই তাঁর চরিত্রের আরেকটি দিক প্রকাশ করে। ২৫ মার্চের পূর্ব পর্যন্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। অথচ মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের বদলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছে নিরাপত্তা চান। আবার সব সময়ই গণতন্ত্রের কথা বলেন অথচ কাজের সময় বঙ্গবন্ধুর কাজ নয় জিয়াউর রহমানের কাজকে সমর্থন করেন। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বলেন, আবার মোস্তাফা মহসিন মন্টুকে পাশে বসান। কালো টাকার বিরুদ্ধে কথা বলেন আর কালো টাকা সাদা করাকে সমর্থন করেন। দলের ভেতর গণতন্ত্রের চর্চার দাবি জানিয়ে আওয়ামী লীগ ভেঙ্গে গণফোরাম করেছেন ১৯৯১ সালে। এর পর থেকে আওয়ামী লীগে নিয়মিত কাউন্সিল হয়েছে। তাঁর দলের কোন কাউন্সিলও হননি। তিনি সভাপতি পদে অন্য কাউকে বসাননি। সংসদীয় গণতন্ত্রের কথা বলেন, পছন্দ করেন সামরিক সরকারের কাজকে। যাহোক, তিনি সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কথা বলে শেখ হাসিনাকে সংবিধানের মাসী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর মেয়ে হিসেবে শেখ হাসিনা নাকি বঙ্গবন্ধুর তৈরি সংবিধান ছুড়ে ফেলে দিচ্ছেন। ড. কামাল অনেক বড় আইনজ্ঞ। তবে আমাদের মতো সাধারণ সাংবাদিক হিসেবে আমরা ষোড়শ সংশোধনী ও সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ভেতর যা পার্থক্য বুঝি তা তো এমনই। ষোড়শ সংশোধনী বহাল থাকলে কোন বিচারক কোন অপরাধ করলে তাকে ইমপিচ করতে হলে সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন লাগত। অর্থাৎ সেখানে প্রায় আড়াই শ’ প্রতিনিধিকে একমত হতে হতো। অন্যদিকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করলে কী হবে? রাষ্ট্রপতির নির্দেশক্রমে কয়েক বিচারপতিসহ অন্য কয়েক সদস্য নিয়ে একটি কাউন্সিল গঠিত হবে। তাঁরা কোন বিচারপতি অপরাধ করলে তার তদন্ত করবেন। ওই তদন্ত রিপোর্ট রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেবেন। সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতি অনুয়ায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেবেন। অর্থাৎ এখানে শেষ পর্যন্ত একক ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর। শেখ হাসিনা তাঁর নিজের এই একক ক্ষমতাটি দুই-তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্যর হাতে তুলে দিচ্ছিলেন বিচার বিভাগের স্বাধীনতার স্বার্থে। দেশের গণতন্ত্রকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার স্বার্থে। তাহলে কোন্টা গণতান্ত্রিক বেশি? ষোড়শ সংশোধনী না সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল? কে বেশি গণতন্ত্রী শেখ হাসিনা না ড. কামাল? এর পরে ড. কামাল হোসেনকে শুধু বলা যায়, তিনি বলেছেন, তিনি পাগল হয়ে যাননি। দেশবাসীও প্রার্থনা করুক তিনি সুস্থ থাকুন অন্তত যাতে বুঝতে পারেন দেশে সবাই পাগল হয়ে যায়নি। [email protected]
×