ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চীনের মাটিতে ভয়াবহ দূষণ

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ২৬ জুলাই ২০১৭

চীনের মাটিতে ভয়াবহ দূষণ

বিশ্বের সর্ববৃহৎ খাদ্য উৎপাদনকারী এবং ইস্পাত ও সিমেন্টের মতো ভারি শিল্প পণ্যের উৎপাদক দেশ চীন। কিন্তু দেশটির দূষণ কবলিত মাটিই চীনের জনস্বাস্থ্যের প্রতি সবচেয়ে বড় উপেক্ষিত হুমকি হিসেবে বিরাজ করছে। চীনের ধোঁয়াশার কুখ্যাতি সর্বজনবিদিত। এর বাতাসে দূষিত উপাদানের সমাবেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত সর্বোচ্চ নিরাপদ মাত্রার ১০ গুণ কি তারও বেশি। পানি দূষণ নিয়ে জনজীবনে অত হৈচৈ না হলেও তা এলিট শ্রেণীর নজরে পড়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাও একদা বলেছিলেন যে পানি সমস্যা চীনা জাতির অস্তিত্বের প্রতি হুমকি। তবে মাটির দূষণই হলো সবচেয়ে বড় দূষণ। বায়ু বা পানি দূষণ বহু চেষ্টা চরিত্র করে কয়েক বছর বা কয়েক দশকের মধ্যে কমিয়ে আনা যায়। কিন্তু মাটি দূষণ কমানো সম্ভব নয়। মাটিতে দূষিত বা ক্ষতিকর উপাদানগুলো শত শত বছর ধরে থেকে যায়। সেই দূষণ দূর করা এত ব্যয়সাপেক্ষ যে তা কল্পনা করাও যায় না। প্রচুর কৃষি জমি, ভারি শিল্প ও খনি আছে এমন অধিকাংশ দেশেই মাটির দূষণ ঘটে। ইউক্রেনের এই তিনটাই আছে। সেখানকার প্রায় ৮ শতাংশ মাটি দূষিত। অন্যদিকে চীনের এক জরিপে দেখা গেছে এর সমস্ত জমির ১৬.১ শতাংশ এবং কৃষি জমির ১৯.৪ শতাংশে ক্ষতিকর জৈব ও অজৈব উপাদান এবং সিসা, আর্সেনিক ও ক্যাডমিয়ামের মতো ধাতব উপাদান যুক্ত। পরিমাণের দিক দিয়ে চীনের প্রায় আড়াই লাখ বর্গকিলোমিটার মতো জমি অর্থাৎ মেক্সিকোর মোট আবাদী জমির সমপরিমাণ এলাকার মাটি দূষিত। দূষণযুক্ত ৪০ শতাংশ জমিতে ক্যাডমিয়াম ও আর্সেনিক পাওয়া গেছে। সরকারী ভাষ্যমতে চীনের ৩৫ হাজার বর্গকিলোমিটার কৃষি জমি এতই দূষিত যে সেখানে কোন কিছুই আবাদ করতে দেখা যায় না। পরিবেশবাদীদের আশঙ্কা জমি দূষণের যে চিত্র সরকারের তরফ থেকে দেয়া হচ্ছে প্রকৃত দূষণের চিত্রটা তার চেয়েও ভয়াবহ। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, চীন বিশ্বের এক-দশমাংশ আবাদী জমিতে খাদ্য উৎপাদন করে বিশ্ব জনগোষ্ঠীর এক-পঞ্চমাংশের মুখে অন্ন যোগায়। চীনে জমি দূষণ এত ব্যাপক হওয়ার তিনটি কারণ আছে। প্রথমত কয়েক দশক ধরে চীনের রাসায়নিক ও সার শিল্পগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বেশ দুর্বল ছিল। দীর্ঘদিন ধরে জমিতে জমিয়ে রাখা সেগুলোর বর্জ্য এখনও রয়ে গেছে। পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের নতুন আইনকানুন হলেও পরিস্থিতি বাগে আনার জন্য সেগুলো যথেষ্ট নয়। গত মে মাসে গ্রীন পিস নামে একটি পরিবেশবাদী সংস্থা জিয়াংশু প্রদেশের একটি পার্কের মাটি, পানি ও বায়ুর নমুনা পরীক্ষা করে ২২৬ রকমের রাসায়নিক উপাদানের অস্তিত্ব পেয়েছে। এর অধিকাংশই ক্ষতিকর। ১৬টি মানবদেহে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। তিনটি উপাদান তো বেআইনী। এর ওপর রাসায়নিক শিল্পে দুর্ঘটনা তো লেগেই আছে। ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে চীনে রাসায়নিক কারখানাগুলোতে অগ্নিকা-, বিস্ফোরণ ও রাসায়নিক চুইয়ে বেরিয়ে পড়ার মতো ২৩২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ দিনে প্রায় একটা করে ঘটেছে। এসব কারখানার এক-পঞ্চমাংশ চীনের সবচেয়ে উৎপাদনশীল কৃষি এলাকায় কিংবা সেচের কাজে ব্যবহৃত নদীর কাছে অবস্থিত বিধায় চুইয়ে বেরিয়ে পড়া রাসায়নিকের অনেকগুলোরই শেষ স্থান হয় ক্ষেতে খামারে। এ ছাড়া খনি দুর্ঘটনাও মাটি দূষণের জন্য কম দায়ী নয়। দ্বিতীয় বড় সমস্যা হলো চীনে পয়োনিষ্কাশনের পানি এবং শিল্পের বর্জ্য পানি সেচের কাজে উত্তরোত্তর ব্যবহৃত হয়ে জমিকে দূষিত করছে। এই অবস্থাটা বিশেষ করে উত্তর চীনে বেশি সেখানে মাথাপিছু প্রাপ্ত স্বাদু পানি সৌদি আরবের চেয়েও কম। চীনে বছরে ৬ হাজার কোটি টন নর্দমার পানি তৈরি হয়। এর বেশিরভাগই হৃদ ও নদীতে গিয়ে এবং সেখান থেকে ক্ষেতে চলে যায়। ফলে জমিতে ক্যাডমিয়াম আর্সেনিক ও অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিকের সমাবেশ বাড়ছে। সমীক্ষায় দেখা যায়, চীনের নদ-নদীর ১৮ শতাংশ দৈর্ঘ্যরে পানি এতই দূষিত যে তা কৃষি কাজে ব্যবহারের অনুপযোগী। তার পরও তা ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ওপর আছে অধিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার। এতেও জমির ব্যাপক দূষণ ঘটছে। ২০১২ সালের এক জরিপে ১৬টি প্রদেশে খাদ্যে ৬৫টি কীটনাশকের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এভাবে চীনে জমিতে দূষণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×