ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

* ৩০টি নতুন শাখা খোলা হচ্ছে * ৮.৫ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ * ৬টি নতুন প্রোডাক্ট চালু করা হয়েছে

ব্যাংকিং কার্যক্রমে আসতে চায় হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ২৬ জুলাই ২০১৭

ব্যাংকিং কার্যক্রমে আসতে চায় হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন

রহিম শেখ ॥ ব্যাংকিংয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (বিএইচবিএফসি)। গ্রাহকসেবার মান বৃদ্ধিকরণ, গ্রাহক হয়রানি দূর করা, ঋণ বিতরণ ও আদায় বৃৃদ্ধি, প্রতিষ্ঠানের পরিধি বাড়ানো এবং সরকারকে লভ্যাংশ প্রদান করার জন্য হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনকে ব্যাংকিং কার্যক্রমে নিয়ে আসা দরকার বলে মনে করছে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। সূত্রে জানা গেছে, আবাসিক বাড়ি নির্মাণ অর্থায়নের লক্ষ্যে ১৯৫২ সালে হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা হয়। যে উদ্দেশ্যে বিএইচবিএফসি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, তার তেমন বাস্তবায়ন হয়নি। বাড়েনি ঋণ সম্প্রসারণের কার্যক্রম, নতুন শাখা ও অটোমেশন। পাশাপাশি গ্রাহক হয়রানিও কমেনি। নিয়ে আসা হয়নি নতুন প্রোডাক্টও। কিন্তু বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ প্রতিষ্ঠানের হাল ধরার পর থেকে বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে এর সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি পরিবর্তনের কাজ শুরু করেন। পুরোদমে চলছে পরিবর্তনের কাজ। এ উদ্যোগ অব্যাহত থাকলে চলতি বছরের মধ্যেই নতুন রূপে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন। এ বিষয়ে বিএইচবিএফসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেবাশীষ চক্রবর্তী বলেন, আমি এখানে একটি মিশন নিয়ে কাজ করছি। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের শাখা বৃদ্ধিসহ নতুন প্রোডাক্ট চালু করেছি। তথ্যপ্রযুক্তিগত সেবা এবং গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশ-বিদেশে কাজ করা হচ্ছে, যাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে উদ্দেশ্যে আমাকে এ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব দিয়েছেন তা সফলভাবে করতে পারি। তিনি আরও বলেন, আমার এ পরিশ্রম সফল হবে, যদি এটিকে পূর্ণাঙ্গ গ্রাহকসেবা দেয়া য়ায়। গ্রাহকদের আধুনিক ও উন্নত সেবা নিশ্চিত করা এবং এটিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসতে ব্যাংকিংয়ের বিকল্প নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রপতির ৭নং আদেশবলে (পিও ৭/১৯৭৩) বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (বিএইচবিএফসি) নামে পুনর্গঠন হয়। বর্তমানে ১৪টি জেলা ও ১৫টি রিজিওনাল অফিসের মাধ্যমে সারাদেশে এ প্রতিষ্ঠানের ঋণ কার্যক্রম চালু রয়েছে। তবে গ্রামীণ এলাকায় আবাসন খাতে পৃথক ঋণ কার্যক্রম ছিল না বিধায় বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ প্রতিষ্ঠানকে বেগবান ও বর্তমান সরকারের রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নের জন্য নতুন কর্মসূচী হাতে নিয়েছেন। কর্মসূচীর মধ্যে নতুন ৬টি প্রোডাক্ট চালু কার হয়েছে। পল্লী অঞ্চলে আবাসন ঋণ কর্মসূচী প্রদানের জন্য চালু করা হয়েছে ‘পল্লীমা’। বাড়ি নির্মাণের জন্য নগরবন্ধু, প্রবাসী আবাসন ঋণ কর্মসূচীর আওতায় চালু করা হয়েছে প্রবাসবন্ধু, আবাসন উন্নয়ন ঋণ কর্মসূচীর জন্য চালু হয় আবাসন উন্নয়ন এবং আবাসন মেরামত ঋণ কর্মসূচীর জন্য রয়েছে আবাসন মেরামত প্রকল্প। মাঠপর্যায়ে এবং বিএইচবিএফসির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে নতুন রূপে সেজেছে বাংলাদেশ হাউস বিল্ডং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন। ভেতরে ও বাইরে এর পরিবর্তন এসেছে। আনা হয়েছে ঋণ বিতরণ ও আদায়ের লক্ষ্যে আধুনিক পদ্ধতি। সুদের হার ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮.৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) থেকে পাওয়া ৭৬৫ কোটি টাকা আবাসন খাতে বিনিয়োগ করা হবে। গ্রামীণ অঞ্চলে মানুষ যাতে খুব সহজে এবং কোন ধরনের হয়রানি ছাড়া ঋণ নিয়ে বাড়ি তৈরি করতে পারেন এজন্য বিশেষ প্রকল্প চালু করা হয়েছে। ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন (অধিক হারে মানুষদের) ব্যাংকিংয়ের আওতায় আনার লক্ষেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশের পাশাপাশি প্রবাসীদের জন্যও বিরাট সুযোগ করে দিয়েছে বিএইচবিএফসি। কোন প্রবাসী যদি তিন বছর দেশের বাইরে অবস্থান করেন তাহলে তাদের বাড়ি করার জন্য এক কোটি টাকা দেয়া হবে। এ উপলক্ষে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। এক্ষেত্রে সুদের হার ৮.৫ শতাংশ। এই প্রথমবারের মতো কৃষকদের জন্য আবাসন ঋণ চালু করা হয়েছে। গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য দেশব্যাপী চলতি বছরের মধ্যে ৩০টি নতুন শাখা খোলা হবে। অটোমেশনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে অন্য ব্যাংকনির্ভরতা কমানো হচ্ছে। ব্যবসা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। গ্রাহক হয়রানি রোধে কাজ চলছে। বিএইচবিএফসির সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে অন্য ব্যাংকিং নির্ভরশীলতা কমানো উচিত বলে এ প্রতিষ্ঠানের একাধিক কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন। তারা বলছেন, ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা আদায় করা হলে গ্রাহক হয়রানি বেড়ে যায়। আমানত বাড়ানো যায় না। সরকারের দেয়া আমানতের ওপর নির্ভর করতে হয়। এতে ব্যবসা বাড়ানো যায় না। সরকার কম রাজস্ব পায়। দীর্ঘস্থায়ী প্রকল্প চালু করা যায় না। তাই বিএইচবিএফসিকে ব্যাংকিংয়ে রূপান্তিরিত করা দরকার। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ভারতে এইচডিএফসি এবং থাইল্যান্ডে জিএইচবি রয়েছে। ওই আদলে বিএইচবিএফসিকে ব্যাংকিংয়ে নিয়ে আসা যায় বলেও বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন। আর এটি করা হলে সরকার অধিক হারে মুনাফা অর্জন করার পাশাপাশি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ মাথাগোঁজার ঠাঁই পাবেন।
×