ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আজ নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা

ঋণপ্রবাহ বাড়াতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৭:১৩, ২৬ জুলাই ২০১৭

ঋণপ্রবাহ বাড়াতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে আজ বুধবার নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় এবারও মুদ্রানীতিতে সতর্ক অবস্থা থাকলেও ঋণপ্রবাহ বর্তমানের তুলনায় কিছুটা বাড়াতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগের মতোই বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হবে। আবার নির্বাচনের আগে সরকারী খাতে ঋণ নেয়ার প্রয়োজনীয়তা বাড়বে। তবে এজন্য বেসরকারী খাত যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হবে। বেসরকারী খাতে এবারে ঋণ প্রবৃদ্ধি সামান্য বাড়িয়ে ১৭ শতাংশ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির আজ বুধবার বেলা ১১টায় এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন। জানা গেছে, প্রতি ৬ মাসের জন্য আগাম মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ লক্ষ্যে মুদ্রানীতির কৌশল প্রণয়নে চলতি জুলাই মাসের শুরু থেকেই বিশেষজ্ঞ, সাবেক গবর্নর এবং অর্থনীতিবিদদের মতামত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেখে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে কী পরিমাণ ঋণ জোগান ও মুদ্রা সরবরাহ করা হবে মুদ্রানীতিতে তার একটি ধারণা দেয়া হয়। গত কয়েকটি মুদ্রানীতিতে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার যে কর্মসূচী ঘোষণা করা হচ্ছে, প্রকৃত ঋণ ধারেকাছেও নেই। সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে সরকার ঋণ নেয়ার পরিবর্তে ১৮ হাজার ২৯ কোটি টাকা বেশি পরিশোধ করেছে। তবে নতুন অর্থবছরে ঋণের প্রয়োজন হবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও এজন্য বেসরকারী খাত বাধাগ্রস্ত হবে না বলে তাদের ধারণা। কেননা বর্তমানে ব্যাংকগুলোর কাছে বিপুল পরিমাণের উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে। এসব অর্থ বিনিয়োগে নিতে বেশিরভাগ ব্যাংক নানা কৌশল নিচ্ছে। বিশেষ করে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের বিপরীতে সরকারকে ঋণ দিতে ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছে। তবে বিপুল পরিমাণে সঞ্চয়পত্র বিক্রির ফলে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ চাহিদা অনেক কম। মুদ্রা সরবরাহের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংকগুলোতে বিপুল পরিমাণ উদ্বৃত্ত অর্থের ফলে সরকারী ও বেসরকারী উভয় খাতে চাহিদা অনুযায়ী ঋণ জোগান দেয়া সম্ভব হবে। আগের মুদ্রানীতিতে গত জুন নাগাদ মুদ্রা সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। অথচ মে পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। বেসরকারী খাতে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ ঋণ বৃদ্ধির প্রাক্কলনের বিপরীতে মে পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ১৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি সামান্য বেড়ে গত জুনে ৫ দশমিক ৯২ শতাংশে উঠেছে। বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশি বেড়েছে। চালের দাম বৃদ্ধি খাদ্য মূল্যস্ফীতির অন্যতম কারণ। তবে চাল আমদানিতে শুল্ক কমানোসহ বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে ইতিমধ্যে দাম নিম্নমুখী ধারায় এসেছে। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে চালসহ বেশিরভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকায় মূল্যস্ফীতিতে স্বস্তি থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। এরপরও মুদ্রা সরবরাহের প্রভাবে মূল্যস্ফীতিতে উর্ধগতি দেখা দিলে প্রয়োজনে বাজার থেকে কিছু অর্থ তুলে নিয়ে সুদহার বাড়ানোর মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হবে। মুদ্রানীতিতে সরকারের বাজেটে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার আলোকেই জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যকে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন প্রাক্কলন করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। গত অর্থবছরের বাজেটে ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হলেও চূড়ান্ত হিসাবে তা ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ হবে বলে সরকার আশা করছে।
×