ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপির তৃণমূল কমিটি পুনর্গঠনের নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৬ জুলাই ২০১৭

বিএনপির তৃণমূল কমিটি পুনর্গঠনের নির্দেশ

শরীফুল ইসলাম ॥ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সারাদেশের তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপির কমিটি পুনর্গঠন শেষ করতে কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় হাইকমান্ড। এ সময়ের মধ্যে কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শেষ করতে না পারলে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে ফিরে কেন্দ্র থেকে কমিটি চাপিয়ে দেবেন। এদিকে সারাদেশের তৃণমূলে কমিটি পুনর্গঠনের পাশাপাশি নতুন সদস্য সংগ্রহ ও পুরনো সদস্য নবায়ন চলছে। দলের ক’জন কেন্দ্রীয় নেতা এ কাজের তদারকি করছেন। সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ কাজ শেষ করে একটি সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করতে খালেদা জিয়া নির্দেশ দিয়ে গেছেন। এ রিপোর্টে কি কি কারণে কোন কোন এলাকার কমিটি পুনর্গঠন করা যায়নি সে তথ্যও সংযোজন করতে বলা হয়েছে। তিনি লন্ডন থেকে দেশে ফিরে কেন্দ্রীয় নেতাদের করা রিপোর্ট দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন। জানা যায়, বিএনপির ৭৭টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে এখনও ১২ জেলার কমিটি পুনর্গঠনের কাজ বাকি আছে। তবে বিভিন্ন জেলার অনেক উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন কমিটি পুনর্গঠন বাকি আছে। এর মধ্যে কিছু ইউনিট কমিটি পুনর্গঠন শীঘ্রই শেষ হওয়ার পথে থাকলেও বাদ বাকি ইউনিট কমিটি পুনর্গঠন সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হবে কি না এ নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। বার বার কেন্দ্র থেকে তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও এসব কমিটি পুনর্গঠন কাজ শেষ না হওয়ায় দলীয় হাইকমান্ড চরম ক্ষুব্ধ। বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারাদেশের সকল পর্যায়ের কমিটি গঠনের কাজ শেষ করে নির্বাচন ও আন্দোলনের প্রস্তুতি জোরদার করতে চায় তারা। এ জন্য বিভিন্ন কর্মকৌশলও হাতে নেয়া হয়েছে। কিন্তু তৃণমূল পর্যায়ের কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শেষ করতে না পারায় এ বিষয়ে বেশিদূর অগ্রসর হতে পারছে না তারা। কারণ, দল পুনর্গঠন শেষ না করে ওই কাজে গতি বাড়াতে গেলে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত বৃদ্ধি পেয়ে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর লন্ডন সফরে যান বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। ওই বছর ২১ নবেম্বর দেশে ফিরে সর্বস্তরে দল পুনর্গঠনের কাজে হাত দেন তিনি। তবে এ কাজে তেমন গতি আনতে পারেননি। গতবছর ১৯ জানুয়ারি জাতীয় কাউন্সিলের পরপরই বিএনপি হাইকমান্ড নতুন করে দ্রুত সারাদেশের জেলা-উপজেলাসহ সকল ইউনিট কমিটি গঠনের তাগিদ দেয়। তবে কিছু এলাকায় সম্মেলন করে কমিটি করা সম্ভব হলেও অধিকাংশ এলাকায়ই কমিটি পুনর্গঠন করতে গিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে নেতাকর্মীরা। এরপর একে একে কেন্দ্র থেকে কমিটি করে দেয়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে কেন্দ্র থেকে কমিটি করে দেয়া বন্ধ করা হয়। এর পর আবার নিজ নিজ এলাকায় সম্মেলন করে কমিটি গঠন শুরু হয়। তবে এক পর্যায়ে কমিটি গঠনের কাজ আবার থেমে যায়। সূত্রমতে, তৃণমূল পর্যায়ে দল গোছানোর কাজ শেষ করে বিএনপি প্রথমেই জনসম্পৃক্ত বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আন্দোলন শুরু করতে চায়। তারপর আস্তে আস্তে জনমত তৈরি করে সরকার বিরোধী আন্দোলন করার প্রস্তুতি নেবে। তবে আন্দোলন শুরুর আগে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ দলের সিনিয়র নেতারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে জনসভা করবেন। কোথায় কোথায় জনসভা করা যায় সে ব্যাপারে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের খোঁজখবর নিয়ে জানাতে বলা হয়েছে বলে জানা গেছে। খালেদা জিয়া দেশে ফেরার পরই জনসম্পৃক্ত এ কর্মসূচী শুরু করবে বিএনপি। এর আগে ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে ২০১৫ সালের ৯ আগস্ট কেন্দ্র থেকে চিঠি দিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিএনপির ৭৫ সাংগঠনিক জেলা ও প্রতিটি জেলার বিভিন্ন ইউনিট কমিটি পুনর্গঠন করতে বলা হয়। এর মাসখানেক পর ১৫ সেপ্টেম্বর লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করার আগে গুলশান কার্যালয়ে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। বৈঠককালে তিনি বার বার দলের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা সবাই মিলে তৃণমূল পর্যায়ে দল পুনর্গঠনের কাজে সহযোগিতা করবেন। তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শেষ হলেই বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল সম্পন্ন করা হবে। সিনিয়র নেতারাও তখন খালেদা জিয়াকে আশ্বস্ত করেছিলেন তিনি দেশে ফেরার আগেই ৭৫ সাংগঠনিক জেলা ও সংশ্লিষ্ট প্রতিটি ইউনিট কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শেষ করা হবে। ওইবার খালেদা জিয়া লন্ডন সফরে গিয়ে ছেলে তারেক রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ২ মাস অবস্থান করে ২০১৫ সালের ২১ নবেম্বর দেশে ফেরার পরও তৃণমূলে কমিটি করতে না পারায় বিএনপির সিনিয়র নেতারা তোপের মুখে পড়েন। দলীয় কোন্দলসহ বিভিন্ন কারণে অধিকাংশ জেলা-উপজেলায় কমিটি পুনর্গঠন করা সম্ভব হয়নি জানতে পেরে এক পর্যায়ে খালেদা জিয়া যেসব এলাকায় কমিটি পুনর্গঠন হয়নি সেসব এলাকা থেকে মনোনীত প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয় কাউন্সিলর করার সিদ্ধান্ত নেন। এ কারণে দল পুনর্গঠন কাজ স্থগিত রেখেই গতবছর ১৯ মার্চ বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল করা হয়। কাউন্সিলের পর আবার তৃণমূলে কমিটি গঠনের কাজ শুরু হলেও বর্তমানে আবার এর গতি কমে গেছে বলে জানা গেছে। প্রসঙ্গত, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা নেমে আসে। এ পরিস্থিতিতে ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে টানা ৯২ দিন অবরোধ ও দফায় দফায় হরতাল কর্মসূচী পালনের পর নাশকতার মামলায় জড়িয়ে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতারা বেকায়দায় পড়েন। এমন নাজুক পরিস্থিতিতে তৃণমূল পর্যায়ে দল পুনর্গঠন করতে খালেদা জিয়া জাতীয় কাউন্সিলের আগে কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে দেন। জাতীয় কাউন্সিলের পরও তৃণমূল নেতাদের কমিটি পুনর্গঠনের জন্য বার বার সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়। বিএনপির একটি বড় অংশ এবং দলের থিমট্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত বুদ্ধিজীবীবিরা চান যে কোনভাবেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হোক না কেন বিএনপি যেন সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। বিএনপির সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যেও এ নির্দেশনা পৌঁছে দেয়া হয়। ইতোমধ্যেই দলের নেতাকর্মীরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। বিশেষ করে এ নির্বাচনে যারা প্রার্থী হতে চান তারা আগেভাগেই নিজেদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন। আর বিএনপিকে এবার নির্বাচনে অংশ নেয়া ছাড়া কোন উপায়ও নেই। কারণ, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুসারে পর পর ২ বার নির্বাচন না করলে দলের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে।
×