ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মোবাইল কোর্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের হাতে রাখার দাবি ডিসিদের

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৬ জুলাই ২০১৭

মোবাইল কোর্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের হাতে রাখার দাবি ডিসিদের

তপন বিশ্বাস ॥ মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষমতা নির্বাহী ম্যাজিস্টেটের হাতে রাখাসহ প্রশাসনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছেন জেলা প্রশাসকগণ। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রশাসনকে দুর্নীতি মুক্ত করতে হবে। দুর্নীতি বন্ধ না করলে গ্রাম বাংলায় উন্নয়নের ছোঁয়া ঠিকমতো পৌঁছাবে না। মনে রাখবেন, জনগণের টাকায় আপনাদের বেতন হয়। তাদের সেবা দিতে হবে। জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, সামনে নির্বাচন। এর মধ্যে সকল উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করতে হবে। এতে আপনাদের ভূমিকা অপরিসীম। নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করুন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকুন। সরকার আপনাদের সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাবে। তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলনের প্রথম দিন মঙ্গলবার নিজ কার্যালয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী আপনারা উন্নয়ন কাজে জোরালো ভূমিকা রাখবেন। বাংলাদেশকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। এসডিজিতে সাফল্য দেখাতে হবে। কমাতে হবে ধনী-দরিদ্র বৈষম্য। ২০২১ সালে সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্যাপনের আগে বাংলাদেশকে উল্লেখযোগ্য স্থানে নিয়ে যেতে হবে। আপনারা হলেন সরকারের চালিকা শক্তি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আট বছরে জিডিপি বেড়েছে। এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছেন আপনারা। আপনাদের জন্য জিডিপি গ্রথ ধরে রাক্ষা সম্ভব হয়েছে। সরকারের প্রশংসা হলেও এর প্রকৃত প্রশংসা আপনাদেরই প্রাপ্য। তৃণমূল পর্যায়ে এখনও আর্থিক অসচ্ছলতা রয়েছে। এগুলো দূর করতে হবে। তাদেরও আয় বাড়াতে হবে। স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। যেখানে রাস্তা তৈরি হবে তার দুই পার্শ্বে জলাধার রাখতে হবে। গাছ লাগাতে হবে রাস্তার দুই পার্শ্বে। দারিদ্র্যবিমোচনে আরও কর্মসূচী গ্রহণ করতে হবে। নৌপথ, স্থলপথ, রেলপথ আরও উন্নত করতে হবে। জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি রাজনৈতিক সরকার নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ক্ষমতায় আসে। কিন্তু আমলাদের অনেক সময় ধরে সেবা দেয়ার সুযোগ থাকে। তিনি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন এবং জেলা প্রশাসকদের শুধু সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে নয়, দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে জনকল্যাণে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষমতা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের হাতে রাখার দাবি জানিয়েছেন জেলা প্রশাসকরা। তারা বলেন, মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষমতা তাদের হাতে না থাকলে দেশে ভেজাল খাদ্যের পরিমাণ বেড়ে যাবে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় রোকন-উদ-দৌলার দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে তারা বলেন, একটা সময় দেশে ইলিশ মাছের সঙ্কট দেখা দেয়। কিন্তু নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রোকন-উদ-দৌলাসহ কয়েক নির্বাহী কর্মকর্তা জাটকা নিধন বন্ধ মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি করেছিলেন। এর পর ভেজাল খাদ্য বিরোধী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা বেশ সাড়া জাগিয়ে ছিল। বিগত দুই বছরের কার্যক্রম সামনে এনে তারা বলেন, আগে মানুষ ফরমালিনের ভয়ে বাজার থেকে আম কিনে খেত না। এখন মানুষ ফরমালিন মুক্ত আমসহ বিভিন্ন ফল বাজার থেকে কিনে খাচ্ছে। এছাড়া নির্বাহী কর্মকর্তাদের মোবাই কোর্ট পরিচালনার ক্ষমতা না থাকলে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ সাধারণ মানুষও মানবেন না। এতে তাদের কিছু করারও থাকবে না। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক বলেছেন, শিশুশ্রম একটি লজ্জাজনক বিষয়। যে কোন উপায়ে ২০২১ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে সরকার বদ্ধপরিকর। মঙ্গলবার তিনি বাংলাদেশ সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে কি পরিমাণ শিশু নিয়োজিত রয়েছে তা নিরূপণে চারটি বিভাগীয় শহরে জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। শিশুশ্রম নিরসনে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং কিভাবে সফল হওয়া যায় এ বিষয়ে মতামত গ্রহণের জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসন, সাংবাদিক, এনজিও কর্মীদের অংশগ্রহণে কর্মশালা করা হয়েছে। শিশুশ্রম নিরসনে জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, শিশুশ্রম নিরসনে লালমনিরহাট জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার মোদাতি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিশুকে কাজ থেকে প্রত্যাহারের শর্তে তাদের বাবা-মাকে ভিজিএফ, ভিজিডি প্রদান করে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। আগামী এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের প্রথম ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম মুক্ত ইউনিয়ন ঘোষণা করার জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। সম্মেলনে ঢাকার জেলা প্রশাসকের এক মতামতের প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের সচিব মিকাইল শিপার বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে ৩৮ কাজকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে সাত শ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে শুধু ঢাকা নয় সারাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুদের প্রত্যাহার করে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেয়া হবে, তাদের লেখাপড়ার খরচ এবং তাদের বাবা-মাকে আয় বৃদ্ধিমূলক কাজে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় রাজস্ব আদায়ে জেলা প্রশাসকদের সহযোগিতা চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, দেশ পরিচালনায় বড় শক্তি হলো রাজস্ব। সকল উন্নয়নের মূল হলো এই রাজস্ব। এটি উন্নয়নের চাবিকাঠি। জেলা বাজেট নির্মাণে ডিসিদের সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে জেলা বাজেট নির্মাণ করবেন এবং তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করবেন। জেলা প্রশাসকরা দেশে সকল ট্রেজারি ভবন একই রকমভাবে করার দাবি জানালে মন্ত্রী বলেন, দেশের সকল ট্রেজারি ভবন একই রকম হওয়া উচিত। এ বিষয়ে তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলে তাদের আশ্বস্ত করেন। জেলা প্রশাসক সম্মলনের প্রথম দিন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
×