ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বরখাস্ত হচ্ছেন এ্যাটর্নি জেনারেল

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ২৬ জুলাই ২০১৭

বরখাস্ত হচ্ছেন এ্যাটর্নি জেনারেল

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশন্সকে বাদ দিয়ে তার পরিবর্তে কাকে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো যায় সে বিষয়ে তার উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট। সেশন্স সম্পর্কে ট্রাম্পের কাথাবার্তায় ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ ও হতাশা সম্প্রতি প্রকাশ পাওয়ায় হোয়াইট হাউস কর্মকর্তাসহ ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহচরদের মধ্যে এই ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে যে, সেশন্্সকে চাকরিচ্যুত করা এখন সময়ের বিষয় মাত্র। এ বিষয়ে ট্রাম্প তার ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে বসে সেশন্সের পরিবর্তে কাকে এই পদে বসানো যায়, কাকে নিয়োগ দিলে সিনেট কমিটিতে আপত্তি উত্থাপিত হবে নাÑ এ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। এ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালনের দিন যে, তার শেষ হয়ে এসেছে, তা সেশন্্স নিজেও বুঝে গেছেন। তাই গত সোমবার হোয়াইট হাউস কমপ্লেক্সে এক নিয়মিত বৈঠকে যোগ দিয়ে (নিয়ম অনুযায়ী) ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা না করেই তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন। অথচ আগে এ বিষয়টি কল্পনাই করা যেত না। ট্রাম্পের আস্থাভাজন ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের মধ্যে সেশন্সের নাম ছিল তালিকার শীর্ষ স্থানীয়দের মধ্যে একটি। নির্বাচনী প্রচারের দিনগুলোতে সেশন্সের ভূমিকা ট্রাম্পকে সেই বিজয়ী করার পেছনে যথেষ্ট অবদান রেখেছিল। এখন সেই ট্রাম্প তাকে প্রকাশ্যে সমালোচনা ও খোঁচা দিয়ে কথা বলতে ছাড়েন না। ট্রাম্প ও হোয়াইট হাউসের সঙ্গে সেশন্সের সম্পর্ক তখনই আলগা হয়ে যায়, যখন তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের তদন্ত থেকে নিজেকে দূরে রাখার ঘোষণা দেন। গত মার্চে তার গ্রহীত এই সিদ্ধান্তে ট্রাম্প বেশ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন এবং এ নিয়ে তিনি মাঝে মাঝেই তার কাছের মানুষের নিকট তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানান। এমন কি গত সপ্তাহে নিউ ইয়র্ক টাইমসের কাছে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ট্রাম্প বলেন, সেশন্স এ ধরনের কাজ করবেন জানলে তিনি তাকে এ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দিতেন না। সাবেক রিপাবলিকান স্পীকার নিউট গিংরিচ ও বলেছেন যে, ‘ট্রাম্প, জেফ সেশন্স সম্পর্কে আমার সঙ্গে আলোচনা করেছেনÑ তবে আমি তাকে বরখাস্ত করার বিষয়ে আমার প্রবল আপত্তি জানিয়েছি। তবে আমার বিশ্বাস যে সেশন্স, প্রেসিডেন্টের এসব সমালোচনা গায়ে না মাখলে সবকিছু আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে যাবে। হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের এক ঘনিষ্ঠ লোক বলেন, প্রেসিডেন্ট, সেশন্সকে সরানোর বিষয়ে মনস্থির করেছেন ঠিকই, কিন্তু তাকে সরালে রিপাবলিকানদের মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে, সে বিষয়টিও মাথায় রেখেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক তথ্য সূত্র থেকে জানা গেছে যে, ট্রাম্পের বর্তমান লক্ষ্য সেশন্সকে চাকরিচ্যুত করে তার মনোমত কাউকে এ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগ দেয়া। এ ছাড়াও ট্রাম্পের তৃতীয় আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিশেষ উপদেষ্ট রবার্ট মুলারকে বরখাস্ত করা। কারণ রবার্ট মূলার নির্বাচনে ট্রাম্পের রুশ সংশ্লিষ্টতা নিয়ে অনেক তথ্য জেনে গেছেন এবং যে কোন সময় তা প্রকাশ হয়ে পড়লে ট্রাম্পের রাজনৈতিক জীবন ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। কিন্তু সেশন্সকে বরখাস্ত করে তার স্থলে কাকে নিয়োগ দেয়া যায় এ নিয়ে তলে তলে খোঁজখবর চলছে। এক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য নাম তালিকায় উপর দিকে উঠে এসেছে। এদের মধ্যে টেক্সাসের রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ এবং নিউ ইয়র্কের সাবেক মেয়র রুডল্্ফ গিউলিয়ানির কথা জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু গিউলিয়ানি সম্ভাব্য এ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে তার নাম প্রকাশের খবর খারিজ করে দিয়ে সিএনএনকে জানান যে, জাস্টিস বিভাগের নিয়ম মেনে স্পর্শকাতর তদন্ত থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখে সেশন্স ঠিক কাজই করেছেন। সিনেটর টেড ক্রুজ সম্ভাব্য এ জি হিসেবে তার নাম প্রকাশকে ভিত্তিহীন খবর বলে অভিহিত করে বলেন, সেশনসের মতো এ্যাটর্নি জেনারেল পেয়ে আমরা সন্তষ্ট তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে দুই কোটি ৮০ লাখ টেক্সাসবাসীর স্বার্থ রক্ষার কাজে নিয়োতি থাকতেই বেশি পছন্দ করছি। এদিকে সেশনসে -এর হাবভাবে নিজে থেকে পদত্যাগের কোন ইচ্ছাই প্রকাশ পাচ্ছে না বরং গত শুক্রবার ফিলাডেলফিয়ায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের উদ্দেশ্য বক্তৃতাকালে তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্টের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য (অবৈধ অভিবাসী সমস্যা) বাস্তবায়নে আমি প্রতিদিন সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে সিনেটর জন করনিনসহ ক্যাপিটল হিলে সেশন্্সের বেশ কয়েকজন রিপাবলিকান সহকর্মী ট্রাম্পের সমালোচনার মুখেও জেফ সেশন্সকে এ জি পদে থাকার পক্ষে তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। সিনেটর করনিন বলেছেন, ‘সেশনস এ জি পদে বেশ ভালভাবেই কাজ করে যাচ্ছে।‘ তিনি প্রেসিডেন্টকে তার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে নেয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। তবে পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, দু’একদিনের মধ্যেই সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সেশনস অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটবে।
×